দীপু আর ছোট্ট চড়ুই ১ – অনুপা দেওয়ানজী
বাড়ির উঠানটার একধারে ঝোপালো কাঁঠালগাছটার ডালে ডালে সারাদিন চড়ুই পাখিদের কিচিরমিচির গান লেগেই আছে। দীপুর ছোটমামা বলে ওরা নাকি বাস্তু চড়ুই। সেই কিচিরমিচির দূর থেকে শুনলে মনে হয় গান নয়, অনেকে যেন একসাথে পায়ের নুপুর বাজিয়ে চলেছে।
বাস্তু চড়ুই কাকে বলে দীপু আগে জানতো না। ছোট মামা বলার পরে জেনেছে। মামা আরও বলেছে, বাস্তু চড়ুই ছাড়া আরও একরকমের চড়ুই আছে । তাদের বলে গেছো চড়ুই। তারা নাকি বাস্তু চড়ুইয়ের মতো মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে না।
সকাল হতেই চড়ুই পাখিগুলি গাছ ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ে আর ঠোঁটে করে কচি ঘাসের ডগা, ফুলের কুঁড়ি বা ছোট ছোট পোকামাকড় মুখে করে নিয়ে আসে তাদের ছানাপোনাদের জন্যে।
দীপু প্রায়ই মার ভাঁড়ার থেকে চাল বা মুড়ি এনে ছড়িয়ে দেয় উঠানে। আর সাথে সাথে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুইপাখিরা উড়ে এসে হামলে পড়ে । সেই চাল খুঁটে খুঁটে তুলে নিয়ে মূহুর্তেই সাফ করে ফেলে। কি সুন্দর জোড় পায়ে লাফায়।সেই সাথে আসে বুলবুলি, দোয়েল, কবুতর, শালিখ আর কাকও।
মাঝে মাঝে সে যখন উঠান পেরিয়ে গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ায় তখন দেখে চড়ুইগুলি কাঁঠাল গাছের ডালে পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে । একটা হঠাৎ উড়ে গেলে বাকিগুলিও সাথে সাথে দল বেঁধে উড়াল দেয়। ঘাসের মধ্যে সবাই মিলে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়, কিচির মিচির করে একসাথে গান গায়।
দীপু ভাবে পাখিদের কি মজা। ওরা কেমন সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকে, একসাথে উড়ে বেড়ায়। আহা দীপুও যদি মানুষ না হয়ে ওদের মতো পাখি হতে পারতো !
তবে সে মাঝে মাঝে দু একটি পাখিকে কেমন যেন খুব দুঃখী দুঃখী চেহারা করে একা একা বসে থাকতেও দেখেছে। পাখিদেরও কি দুঃখ আছে? থাকলেও কি সেই দুঃখ দীপুর খুব জানতে ইচ্ছে করে। চড়ুইপাখিরা যদি কথা বলতে পারতো মানুষের মতো তাহলে খুব ভালো হত।
পাখিগুলি দীপুকে ওরা খুব ভালোবাসে। দীপু চাল হাতে উঠানে এসে দাঁড়ালেই ওরা কেমন করে যেন আগেই টের পেয়ে উড়ে উড়ে চলে আসে।
দীপু উঠানে চাল ছড়িয়ে দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে পাখিদের খাওয়া দেখে যতক্ষণ পর্যন্ত না মা ডাকে দীপুউউউউ অ দীপুউউউউউউউ কোথায় গেলি? দুধটুকু খেয়ে যা।
দীপু আসছি মাআআআআ বলে আবারও দাঁড়িয়ে থাকে।
মা তখনো ডেকেই চলে।
Facebook Comments Sync