অথ ডালপুরি সমাচার – অনুপা দেওয়ানজী

ছোট মেয়ে বিদিশা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো তখন মাঝে মাঝে শিক্ষকের নির্দেশে পড়ার ব্যাপারে বন্ধুদের সাথে তাদের ডিপার্টমেন্টের এক শিক্ষকের বাসায় যেতো।

 

শিক্ষকের স্ত্রী ছিলেন খুব অতিথিপরায়ণ আর আলাপী। তিনি তাদের কিছুতেই চা নাস্তা না খাইয়ে ছাড়তেন না।

সেই শিক্ষকের স্ত্রীর সাথে খুব সখ্য গড়ে উঠেছিলো তাদের।

 

একবার তিনি বাবার বাড়ি গেছেন বেড়াতে। বিদিশাদের দল গেছে সেই শিক্ষকের বাসায় তাদের এস্যাইনমেন্টের ব্যাপারে আলাপ করতে।

 

তাদের দেখেই তিনি বললেন, এসো।

 

কিন্তু স্যারকে দেখে তাদের তাদের এমন হাসি পাচ্ছিল যে তারা কিছুতেই  স্যারের ডাকে ঘরে ঢুকতে পারছিলো না। কারণ তাদের স্যারের ছিলো বিশাল এক ভুঁড়ি আর তিনি তখন তাঁর সেই ভূঁড়িটিকে দিব্যি টেবিল বানিয়ে তার ওপরে বিস্কিট আর চায়ের কাপ রেখে  মাঝে মাঝে সেই বিস্কিটে কামড় দিচ্ছেন আর চায়ে চুমুক দিচ্ছেন।হাতে একটা বই।

 

স্যারের ডাকে অগত্যা অতি কষ্টে  হাসি দমন করে সবাই খুব বাধ্য ছাত্রীর মতো  এসে বসলো বটে কিন্তু পড়ায় কেউ আর কিছুতেই মন দিতে পারে না।

 

স্যার কিন্তু বেশ গুরুগম্ভীর ভাবে তাদের সাথে আলোচনা করতে লাগলেন ।

আলোচনার এক পর্বে তিনি বললেন,” দাঁড়াও তোমাদের জন্যে একটু চায়ের কথা বলি।”

 

ছাত্রীরা  বললো, “স্যার ভাবী নেই। আজ থাক।”

স্যার  উত্তরে বললেন,”  কাজের মেয়েটা আছে তো।   তোমরা চা আর নাস্তা খেয়ে যাবে।

বলতে বলতে  কাজের মেয়েটিকে ডাক দিয়ে বললেন,  চা দিতে। সেই সাথে তাকে জিজ্ঞেস করলেন সে কি  কি নাস্তা বানাতে পারে?

মেয়েটি উত্তর দিলো,” কিছুই পারি না।”

স্যার জিজ্ঞেস করলেন, ” এতদিন ধরে কাজ করছিস ভাবির কাছ থেকে কিছুই কি শিখিস নি?”

 

মেয়েটি তার উত্তরে  বললো,” হ শিখছি ডাইলপুরি ।”

 

বেশ ডালপুরিই বানিয়ে আন । এই বলে তিনি আবার তাদের পড়া সংক্রান্ত ব্যাপারে আলোচনা  করতে লাগলেন।

 

কাজের মেয়েটি কিছুক্ষণ পরে চা আর সেই সাথে চপের মতো কিছু একটা দিয়ে গেলো।

স্যার ছাত্রীদের বললেন,” নাও খাও।কেমন বানিয়েছে দেখ  তো?”

ছাত্রীরা ভাবলো এ নিশ্চয় চপ হবে।

কিন্তু মুখে দিয়ে দেখে এতো আটার লেচি। ওপরে ভাজা হয়েছে কিন্তু ভেতরে পুরোটাই কাঁচা আটা।  মাঝখানে যদিও ডাল আছে।

 

ওরা  স্যারের সামনে সেটা না পারছে গিলতে , না পারছে ফেলতে।

 

স্যার নিজেও যখন একটা মুখে দিলেন তিনি বুঝতে পারলেন এটা আদৌ ডালপুরি হয় নি।

ছাত্রীদের বললেন,” কোথাও কিছু একটা ভুল হয়েছে তাই না? তোমাদের ভাবি তো এইরকম বানায় না।”

 

কাজের মেয়েটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কি বানিয়েছিস তুই?”

 

মেয়েটি খুব খুশি হয়ে বললো,” ক্যান ডাইল পুরি?”

 

– কিভাবে বানালি  পুরো প্রসেসটা বলবি?

 

মেয়েটা বললো, “পরথমে লবণ হলুদ, মরিচ , পিঁয়াজ, রসুন দিয়া ডাইল সিদ্ধ করছি। তারপরে তার লগে বেরেস্তা আর মরিচ ভাইজ্জা ডইলা পুর বানাইছি।”

 

– তারপরে?

-তাইরপরে আটার দলার ভিতরে সেই পুর ঢুকাইয়া দিয়া ভাইজ্যা আনছি।

 

স্যার তার পুরো বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শুনে বললেন,” in the whole process  তোর কি একবারও মনে হোলো না আটার দলাটাকে একটু বেলে নেয়া দরকার? এটাকে কি ডালপুরি বলা যায় নাকি খাওয়া যায়? আটার দলার ভেতরে ডালের পুর ঢুকিয়ে  ভেজে আনলেই সেটা ডালপুরি হয়ে গেলো?”