টরেন্টোর বেগমপাড়া / কাজী মুজাহিদুর রহমান

টরেন্টোর বেগমপাড়া

টরেন্টোর বেগমপাড়া

টরেন্টোর বেগমপাড়া / কাজী মুজাহিদুর রহমান

 

মাইনে যা দেখা থা ওয়ো সব খোয়াব থা 

আওর যা সুনা থা ওয়ো সব আফসানা  থা

 

আজকের গল্প সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা। শুধু চরিত্রদের আসল নাম বদলে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে। স্ত্রী ও এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে বাবুল চৌধুরীর ছোট পরিবার। সাভারে তার দুটি গার্মেন্টস কারখানা। কিন্তু অদক্ষ ব্যবস্থাপনায়  কোনটিই ঠিকমত চলে না। তার ওপরে কমপ্লায়েন্সের শর্ত পূরণে তাঁর অনীহার কারণে বায়ারদের কাছ থেকে অর্ডারও ঠিকমত মেলে না।  যখন তিনি এগুলি স্থাপন করেছিলেন, তখন প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশী টাকা লোন নিয়ে সবার আগে পাঁজেরো গাড়ি, গুলশানে ডুপলেক্স ফ্লাট কেনেন। লাখ লাখ টাকা দিয়ে কেনেন দুই-তিনটা অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ। মাসে এক একটা ক্লাবের বিল আসে কম বেশি লাখ টাকার মতো। উপরন্তু প্রতি রাতে জুয়ার আসরে হার-জিততো আছেই। এসব করতে যেয়ে ব্যাংকের টাকা কখনও সময়মত ফেরৎ দিতে পারেননি। ফলে একটা সময় এসে তার লোন ক্লাসিফাইড হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সি আই বি রিপোর্টে তার নাম ওঠে। ফলে নতুন করে ব্যাংক লোন তার কপালে জোটে না। ফ্যাক্টরী দুটি হয়ে পড়ে সিক। 

এমন সময় দেশে একটা নতুন ট্রেন্ড চালু হয়, তা’হলো ব্যাংকের টাকা নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে নিরাপদে বিদেশে পাচার করা।  সেই সাথে ঐদেশে যেয়ে ইনভেষ্টমেন্ট ভিসার সুযোগ ব্যবহার করে, দ্রুত সেদেশের পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যবস্থা করে, সেখানে নিরাপদে থেকে যাওয়া। ঢাকা শহরে বাবুল চৌধুরী কোন রাস্তায় গেলে এই মঞ্জিলের দেখা পাবেন, তার খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। এক দিন পেয়েও যান। সেটা ছিল এদেশের একটা ব্যাংক। ইতিমধ্যে বাবুল সাহেব পরিবারসহ এক বার কানাডার বিভিন্ন প্রদেশ ও শহর ঘুরে এসেছেন। তিনি একটা এ্যাসেসমেন্ট করে ফেলেছেন সেখানকার কোন শহরের কোন এরিয়ায় থাকবেন, পছন্দের জায়গায় একটা সুইমিংপুলের সাথে চারটি গাড়ির পার্কিংসহ তিনতলা বাড়ির দাম কত হবে, তার অফিস কোন এরিয়ায় হবে, কেমন দাম হবে, কোন ব্রান্ডের কয়টা গাড়ি কিনবেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় কত মিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করবেন। তার কত টাকার দরকার তা তিনি এই সফরে চূড়ান্ত করে ফেলেন। ঢাকায় এসে দ্রুত সাক্ষাৎ করেন ব্যাংকের বড় ভাইয়ের সাথে। যিনি ব্যাংকের মালিক না হয়েও রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে আসীন। তিনি তার চেয়ারে বসে একা একাই তথাকথিত লোন কমিটির মিটিং করেন এবং ব্যাংকের টাকা নয়-ছয় করেন। তাকে বাবুল চৌধুরী জানান তাঁর ৩০০ কোটি টাকা দরকার। তখন বড় ভাই বলেন, ৩০০ কোটি টাকা নিতে হলে ৪৫০ কোটি টাকার প্রজেক্ট প্রফাইল দরকার। কেননা তাঁর এই তেলেসমাতি কাজের নিয়ম হলো মোট টাকা তিন ভাগ হবে, এক ভাগ ব্যাংকের অর্থাৎ তিনি রাখবেন, আর দুই ভাগ কাস্টমারকে দেবেন। কাগজপত্র তৈরীর টেকনিকগুলো তিনিই বলে দেবেন অথবা একটা লোক দিয়ে দেবেন। ১৫ দিনের মধ্যে কাগজপত্র দিতে পারলে পরবর্তি ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে টাকা পাবেন। তবে তাঁর তিন ভাগের এক ভাগ টাকা তিনি প্রথমে তুলে নেবেন। সেজন্য সই করা চেক আগেই তাঁর কাছে জমা দিতে হবে।

সেদিন বাবুল সাহেব খুব খুশি হয়ে ব্যাংক থেকে বাসায় ফিরলেন। পরদিন সকালেই বসলেন কাগজপত্র তৈরি করার জন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যানের রেফার করা লোকের সাথে। প্রফাইল তৈরি করার জন্য যা যা কাগজপত্র দরকার সবটাই সে দুই নম্বরি অর্থাৎ ভুয়ো করে দেবে। শুধু চার্জটা একটু বেশি পড়বে। তখন বাবুল সাহেবের সামনে ৩০০ কোটি টাকার অফার। অতএব বড় কিছু পেতে হলে, তুচ্ছ এই ত্যাগ করতেই হবে। তার চাহিদা মতো টাকা দিতে রাজী হলেন। আর কোম্পানির চেয়ারম্যান, এম ডি এবং ডিরেক্টর পদের তিন জন লোক দরকার যারা কিছু টাকার বিনিময়ে কাগজপত্রে সই করবে। বাবুল সাহেব চূড়ান্ত করলেন, তার বাড়ির কেয়ারটেকার বাবর আলী হবে চেয়ারম্যান, তার পিয়ন মোকসেদ হবে এম ডি, আর এক সময়ের কাজের ছেলে বর্তমানে বাসায় বাবুর্চীর কাজ করে বিল্লাল হবে ডিরেক্টর। এই তিন জন উপযুক্ত লোক। এরা অভাবী, ছেলে-মেয়ের সংখ্যা অনেক। এক সাথে এরা  কখনো লাখ টাকা চোখে দেখেনি। এদের দ্বারাই এই কাজটি করে নেওয়া সম্ভব। এই তিনজনকে ডেকে তখনি ফটো তুলতে পাঠালেন। সবাইকে বললেন জাতীয় পরিচয়পত্র তার কাছে জমা দিতে। এদেরকে ব্যবহার করার উদ্দেশ্য এই যে লোনের টাকা নিজে নিলেও তিনি কোন দৃশ্যপটে থাকবেন না। ভবিষ্যতে কাগজপত্রে ধরা পড়বে এরা তিন জন। ব্যাংক মামলা করলে আসামী হবে এই তিনজন।

ব্যাংকের দালালের সাথে আরো কথা হলো জমির দলিল থেকে শুরু করে ডিসিআর, দাখিলা, মেশিনারি পি আই সকল কাগজপত্র হবে ভুয়ো। তিনটা কারখানার কম-বেশী দেড়শ কোটি টাকা করে সাড়ে চারশ কোটি টাকার লোন প্রপোজাল তৈরি করে দেবেন। এজন্য তখনি তাকে দশ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হবে। তিনি আরও আশ্বস্ত করলেন যে ব্যাংকের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে বোর্ডের মেম্বার পর্যন্ত সবাই জানবে এগুলো সব ভুয়ো কাগজপত্র, কিন্তু কেউ মুখ খুলবে না এবং অনুমোদন করে দেবে। এর আগেও চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশে তিনি কয়েক জনের একই কাজ করে দিয়েছেন। তিনটা কোম্পানির নাম এবং কে হবে চেয়ারম্যান, কে হবে এম ডি এবং কে ডিরেক্টর তা এখনি চুড়ান্ত করে তাকে দিতে হবে। তিনি দুই তিন দিনের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানির আর্টিকেল ও মেমোরেন্ডাম ভুয়ো সীল-ছাপ্পড় মেরে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবেন। তারপর ঐ ব্যাংকের যে শাখার ম্যানেজারের সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো, সেখানে তিন কোম্পানির নামে তিনটি কারেন্ট একাউন্ট ওপেন করে নেবেন। সাথে সাথে দেবেন চেক বইয়ের রিকুইজিশন। 

বহু দিন পরে বাবুল চৌধূরীর মনে হলো যে এভারেষ্ট শৃঙ্গে ওঠার জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন, এতদিনে তার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।  তিনি যেন বেস ক্যাম্পে পৌঁছে গেছেন। এখন শুধু শিখরে ওঠার পালা। মনটা তাঁর খুশিতে ভরে গেছে। চিৎকার করে গান গাইতে মন চাইছে- এ দিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হলো কার। স্ত্রী রিফাত চৌধূরীকে ডেকে বললেন, আজকে দুপুরে বাসায় কিছু রান্না না করতে। তিনি ক্লাবে অর্ডার করলেন লাঞ্চের। দুপুরের খাবার সেরে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমালেন। এরপর হাত মুখ ধুুয়ে চা খেয়ে ক্লাবে গেলেন। ড্রিংকস হাতে নিয়ে বসলেন এক কোনার টেবিলে, যাতে পরিচিতরা কেউ এসে ডিসটার্ব না করে। তিনি পুরো প্লানটার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রিভিউ করবেন, কোথাও কোন ফাঁক রয়ে গেল কি না। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আগামীকাল স্ত্রীকে নিয়ে পিংক সিটিতে যাবেন। দামী একটা গহনার সেট কিনবেন তার জন্য, যাতে তার মনে খুশীর প্লাবন বয়ে যায়। তারপর কানাডায় মাইগ্রেশনের বিষয়টা তাকে জানাবেন। ফ্লাইটের চার-পাঁচ দিন আগে ব্যাংকের লকার থেকে সব গহনা তুলে নিয়ে আসবেন। এখন বাকি থাকলো গাড়ি তিনটা। এগুলি এখনই সেল করে দিলে সবার সন্দেহ বাড়বে, তাই চলে যাওয়ার পর কারো মাধ্যমে সেল করে দিতে পারবেন। তার জন্য বিআরটিএ অফিস থেকে নিজেই মালিকানা পরিবর্তনের তিন সেট কাগজপত্র সংগ্রহ করলেন।  পরে কারো মাধ্যমে বিক্রি করে এগুলি সই করে দিলেই হবে। কিন্তু গুলশানের ফ্লাটেরতো কিছু করা যাবে না। এটা আগে থেকেই ব্যাংকে মর্টগেজ দেওয়া আছে।

পরদিন প্লান অনুযায়ী এক এক করে সব কাজ করলেন। দুপুরের পর স্ত্রীকে জানালেন কানাডায় মাইগ্রেশনের বিষয়। আরো বললেন কানাডায় দুটো বাড়িই স্ত্রীর নামে কিনবেন। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মেয়ে ওখানকার ইউনিভার্সিটিতে আর ছেলে কলেজে এডমিশন নেবে। চার জনের জন্য সেখানে চারটা গাড়ি কিনবেন। তবে পুরো যাওয়ার বিষয়টা অত্যন্ত গোপন একটা পরিকল্পনার  অংশ। এই মুহূর্তে আত্মীয় স্বজন, ছেলে মেয়ে কিংবা বাড়ির কোন স্টাফ যেন না জানে। ব্যাংকের রেফার করা ব্যক্তির সাথে প্রায় প্রতিদিনই তার কথা হয়। কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়ার বিষয়ে সে আশাবাদী। তবে সতর্ক করে দিলেন ঐ তিন জনের কেউ যেন বেঁকে না বসে, আর সবাই যেন ঢাকায় থাকে। বাবুল সাহেবের মতে লোকটা একটা ভদ্রবেশী খচ্চর। যতবার টেলিফোন করে, ততবার দ্বিতীয় কিস্তি পেমেন্টের কথা মনে করে দেয়।

দুই সপ্তাহের মাথায় তিনি আসলেন সকল কাগজপত্র রেডি করে নিয়ে। বাসার লিভিং রুমে বসে বাবুল সাহেব এক এক জনকে ডেকে নিয়ে আধা ঘন্টা ধরে সই করালেন। প্রত্যেককে একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকার খাম দিয়ে বিদায় করলেন। সবশেষে টাকা নিয়ে বিদায় হলো দালালটা। ঐ দিন সন্ধ্যায় তিনি টেলিফোনে কথা বললেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বড় ভাই’এর সাথে। জানালেন সব রেডি, কাল সকালে আসতে চান। ওপার থেকে উত্তর দিলেন, হ্যা, আসতে পারেন তবে লোন প্রপোজাল সরাসরি আমার হাতে দেবেন। আর সই করা চেক বই সাথে নিয়ে আসবেন। 

কথা মতো পরদিন পৌঁছালেন ব্যাংকের হেড অফিসে চেয়ারম্যানের দপ্তরে। ভিতরে খবর পাঠানোর পর উত্তর আসলো, একজন ভিজিটর আছেন, তিনি বের না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। প্রায় আধা ঘন্টা পার হওয়ার পর ভিতরের লোক বের হলে তিনি প্রবেশ করার সুযোগ পেলেন। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বড় ভাই কয়েকটা পাতাে উল্টিয়ে দেখলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, চেক বই এনেছেন? বাবুল সাহেব ঘাড় নেড়ে তিনটা চেক বই বের করে তাঁর টেবিলের ওপর রাখলেন। 

বড় ভাই আবার বললেন, এক একটা বই থেকে পঞ্চাশ কোটি টাকার মোট তিনটা চেক লিখুন। 

তার আদেশ মত দেড়শ কোটি টাকার চেক লিখে সামনে দিলেন। বড় ভাই তিনটা চেকই একবার করে দেখে নিলেন। সবগুলোতে অংকে ও কথায় টাকার পরিমাণ ঠিক আছে কী না, স্বাক্ষর ও সীল যথাযথ আছে কি না? তিনি বললেন, আগামী সপ্তাহে আমি এই চেকের টাকা ড্র করবো, আপনি পরবর্তী দুই সপ্তাহে, দুই দফায় আপনার তিনশ কোটি টাকা ব্রাঞ্চ থেকে তুলে নেবেন। খুব সাবধানে টাকা ক্যারি করবেন। ব্যাংকে কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন, কিন্তু ব্যাংকের বাইরে কোন সমস্যা হলে সেটা আপনার দায়িত্ব।

ব্যাংক থেকে ফেরার পথে তিনি গেলেন হুন্ডি ব্যবসায়ী তানভীর শাকিলের বাসায়। তারা ভারতের ইউ পি’র লোক। উর্দূ একসেন্টে বাংলায় কথা বলেন। কিন্তু এটা তার আসল নাম না হলেও এই নামে কালো ধান্ধার লোকেরা সবাই তাকে চেনে। তার বাবাও সুনামের সাথে একই ব্যবসা করেছেন। এখন ছেলে করছেন। ইনি আবার টেলিফোনে কোন কথা বলেন না। যার তাকে প্রয়োজন, সেই তাকে খুঁজে বের করে, দরকারি কাজ সারে। তার বাড়িতে যাবার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো, মেইন রোডে গাড়ি রেখে, হেটে তার বাসায় যাওয়া। তিনি তাই করলেন। ঐ রাস্তায় কে আসছেন, কে বাড়িতে ঢুকছেন সব সিসি ক্যামেরায় দেখতে পান শাকিল সাহেব। মনিবের কাছে অনুমতি নিয়ে দারোয়ান লোহার দরজা খোলে। এর পর দুইতলা পার হয়ে, তিনতলায় তার ঘরে পৌঁছাতে হয়। গোয়েন্দারা এই বাড়ির সামনে ডিউটি করে, তাই বাবুল সাহেব অতি দ্রুত তার সাথে দরকারি কথা সেরে গাড়িতে এসে বাসার দিকে রওনা হলেন। পথে কাওরানবাজারে থেমে পাঁচটা পাটের বস্তা ও এক বান্ডিল সুতলী কিনলেন। 

বস্তা ও সুতলী গাড়িতেই থাকলো। বাবুল সাহেব বড় ভাই’এর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ বজায় রাখেন। তার নির্দেশ মতো কয়েক দিন পরে ব্রাঞ্চ থেকে ধাপে ধাপে তুললেন তিনশ কোটি টাকা, তা আবার আড়াই মনের বস্তায় ভরে রাতের আধারে পৌঁছে দিতে লাগলেন শাকিল সাহেবের বাসায়। রাত দশটায় তিনি গাড়ি নিয়ে শাকিলের বাসায় যান। কোন হর্ন না দিয়ে লোহার দরজায় একটা টোকা দিলে দারোয়ান গেট খুলে দেয়।  আর তিনি গাড়ি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। খুব সতর্কতার সাথে কাজটা চলতে থাকলো। প্রতিবার তাকে টাকা দেওয়ার আগে অনলাইনে চেক করে শিওর হয়ে নিতে হয়, যে আগের বারে দেওয়া টাকা তার কানাডার ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়েছে কী না? এর মধ্যে টেলিফোন করে এয়ারটিকেটের ব্যবস্থা করতে বললেন পরিচিত ট্রাভেল এজেন্সির মালিককে। বাসায় এবং আত্মীয় স্বজনকে জানালেন যে, পরিবারসহ ওমরাহ করতে যাচ্ছেন। সবার সামনে মাথায় টুপি পরা শুরু করলেন। আর ক্লাবে গেলেন না। পরদিন বাবর আলী, মোকসেদ ও বিল্লালকে এক সাথে ডেকে নিয়ে তিনজনকেই দুই সপ্তাহের ছুটি দিলেন। সেই সাথে দিলেন আরো কিছু টাকা। শনিবার দিনগত রাত সাড়ে তিনটায় যে ক্যারিয়ার ফ্লাই করে, তার টিকেট ইস্যু করালেন। 

এখন শুধু একটা কাজ বাকি থাকল।  তা’হলো ব্যাংকের লকার থেকে সমস্ত গহনা তুলে নিয়ে আসা। তবে লকার একবারে ছেড়ে দেওয়া যাবে না, তাতে ব্যাংকের লোকজনের সন্দেহ হতে পারে। তাই পাজামা পাঞ্জাবী পরে, মাথায় টুপি দিয়ে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ব্যাংকে গেলেন। কেননা তাঁর নামে লকারটা ভাড়া নেয়া। অফিসারকে জানালেন তিনি পরিবার নিয়ে ওমরাহ করতে যাচ্ছেন, তাই একদিনের জন্য সব গহনা নিয়ে যাবেন। সঠিকভাবে ওজন দিয়ে যত টাকা যাকাত আসে, তা দান করে তবেই প্লেনে ওঠবেন। গহনার বাক্স নিয়ে বাসায় ফিরে স্ত্রীকে বেডরুমে ডেকে নিয়ে তার কাছে ব্যাগ দিয়ে বললেন, এগুলি আলদা করে কাগজে মুড়ে একটা স্কুলব্যাগে করে হ্যান্ড ক্যারি করতে হবে। কোন অবস্হাতেই লাগেজের মধ্যে দেওয়া যাবে না, দিলেই চুরি হয়ে যাবে। খালি হয়ে যাওয়া বাক্সগুলো বাইরে কোথায়ও ফেলতে নিষেধ করলেন, কেননা এগুলো দেখলে মানুষের সন্দেহ হতে পারে। 

ফ্যাক্টরীতে কাউকে কিছু তিনি জানালেন না। এমন কি যারা এখনও কাজ করছে, তাদের এ মাসের বেতনের ব্যবস্হাটাও করে গেলেন না। তিনি অনুমান করতে পারছেন, মাস শেষে যখন তারা বেতন পাবে না, তখন একটা গোলমাল লাগবে। মেশিন, গোডাউনে রাখা ফেব্রিক ও এক্সেসরিজ বিক্রি করে ম্যানেজার বেতন পরিশোধ করবে। এরপর ব্যাংক এসে তালা ঝুলাবে। এতে তার কোন অসুবিধা নেই। ফ্যাক্টরী দুটির মোট সম্পদের চেয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন পাওনাদারের টাকার পরিমাণ অনেক বেশি। তিনি স্ত্রী রিফাতকে বললেন, সকলকে বিদায় করানো হয়ে গেছে। শুধুমাত্র বাসার মধ্যে আছে কাজের মেয়ে আছিয়া আর পাজেরোর ড্রাইভার তপন। আছিয়াকে শুক্রবার সকালে মহাখালী বাসস্টেশনে তপন টাঙ্গাইলের বাসে তুলে দিয়ে আসবে। তপনকে কি করা যায়….। সিদ্ধান্ত নিলেন,  তাকেও পনের দিনের ছুটি দেবেন, সাথে পুরো মাসের বেতনের সাথে বাড়তি কিছু টাকা দেবেন। গাড়ি তিনটা শ্যালকের জিম্মায় অন্য কোন জায়গায় রেখে যাবেন। স্ত্রীকে আরও বললেন, ছেলে মেয়ে দুই জনের এক জনকেও এখনো জানানো হয়নি যে আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি। উপযুক্ত সময়ে তাদেরকে তিনিই জানাবেন। শুধু ওদের জন্য বেশি করে গরম কাপড় নিতে বললেন। 

কয়েকদিন ধরে তার স্ত্রী প্রত্যেকের সুটকেস ও ব্যাগ গোছানোর কাজ করছেন। আজকে তিনি নিজের গহনার ব্যাগ গোছানোর কাজ শুরু করার জন্য রুমের দরজা লক করলেন। তার ধারণা এখানে আনুমানিক পাঁচশ ভরি সোনা আছে। তার বিয়ের সময় থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত তিনি কোনদিন কোন গহনা বিক্রি করেননি, তবে অনেক ডিজাইন পুরাতন হয়ে গেলে তা পাল্টে নিয়েছেন। দুবাইতে যে কয়েকবার গেছেন, প্রত্যেকবার একটা করে সেট কিনেছেন, যেগুলি অনেক ভারী। প্রত্যেক সেট অথবা এক ধরনের কয়েকটা এক সাথে করে কাগজে মুড়ে ব্যাগের মধ্যে রাখা শুরু করলেন। এর মধ্যে কে যেন রুমের দরজা নক করছে। কাজ বন্ধ করে ওঠে দরজা খুলে দেখেন কাজের মেয়ে আছিয়া। বললো, রাতের খানা টেবিলে দেওয়া হয়েছে। আমি পরে খাবো, তুমি আপা ভাইয়াদের খেয়ে নিতে বলো। কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য সে দেখার সুযোগ পেল রুমের মধ্যে কি কাজ চলছে। এই কাজ শেষ করতে যেয়ে মধ্যরাত হয়ে গেল। খেতে যাওয়ার আগে ব্যাগটা ড্রয়ারে তালা মেরে লাখলেন। রাতে শুয়ে রিফাত চৌধূরী চিন্তা করলেন গহনার জন্য ফি বছরেই ওজন দিয়ে তার মূল্য হিসাব করে এতিমখানায় যাকাত দেওয়া লাগে, কিন্তু তিনি কোনদিন বাবুলকে যাকাত দিতে দেখেননি। ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছেন, কেউ একজন তাদের রুমে ড্রয়ার খুলে, গহনা ভর্তি ব্যাগটা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে্।  দ্রুত দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। চেহারাটা দেখতে পেলেন না। সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেল তার। ওঠে ড্রয়ার থেকে ব্যাগটা এনে বালিশের পাশে রেখে শুয়ে পড়লেন কিন্তু আর ঘুম আসলো না অনেকক্ষণ।

পরদিন শুক্রবার বাবুল সাহেবের নিজের ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় স্বজনরা আসলেন দেখা করতে। কাউকেই তারা আসল গন্তব্যের কথা বললেন না। সবাই ওমরার কথাই জানলো। সারাটা দিন মেহমানদারী করতেই মিসেস চৌধূরী ক্লান্ত হয়ে গেলেন। রাতে ডিনার করার পর তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছিল। তিনি গহনার ব্যাগটা মাথার কাছে নিয়ে শুয়ে পড়লেন। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লেন তা নিজেও জানেন না। পরদিন অনেক বেলা হলে বিল্ডিং’এর কেয়ারটেকারের ডাকাডাকিতে তার ঘুম ভাঙলো। তখনও বাড়ির সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সে জানালো রাতের দারোয়ান লাপাত্তা। সিসি ক্যামেরার রেকর্ডিং সে দেখেছে, আগে দারোয়ান গেট খুলে বের হয়েছে, তারপর আপনার কাজের মেয়ে বের হয়ে গেছে। কথা শেষ না হতেই মিসেস চৌধূরী তার রুমের দিকে ছুটলেন, দেখলেন গহনার ব্যাগ নেই।

তৎক্ষণাৎ স্বামী ও ছেলে মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ডেকে তুললেন। কিন্তু তাদের ঘুম ভাঙ্গলেও তার রেশ কাটেনি। গতরাতে সম্ভবত কোন ঘুমের ওষুধ খাবারের সাথে সে মিশিয়ে দিয়েছিল, যার ফলে বাসার সবাই অচেতন পড়ে। সে অবস্হায় ঘরে ঢুকে গহনার ব্যাগ, ওয়ালেটে থাকা টাকা, চাবি নিয়ে দরজা খুলে আছিয়া চলে গেছে। তাঁর সাথে দারোয়ান যোগ দিয়ে দুই জনই পালিয়েছে। তাদের উভয়েরই মোবাইল বন্ধ। হয়তো সিম খুলে ফেলে দিয়েছে। এই অবস্হায় চৌধূরী সাহেব কি করবেন? অনেক ভেবেচিন্তে একমাত্র শ্যালককে বাসায় আসতে বললেন দুপুরের পর। সিদ্ধান্ত নিলেন থানা-পুলিশ যা কিছু করা লাগে, তাকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন, সে করবে। তার কাছে গাড়ি তিনটাও রেখে যাবেন।

টরন্টোতে নেমে প্রথম অবস্হায় কোথায় ওঠবেন, তা আগেই ঠিক করা ছিল। এক বাংলাদেশী লোক, যার নাম এমরান। আগে থেকেই সেখানে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করছেন, তেমন একজনের সাথে গতবার তার পরিচয় হয়। মূলতঃ তিনি এই সেক্টরের একজন দালাল। তাঁর আকাঙক্ষা  তিনি একটা অফিস নিয়ে বসবেন, কিন্তু দালালি করে সেটা এতদিনে সম্ভব হয়নি। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। তাই পার্টনার হবার ইচ্ছে ব্যাক্ত করেছেন। বাবুল সাহেব না করেননি, আশ্বাস দিয়েছেন। তাতেই একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে দুই জনের মধ্যে। প্রতিদিন বাবুল সাহেব তার স্ত্রীকে নিয়ে বের হন বাড়ি খুঁজতে। এলাকা পছন্দ হয় তো, বাড়ি পছন্দ হয় না, আবার উল্টোটাও হয়। যাহোক, কয়েক দিনের মধ্যে পেয়ে গেলেন। দামও ঠিক হলো। সরকারী নিয়ম মোতাবেক সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে, সবাইকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠলেন। পরের সপ্তাহে অফিসের জন্য ছোট একটা স্পেস কিনে তা লে-আউট করার কাজে মনোযোগ দিলেন। প্রতিদিন একবার করে এমরান সাহেব আসেন কিন্তু পার্টনারশিপ বিষয়ে বাবুল সাহেব কোন কথা বলেন না। এর মধ্যে নতুন নতুন লোকের সাথে তার পরিচয় হচ্ছে। অনেকেই তাকে নানারকম ব্যবসার আইডিয়া দিচ্ছেন। তবে ঢাকার রাজনীতির এক বড় ভাই একদিন সন্ধ্যায় তাকে ক্যাসিনোতে নিয়ে গেলেন। কয়েক ঘন্টা ধরে খেলে বেশ অনেক ডলার জিতলেন। বড় ভাই তাকে উপদেশ দিলেন ঢাকায় আমরা সময় কাটাতে সামাজিক ক্লাবগুলোতে যাই, কিন্তু এখানে সময় কাটানোর জন্য ক্যাসিনো উত্তম জায়গা। 

মাস খানেকের মধ্যে তারা টরেন্টো শহরে নতুন সংসার গুছিয়ে নিলেন। দুইটি গাড়ি ইতিমধ্যে কেনা হয়েছে। টেলিফোন  থেকে বাংলাদেশের সিম খুলে ফেলেছেন। ওখানকার নতুন সিম ব্যবহার করছেন। শ্যালককে কল দিয়ে ঢাকার খবর নেন। ফ্যাক্টরী দুটির বিষয়ে যেমন চিন্তা করেছিলেন, তেমনই হয়েছে। গহনা চুরির বিষয়ে পুলিশে ছবিসহ এফআইআর করা হয়েছিল, কিন্তু তারা আছিয়া কিংবা দারোয়ান কারোর কোন হদিস এখনও পায়নি। মোবাইল ট্রাক করার চেষ্টাও সফল হয়নি। সম্ভবত তারা বাসা থেকে বের হয়ে ফোন ফেলে দিয়েছে। তিনি তাকে গাড়ি তিনটা বিক্রি করার জন্য কাস্টমার দেখতে বললেন। কদিন পরে শ্যালক দাম উল্লেখ করে কাস্টমার পাওয়া গেছে বলে জানালো। কিন্তু কোন কাগজপত্র গাড়িতে নাই। বাবুল সাহেব উত্তর দিলেন, কাগজপত্র আমার কাছে আছে। মালিকানা পরিবর্তনের কাগজ সহ তিনি কুরিয়ারে পাঠায়ে দেবেন। টাকাটা কিভাবে তাঁকে দিতে হবে, তাও বলে দিলেন।

দেখতে দেখতে ছয় মাস চলে গেল। ইতিমধ্যে তার ভুয়ো কোম্পানির চেয়ারম্যান, এমডি ও ডাইরেক্টরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা জেল হাজতে আছে। কিন্তু তিনি কোন ব্যবসায় শুরু করতে পারলেন না। বসে খেলে যেমন রাজার ধন-ভান্ডার শেষ হয়ে যায়,  তেমনি বাবুল সাহেবের শত কোটি টাকা কর্পূরের মতো হাওয়ায় মিলাতে শুরু করলো। এর সাথে যুক্ত হয়েছে প্রতিদিন ক্যাসিনো খেলা। আর আগে বাসার বাইরে যেয়ে ড্রিংক করতেন, এখন ঘরের মধ্যেই করেন। দিন দিন তার হতাশা বাড়ছে। একদিন স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে ডেকে বললেন,  বাইরে কাজ করে কিছু ইনকাম করতে। সকলে একযোগে এর প্রতিবাদ করে বললো, আমাদেরকে এখানে কাজ করতে হবে, এই কথা বলে আনা হয়নি, পড়ালেখার কথা বলে আনা হয়েছে। সেটা যদি না করাতে পারেন, তাহলে ফেরৎ পাঠিয়ে দেন। ফিরে যেয়ে পড়াশুনা করবো। 

চৌধুরী সাহেব উত্তর দিলেন ‘কোথায় ফেরৎ যাবা? গুলশানের বাড়িতে ব্যাংক তালা দিয়েছে। ফিরে গেলে কারো বাসায়, কারো দয়ার ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে। তার থেকে ভাল এখানেই থাকো, ইমিগ্রান্ট স্টুডেন্টদের মত কাজ আর পড়াশুনা দুটোই করো’। তাঁর কথা শেষ না হতেই মিসেস চৌধুরী বললেন ‘কাজ যদি করতে হয়, তাহলে বাসার সবাই কাজ করবে, আমরা কাজ করবো, আর তুমি ঘরে বসে খাবে, ফূর্তি করবে  তা হবে না। পুরো ফ্যামিলির আজকের এই দুরবস্থার  জন্য একমাত্র তুমিই দায়ী’। 

সেদিন আর কোন কথা হলো না। তবে সংসারের পাত্রে একটা চিঁড় ধরলো। দেশে তো ফিরে আসার কোন পথে নেই। ব্যাংকের করা অর্থ ঋণ আদালতের বিচারাধীন মামলায় রিফাত চৌধুরীও পলাতক আসামী। কয়েকদিন পরে বাসায় একটা প্যাকেট ডেলিভারি দিয়ে গেল সলিসিটারের অফিস থেকে। মিসেস চৌধুরী খুলে দেখলেন যে দুটো বাড়ি কেনা হয়েছে, তার লিজ এগ্রিমেন্ট অর্থাৎ আমাদের ভাষায় দলিল। দুটোই বাবুল চৌধুরীর নামে। এর মানে, এত দিন তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। মিসেস চৌধূরী ছেলে মেয়েকে সাথে নিয়ে স্বামীর সাথে কথা বলতে আসলেন। কিন্তু কোন প্রশ্নের উত্তর তিনি দিলেন না। মিসেস চৌধূরী জানিয়ে দিলেন তার লোভের কারণে আজ এই অবস্হা। এক ছাদের নিচে আর নয়। তিনি ছেলে মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকবেন। আজ থেকে তার খাবার ব্যবস্হা সে নিজে যেন করে নেয়। রাতে কথা বললেন পারিবারিক ল নিয়ে প্রাকটিস করেন এমন একজন বাংলাদেশী এটর্ণির সঙ্গে। তাকে জানালেন যে, তিনি দ্রুত সেপারেশন চান। এটর্ণি তাকে পরের দিন সকাল এগারোটায় তার অফিসে দেখা করতে বললেন। সেখানেই বিস্তারিত আলাপ করবেন। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে ডকুমেন্ট সাইন করতে হবে এবং ফিস দিতে হবে। এর মাঝে ছেলে ও মেয়েকে বিষয়টা জানাতে উপদেশ দিলেন। তবে বাসা ছাড়তে নিষেধ করলেন। সেই সাথে চাকরির চেষ্টা করতে বললেন। 

সরকারের আইন মোতাবেক বিবাহ বিচ্ছেদের সকল কাগজপত্র তৈরী হলো। নোটিশ আসলো, সময়সীমা অতিক্রান্ত হলো। কিন্তু এক ছাদের নীচে আর যে থাকবেন না, সেই সিদ্ধান্ততো আগেই নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই রিফাত চাকরি নিয়েছেন। কম ভাড়ায় থাকতে পারবেন এমন এরিয়াতে বাসাও দেখেছেন। তাই আইনগত সকল প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠলেন। শেষ হলো টরেন্টোর বেগমপাড়ার জীবন। 

 

এই গল্পের একটা উপসংহার আছে। বিদ্যাসাগর মহাশয় তার পুস্তক আদর্শলিপিতে লিখেছিলেন “লোভে পাপ, পাপে মৃত্যূ”। নিয়তি বাবুল চৌধুরীকে এমন জায়গায় টেনে নিয়ে গেল যে বাংলাদেশে যিনি ছিলেন শিল্পপতি, কানাডায় যেয়ে তিনি হয়ে গেলেন মদ্যপ ও জুয়াড়ি৷ এই দেশের গরীব মানুষের সঞ্চিত টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে তৈরি করেন সাম্রাজ্য ও বৈভব কিন্তু তার পরিণতি এমনই করুণ হবে তা কেউ কোন দিন কল্পনাও করতে পারেননি। সৃষ্টিকর্তা হয়তো কিছু বিচার দুনিয়াতে করে দেন।

কাজী মুজাহিদুর রহমান
কাজী মুজাহিদুর রহমান