কোন এক মহালয়াতে
অজ পাড়া গাঁ থেকে এই প্রথম মা ছেলের বাড়িতে থেকে শহরের দুর্গাপূজা দেখবেন আবদার করাতে ছেলে গ্রামে গিয়ে বিধবা মাকে মহালয়ার আগের দিন নিজের নূতন ফ্ল্যাটে নিয়ে এলো।
পুত্রবধু শর্মিলার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো শাশুড়িকে দেখে। এবারে বাপের বাড়ির সবার সাথে হই হই করে আনন্দ করাটা মজাটা বুঝি মাঠেই মারা গেলো।
নাতি অরিন্দম তো ঠাকুমাকে পেয়ে মহাখুশি।সে ঠাম্মির সাথে কত রাজ্যির গল্প যে করে তার কোন মাথা মুন্ডু নেই।
বৃদ্ধা মা এর আগে কখনো শহরের পূজা দেখেন নি।পূজা দেখতে এসে তিনি ছেলের সাজানো ফ্ল্যাট দেখে যত না খুশি তার চেয়েও বেশি খুশি হলেন পূজার ছোট্ট ঘরে ছোট্ট একটা শ্বেত পাথরের সিংহাসন দেখে। যেখানে শোভা পাচ্ছেন স্বয়ং শিব আর দূর্গার যুগলমূর্তি।
মহালয়ার ঊষালগ্নে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কন্ঠের মাতৃবন্দনা বা চন্ডীপাঠ শুনে তিনি যেমন আপ্লুত হন তাঁর ছেলের মাতৃবন্দনা বা চন্ডীপাঠও তাঁকে তেমনি আপ্লুত করে।
মহালয়ার পাঁচদিন পরেই দুর্গাপূজা শুরু।
পুজার দিনগুলিতে তাঁর ছেলে চন্ডীপাঠ করে। মা তাঁর সন্তানের পাশে বসে গভীর ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে চন্ডীপাঠ শুনতে বসেন।
শর্মিলার দেব দেবীর প্রতি খুব একটা ভক্তিভাব নেই। পূজার চেয়েও তার আগ্রহ লেটেস্ট ডিজাইনের শাড়ি, গয়না নিয়ে ভাবতে।
ধুমধাম করে পূজার আনন্দ শেষ হয়ে যাবার পরে বিজয়ার দিনে ছেলে মাকে প্রণাম করলে বৃদ্ধা মার হঠাৎ কি যে হল। তিনি ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন,” তোর ওই সিংহাসনটা আর শিব দূর্গার যুগল মূর্তিটা আমাকে দিবি বাবা? আমি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই।
মার আবদার শুনে ছেলে শর্মিলাকে এসে বললো, “মা সিংহাসনটা আর শিব দুর্গার যুগল মূর্তিটা নিয়ে যেতে চাইছে । মাকে দিয়ে দিই কি বল?”
শর্মিলা ক্ষুব্ধ স্বরে বললো,” কক্ষণো, না এটা আমি কিছুতেই দেবো না। বুড়ি চাইবার আর কিছু পায়নি না? এ জন্যেই এসেছে এখানে ?”
ছেলে মাকে মনক্ষুণ্ন হয়ে বললো, ” মা তোমাকে আমি আরেকটা সিংহাসন আর শিব দূর্গার যুগলমূর্তি কিনে দেবো এর চেয়েও সুন্দর!
মা ছেলের দিকে তাকিয়ে অনুচ্চস্বরে বললেন,” থাক বাবা।দরকার নেই।”
গ্রামে ফিরে যাবার কিছুদিন পরেই বৃদ্ধা মার মৃত্যু হলে ছেলে যখন সেই সিংহাসনের দুর্গামূর্তির সামনে মাতৃবন্দনা করতে বসে তখন এক গভীর বোধ যেন তাকে বলে, সে না চিনেছে তার মাকে না চিনেছে দুর্গামাকে।
Facebook Comments Sync