সুইমিংপুলে সাঁতার/রানা জামান
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও হুমায়ূন আহমেদ মুখোমুখি পানিতে বসে আছে। একটা বড় গামলায়। বহু খুঁজেও সুইমিং পুল পাওয়া যায় নি। সুইমিংপুল তৈরি করারও ব্যবস্থা নেই এখানে। এতো টাকা-পয়সা সব রেখে আসতে হয়েছে ইহকালে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একবার হুমায়ূন আহমেদের গায়ে পানি ছিটিয়ে দিলেন। সাথে সাথে হুমায়ূন আহমেদও সুনীলের গায়ে ছিটালেন এক পশলা পানি। মাঝে মাঝে এমন খেলা খেলছেন দু’জন। আর গল্প করছেন মর্ত্যলোকের জীবন নিয়ে।
সুনীল: হুমায়ূন, তোমার নুহাশ পল্লীর সুইমিংপুলে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, এখানে তা পাচ্ছি না।
হুমায়ূন: পাবে কিভাবে! আমরা তো বসে আছি একটা গামলার মধ্যে। নিজকে শিশু শিশু লাগছে। কী একটা অবস্থা!
সুনীল: একটা আফসোস নিয়ে চলে আসতে হলো।
হুমায়ূন: কী আফসোস সুনীল দা?
সুনীল: তোমার সেইন্ট মার্টিনের বাংলোটায় থাকা হলো না। কী জানি নাম বাংলোটার?
হুমায়ূন: সমুদ্র বিলাস।
সুনীল: হ্যাঁ হ্যাঁ, সমুদ্র বিলাস। তোমার বিলাস শব্দটার প্রতি বেশ দুর্বলতা আছে।
হুমায়ূন: ঠিক দু্র্বলতা না; তবে বৃষ্টি বিলাস নামে আমার একটা উপন্যাস আছে। বিলাস নামে বিখ্যাত হয়ে আছে মহানায়ক উত্তম কুমারের ভ্রান্তিবিলাস। দম ফাটানো হাসির ছবি। আমার অমন একটা সিনেমা বানানোর ইচ্ছে ছিলো। মরার ক্যান্সার বেশিদিন বাঁচতে দিলো না।
সুনীল: ইতিহাস বলে, বিখ্যাত লোকগুলো যুগে যুগে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
হুমায়ূন: যেমন?
সুনীল: যেমন-সুকান্ত যক্ষায়, নজরুল পিক্স ডিজিজে আর তুমি ক্যান্সারে। আরো বলবো?
হুমায়ূন: না থাক। বিষণ্ন সংবাদ বেশি শুনতে নেই। আপনি লেখক হয়ে একটা পদ পেয়েছিলেন।
সুনীল: কোলকাতা শহরের শেরিফ?
হুমায়ূন: হ্যাঁ।
সুনীল: ওটা কেমনে য্যানো হয়ে গেলো।
হুমায়ূন: আপনি কবি ও ঔপন্যাসিক হিসেবে সফল। আমি শুধু ঔপন্যাসিক।
সুনীল: তুমি চলে এলেও তোমার উপন্যাস মারমার কাট কাট। কিন্তু তোমার প্রকাশকরা তোমাকে ডুবাবে।
হুমায়ূন: হঠাৎ একথা বললে কেনো সুনীল দা?
সুনীল: দারুচিনি দ্বীপ। একটা উপন্যাস তোমার। কী চমৎকার নাম। এই নামেই সিনেমা করেছো। অথচ পাঠককে বিভ্রান্ত করার জন্য তোমার এক প্রকাশক ২০১৭ খৃস্টাব্দের বাংলা আকাদেমি বইমেলায় দ্বীপ নাম দিয়ে প্রকাশ করেছে। ২০১৮ খৃস্টাব্দের বইমেলায়ও….
হুমায়ূন: নেতিবাচক কথা শুনে মনটা খারাপ করতে চাই না সুনীল দা। তার চে’ আসো এই গামলাটাকে নুহাশ পল্লীর সুইমিংপুল ভেবে সময়টা আনন্দে কাটাই।
Facebook Comments Sync