সকল শিশুই সম্পদ, সকল শিশুই শক্তি – ডা. জান্নাতুল ফেরদৌসী

ডা. জান্নাতুল ফেরদৌসী

ডা. জান্নাতুল ফেরদৌসী

পথশিশুদের পরিচয় পথশিশু নয়। পথশিশুরা যাতে পথ ছেড়ে ঘরমুখি হয় সেই প্রত্যয়ে আমাদের পথ চলা। পথ শিশুরাই ইদানিং কিছু সংগঠন, সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবীদের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার  হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসুন আমরা যারা সত্যিকারে পথশিশুদের পথের চিন্তা করি, তাদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে চিন্তিত এবং তাদের নিয়ে কাজ করতে চাই, তারা সবার আগে আমাদের স্বার্থটাকে ত্যাগ করে তাদেরকে পথশিশু নাম মুছে দিয়ে পরিচয় করিয়ে দেই সুশীল সমাজে মানবশিশু আর বিবেকসম্পন্ন মানুষ হিসাবে। ভবিষ্যতে পথশিশু এই নামটা যেন বাংলাদেশে বা বিশ্বে আর না থাকে। সকল শিশুরই যেন একটা পরিচয় থাকে। তারা মানুষ তাদেরও আছে অধিকার। তারা আমাদের শিশু। তারাই হবে দুর্জয় বাংলার গর্বিত মানুষ, ভবিষ্যৎ এর সুনাগরিক সুশাসক, সুশীল সমাজের কর্ণধর।

আমরা চাই তেমন পৃথিবী যেখানে থাকবে না কোন অভাব-অভিযোগ, অনুরাগ- অনুযোগ, থাকবে না কোন হাহাকার। যন্ত্রণা ছুঁতে পারবে না একটি শিশুকেও। মানুষের ভেতরে থাকবে না কোনো হায়েনার বসবাস। মানুষ খাবে না মানুষের রক্ত। মানুষের মাঝে থাকবে না কোনো পশু প্রবৃত্তি। ধর্ষিতা হবে না কোনো পাঁচ বছরের কন্যা শিশু। নির্যাতিত হবে না, লাঞ্ছিত হবে না, নিগৃহিত হবে না কোন মা-বোন । এমন পৃথিবীই আমাদের স্বপ্ন। এমন পৃথিবীই আমাদের কাম্য। যেখানে একটি শিশুও পথে বসবাস করবে না। প্রয়োজনে অনাথ অসহায় কিংবা দুঃস্থ শিশুদের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তৈরি হতে হবে সুসম বন্টনের জন্য।  সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রই হবে শিশুর পরিচয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বড় হবে সেইসব শিশুরা। তাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসবে বিশ্বসেরা নেতা কর্মী। তাদের জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি আর উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমেই সৃষ্টি হবে শ্রেষ্ঠ ও বিবেকবান মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। পথশিশু বলে থাকবে না কোনো অপবাদ।” “শিশুরাই সম্পদ, শিশুরাই শক্তি”। তাই তো কবির ভাষায় : বলতে হয়, শিশুর পিতা ঘুমিয়ে আছে সব শিশুরই অন্তরে”। কবির ভেতরে এমনিতেই সৃষ্টি হয়নি এই আবেগ। কবি চিন্তা করেছিলেন যে আজকের শিশুই আগামী দিনের স্বপ্নের সুনাগরিক, আদর্শ পিতা। সত্যের কান্ডারি। তাই তো আমাদের প্রত্যেকের উচিত সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতো পৃথিবী থেকে সমস্ত জঞ্জাল পরিষ্কার করা। আমরা যতক্ষণ বেঁচে আছি প্রাণপণে চেষ্টা করবো পৃথিবী থেকে সমস্ত প্রকার জঞ্জাল পরিষ্কার করে অনাগত ভবিষ্যতের জন্য সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে। আমাদের স্বপ্ন  প্রত্যেক শিশুই যেন মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার সম্মান পায়। স্বার্থান্বেষী মানুষের স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকুক শিশুদের সম্মান, শিশুদের স্থান। আর সেই জন্যই আসুন আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাই। বদলাই আমাদের মনোবৃত্তি ও মানবিকতা।

পরিবর্তনের জোয়ার বইছে সর্বদিকে। সেই জোয়ারের সূত্র ধরেই পরিবর্তন চাই পথ শিশুদের। পরিবর্তন চাই মানুষের। পেতে চাই সমউন্নত মানুষ, সোনালি সূর্যের দুর্জয় বাংলাদেশে। আর নয় পথশিশু আর নয় কান্না আর নয় অনাকাক্সিক্ষত সব ঘটনা-দুর্ঘটনা। চাই সব অকল্যাণের অবসান। সগৌরবে মাথা উঁচু করে বুক ভরে বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণের অধিকার চাই। সবার জন্য চাই শান্তির পৃথিবী, স্বস্তির আবাসন।