দুপুরচন্ডির প্রতীক্ষা পর্ব ৩

দুপুরচন্ডির প্রতীক্ষায় আফরোজা অদিতি

  রাতে শুতে শুতে দেরি হয়ে যায় ওদের। ওরা খেয়ে এসেছিল। খাওয়ার ঝামেলা ছিল না। খাওয়ার ঝামেলা না থাকলেও ঘর বিছানা ঠিক করতে করতে অনেক রাত্রি হয়ে যায়। রাতে ঘুম আসে না ওর। অপরিচিত পরিবেশ আর নিজের বিছানা ছাড়া ঘুম আসেনা ওর।  অপরিচিত পরিবেশ ছাড়াও ঘুম না আসার আরও একটা কারণ হলো এদের ব্যবহার; এদের এই অপরিচ্ছন্ন ব্যবহার খুব পীড়া দিচ্ছে ওকে; কষ্ট হচ্ছে ওর। কষ্টের মুহূর্তে সকলের মনে পড়ে আপন জনদের কথা। ইথিকারও মনে পড়ে। ওর মায়ের কথা, অর্পিতার কথা, বাবা ভাইদের কথা। অর্পিতাকে ছাড়া ঘুমায়নি অনেকদিন; এ-পাশ-ও-পাশ করতে থাকে ইথিকা।

    নির্ঘুম রাত; ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো একের পর এক মনে পড়ছে! এই বাড়ি, বাড়ির পরিবেশ, বাড়ির মানুষগুলোকে খুব অদ্ভুত লাগছে। একদিনেই বুঝেছে এরা মানুষ বেশি সুবিধার নয়! তাছাড়া এদের চলাফেরা কেমন যেন রোবটের মতো। ওরা কি এভাবেই চলাফেরা করে, নাকি আজ শুধু এইরকম! শুধু কী ওরই জন্য বদলে গেছে এ বাড়ির পরিবেশ পরিস্থিতি। কী করবে এখন ইথিকা? চলতে হবে এদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে। তাল মিলিয়ে চলবে কি চলবে না! তাল না মিলিয়ে চললে কি হবে? এখানে এই বাড়িতে, এই লোকটার সঙ্গে যদি না থাকে তাহলে এই সমাজ ওকে একলা থাকার সুযোগ দেবে কি? না দিলে কী করবে? ওর বাবা-মা কি ওর সাথে থাকবে? ওর এই একলা পথ চলার মাঝে তো বিপত্তি ঘটে গেছে। এখন কী করবে? কে জানে কী আছে এই চার আঙুলে কপালটাতে!  ও কি নিয়তির হাতে খেলার পুতুল হয়ে থাকবে! এ কেমন নিয়তি ওর!

‘কি ব্যাপার ঘুমাচ্ছ না কেন?’

‘ঘুম আসছে না। কালকে ও বাড়িতে যাব আমি।’ তড়িঘড়ি কথা বলে ইথিকা।

‘ও বাড়িতে কেন?’

‘এমনি। অর্পির জন্য খারাপ লাগছে’।

‘দেখ ওসব মন খারাপ বাদ দাও।’

‘ও-মা বাদ দেব কেন? মন খারাপ লাগলে বলব না, আর মন খারাপ লাগছে কি শরীর খারাপ লাগছে সব কথা তো তোমাকেই বলব। তুমি তো সব তোমাকেই বলতে বলেছিলে। তোমাকেই তো বলবো এখন।’ একটু চুপ করে স্বামীর মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করে ইথিকা।  

‘এসব ন্যাকামি করো না; আমি জানি তোমার ঐ বাড়ির জন্য খারাপ লাগছে না, ভাই-বোনদের জন্যও মন খারাপ লাগছে না, মন খারাপ লাগছে আগের স্বামীর জন্য। এতই যখন পুড়ছে পরান তো বিয়ে করলে কেন?’ তমিজ কথাটা বলতে পেরে নিজেকে খুব অহংকারী মনে করে।  বিড়াল মারলে তো পয়লা রাতেই মারতে হয়। মনে মনে বলে তমিজ, কি বা নাচন দেখাবে তুমি মহুয়া চাঁদ!

   তমিজের ব্যবহার,তমিজের কথা শুনে মন আরও খারাপ হয়ে যায় ইথিকার। যার চেহারা মনে নেই, মনে নেই যার কথা, তার জন্য মন খারাপ লাগবে, তাকে চিন্তা করবে কিভাবে? ওর তো শুধু মাত্র বিয়ের কথা মনে আছে, আর কিছু না। ও এতোদিন বিয়ে করেনি, এটা ওর অহংকার নয় বিয়েতে ইচ্ছা ছিল না ওর! তবে   ও বিয়ে করেনি তাই নিয়ে এই রাতে একা একাই বকবক করছে! আশ্চর্য হয়ে গেল ইথিকা! নিজেকে পবিত্র মনে করা! নাকি স্বামীর জন্য একটা কিছু করা! সিনেমা দেখো মনের আয়নায়; ছবি দেখো! আহা! মানুষের জীবন কি ছবি? নাকি ছবির মতো হয় কখনও।

তমিজের কথায় তমিজের প্রতি ঘৃণায় ভরে ওঠে ইথিকার মন।

এ কেমন মানুষ। সব জেনেই তো বিয়ে করেছে তমিজ তবুও এ কেমন ব্যবহার। এখন এই সময়ে কী এসব বলার সময়, নাকি বলার কথা এসব। ওপাশ ফিরে শোয় ইথিকা। চেষ্টা করে ঘুমাতে। কিন্তু ঘুমাতে দেয় না তমিজ। এপাশ ফিরায় জোর করে। টান দিয়ে বুকের আঁচল ফেলে দিতেই বাধা দেয় ইথিকা।

  ‘আজ না!’

 ‘ আজ না কি? এতে কি আবার দিন ক্ষণ সময় ঠিক করতে হবে! ন্যাকামি।’

  ওর বাধা না মেনে জোর করেই ব্লাউজ টেনে হুকগুলো ছিঁড়ে ফেলে। কিছুক্ষণ তান্ডব চালায় ওর ওপর তারপর ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে তমিজ। ইথিকা নিশ্চুপ পাথর। প্রচন্ড ঝড়ের পর যেমন তছনছ প্রকৃতি তেমনি পড়ে থাকে ইথিকা সারারাত।

  একটু আদর না, একটু কথা না, একটু হাত ছোঁয়াছুয়ি নয় একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়া। এতো সম্ভ্রমহানির সামিল। স্বামী-স্ত্রীর কি এই সম্পর্ক। এখানে স্বামীরা বলাৎকার করে শুনেছিল;এখন প্রমাণ পেলো। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তো থাকে পবিত্র বন্ধন। স্বামী স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক। দুঃখ-বেদনা, হাসি-কান্নায় সহায়ক। ইথিকার এ কেমন স্বামী; নিশ্চুপ,নীরব,নির্জীব পড়ে থাকে বিছানায়।  ঘুম হয় না সারারাত। ভোরে আজান দিতেই দরোজা খুলে বসে সিঁড়িতে। ওঠেনি কেউ। আকাশ তখনও ফর্সা হয়নি ততোটা। সুবেহ্ সাদেকের আলো আকাশে। বাড়ির ভেতরে অন্ধকার। অন্ধকার গাছপালা আগাছার মধ্যে ঝিঁ ঝিঁ ডাকছে একটানা তখনও।

    ও বাথরুমে যায়। হাত মুখ ধোয়। ঘরে এসে বসে থাকে অন্ধকারে। লাইট জ্বালায় না,জ্বালাতে ইচ্ছে করে না। কি জানি তমিজ আবার কি বলে। ওর নাকি আলোতে চোখে কষ্ট হয় বলেছিল রাতে। অযথা অন্যের কষ্টের কারণ হয়ে তো লাভ নাই। মায়ের কথা, বাবার কথা মনে পড়ে ইথিকার। মা-বাবা শুধু মা বাবা কেন হয়, বন্ধু কেন হয় না? সকলের মা, বাবাই কি ওর মা-বাবার মতো, নাকি বন্ধুও!

      ওর মা কিংবা বাবা যদি ওর বন্ধু হতো কিংবা দুজনের কেউ একজন, তাহলে বলতে পারতো অকপটে সব কথা। ওর দুঃখের কথা,কষ্টের কথা। শেয়ার করতে পারতো সব কথা! কিন্তু তা কি কখনও হওয়ার! হওয়ার নয়। ওর কোন কথাই কখনও শেয়ার করতে পারেনি বাবা-মায়ের সঙ্গে; যখনই শেয়ার করতে গেছে তখনই কোন না কোন কথায় বাধা দিয়েছে মা; মা, তার নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে! সেই ছোট্ট বয়স থেকে ক্রমাগত বাধাপ্রাপ্ত হতে হতে নদী যেমন বুজে যায় তেমনি ও হয়ে পড়েছে নীরব নদীর মতো, স্রোতহীন, নিথর। নিজের সঙ্গে নিজেই যুদ্ধ করে ইথিকা। বোঝাপড়া করে। সমঝোতা করে। কিন্তু সমঝোতা করে কতদিন চলা যায়। তাও আবার একপক্ষের সমঝোতা। চলা যায় না। সমঝোতা করে কয়েক মাস কয়েক বছর চলা যায়, সারা জীবন চলা যায় না।

ইথিকা কী পারবে;এই সংসারে সারাজীবনের সমঝোতায়? নিজেকেই প্রশ্ন করে নিজে! সামনে তাকিয়ে থাকে অন্ধকার কেটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে! একটু পরে এই পৃথিবীর হাতের পর সূর্য তার সমস্ত প্রতিভা নিয়ে উদ্ভাসিত হবে; আলোকিত করবে দশদিক! কিন্তু আলোকিত এই পৃথিবীর মতো কী প্রত্যেক মানবজীবন আলোকিত হয়? ভেতর থেকে ডাক ভেসে আসে। ‘ইথিক কোথায়?’ ঘরে আসে। ওকে দেখে তমিজ ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,‘কোথায় গিয়েছিলে?’ তমিজের কথার জবাব দেয় না; দিতে ইচ্ছা করে না।

     এভাবে দিন চলে যাচ্ছে। ছোটখাট খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে সব সময়ই ওর সঙ্গে লেগেই থাকে তমিজ। এমনকি বিয়ের বছরেই সন্তান নিতে চায়নি বলেই একরাতে রাগারাগি শুরু করে তমিজ। কেন বাচ্চা নিবে না । দেখ এখনও তো নিজেদের গুছিয়ে নেওয়াই হয়নি, গোছানো হয়নি সংসার। এর মধ্যে বাচ্চা-কাচ্চা নিলে ঘর-বাড়ি গোছাবে নাকি ছেলে মানুষ করবে। ইথিকা খুব শান্ত স্বরে বোঝাতে চেষ্টা করে ওকে। কিন্তু ইথিকার এই কথার উল্টা মানে করে তমিজ। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে চিৎকার করে। ‘কি আমার পয়সা নেই। তোর বাপের বাড়িতে টাকা-পয়সা আছে তো। এক পয়সাও তো দিলো না আজ পর্যন্ত।’  তমিজের কথায় রাগ না করে খুব শান্তভাবে কথা বলে ইথিকা,

‘তোমাকে কেন দেবে? নিজেইতো রোজগার কর। তাছাড়া আমি দিচ্ছি না।’

তোকে বিয়েই তো করেছি টাকার জন্য। তা না হলে বিধবা মেয়ে-লোককে কেন বিয়ে করবো। আর পয়সা দিবি না কেন? একশো বার দিবি, হাজার বার দিবি; দিতে হবে। আর যদি একবার পয়সা দেওয়ার কথা বলেছিস তো খুন করে ফেলবো।’

তমিজ চিৎকার, চেঁচামেচি লাফালাফি শুরু করে দেয়। ওঘর থেকে শ্বশুর-শাশুড়ি ছুটে আসে। ‘কি হয়েছে? কি হয়েছে?’ বাবা-মাকে আসতে দেখে যেন আরও জোর পেয়ে যায় ইথিকার বর। লাফিয়ে ওঠে তিন হাত! চরকিবাজী করে আর বলে, ‘হারামির বাচ্চা টাকার খোঁটা দেয়। কয় কিনা আমাদের নাকি ওই খাওয়ায় পরায়।’

    তমিজের ব্যবহারে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে ইথিকা। এদিকটা কখনও ভেবে দেখেনি ও। তমিজ ভালবাসে না ওকে ও বুঝে গিয়েছিল। ভেবেছিল ভাল না বাসলেও ওকে ভাল লেগেছে তাই বিয়ে করেছে। কিন্তু তমিজ যে ওর টাকাকেই বিয়ে করেছে তা আজই জানলো। আজকের ব্যবহার কথায় মনে হলো বিয়ের পরের দিনের শ্বশুরের কথাগুলো শ্বশুরের নয়, তমিজের। নিজে না বলে তার বাবাকে দিয়ে বলিয়েছে তমিজ।

 

    মনে পড়ে ওর। বিয়ের পরের দিন ওকে ডেকে ওর শ্বশুর বলেছিলেন, ‘বউ মা, বেতন তো হয়ে গেছে মা।’

‘হ্যাঁ আব্বা।’

‘তাহলে মা চেকটা দাও, টাকাটা তুলে আনি।’

‘কেন আব্বা কষ্ট করবেন আপনি।’ ওর কথা শুনে মোমের মতো হেসে গলে গলে পড়ছিল শ্বশুর। পাশে শাশুড়ি দুঠোঁটে ডাইনিবুড়ির মুচকি হাসির মতো ছড়িয়ে পড়েছিল হাসি! বিগলিত হাসি হেসে শ্বশুর বলেছিলেন, ‘কষ্ট কি মা, এই বুড়ো ছেলেটা সব সময় তোমাদের খেদমতের জন্যই তো মা। তুমিতো আমার মেয়ের মতোই।’

ইথিকা চেক লিখে দিয়েছিল। মনে ক্ষীণ আশা ছিল টাকা তুলে এনে শ্বশুর ওকে দেবে কিন্তু দেয়নি। ও লজ্জায় কিছু বলেনি।

তমিজকে বলেছিল কিন্তু তমিজ যেন শুনতেই পায়নি এমনিভাব দেখিয়ে চলে গিয়েছিল ঘর থেকে।

  এরপর থেকে প্রতিমাসেই টাকা তোলার চেক চায় রমিজ উদ্দিন। ইথিকাও দেয়। আর শুধু বেতনের চেক নয়, টুম্পার বিয়ের সময় ওর প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে লোনও নিয়েছে তমিজ। সব টাকা বিয়েতে খরচ করেছে। ওদের বিয়ের দুইমাস পরেই বিয়ে হয়েছে টুম্পার।

এ মাসে চেক দেয় না ইথিকা। শ্বশুর চেকটা চাইলে প্রথমে কথা বলে না। তারপর আস্তে অথচ দৃঢ়কন্ঠে বলে, ‘এ মাসের টাকা আমি নিজেই তুলে আনবো আপনাকে কষ্ট করতে হবে না আব্বা।’ শ্বশুর কিছু বলেনি ওকে। তমিজও না।

অফিস থেকে ফিরে চা করে সকলকে দিয়ে নিজের কাপ নিয়ে ঘরে এসেছে ইথিকা। তমিজের চা ওদের সঙ্গেই টেবিলে দিয়েছিল; কিন্তু তমিজ কাপ নিযে ঘরে এসে সরাসরি জিজ্ঞাসা করে ইথিকাকে।

‘আব্বাকে চেক দাওনি কেন?’

‘আমি তুলে আনবো আমার টাকা। উনি কেন কষ্ট করবেন।’ ইথিকা আমার শব্দটির পরে জোর দেয় ইচ্ছে করেই। তমিজ অবশ্য শুনেও না শোনার ভান করে বলে, ‘আব্বা কষ্ট করবেন কি করবেন না ওনার ব্যাপার। চেক চেয়েছে চেক দেবে।’

‘না এখন থেকে আমার টাকা আমিই তুলবো। টাকা দিতে হয় দেবো আমি।’ উচ্চকিত কণ্ঠ নয় তবে ধাঁরালো!  

‘বেশি কথা বলোনা। বউ, বউ এর মতো থাকো। দেখ একটা ছেলে হয়েছে আমার। তাছাড়া বিয়েও হয়েছে চার বছর। এই চার বছর তো আমার সব টাকা তোমাদেরই দিয়ে আসছি। এখন ছেলের জন্য কিছু রাখা আমার দরকার। আমার নিজের জন্যও।’

‘ছেলের টাকা রাখতে হয় আমি রাখবো। তোমার দরকার নেই। আর তোমার কথা তো জানিনা, টাকা দেবে এইটুকু শুধু জানি। তুমি কী করবে এটা ভাবা আমার বিষয় নয়!’  তমিজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ইথিকা। কি কথার কি জবাব দেয়, কেমনভাবে দেয় লক্ষ্য করে, কথা বলে না।

এমনিতেই ও জানে ছেলের ব্যাপরে ওর কোন কথাই চলবে না, চলেও না এখানে। এমন কি অসুখ-বিসুখ হলেও না। শাশুড়ি যদি বলে তবে ডাক্তার হবে, পথ্য হবে, না হলে কিছুই হবে না! ওর একটা শাড়ি কিনতে বোনের অনুমতি লাগে, শুধু অনুমতি না, ওর শাড়ির মতো একই রকম শাড়ি শাশুড়ির জন্যও কিনতে হয় ওকে। বিয়ের পর থেকেই চলে আসছে এসব। এখন আর ভাল লাগে না এসব। ও অনেক নমনীয় হয়ে, অনেক ভাল ব্যবহার করে ত্যাগ স্বীকার করে দেখলো এই চার বছর এ বাড়ির লোকদের ব্যবহার আজও বদলালো না। ও যতো ভালো ব্যবহার করছে এরা ততো খারাপ ব্যবহার করছে ওর সঙ্গে। ইথিকা এই সব কথা ভাবতে ভাবতে চা খেতে থাকে।

তমিজ বলে, ‘চা খাওয়া শেষ করে চেক দিয়ে এসো আব্বাকে।’

‘টাকা তুলে এনেছি আমি।’

‘তাহলে টাকা দিয়ে এসো।’

‘না এবারে টাকা দেব না আমি। তুমি ছেলে টাকা দেবে তুমি। দায়বদ্ধতা তোমার। আমি তো টাকা বানানোর মেশিন না যে তোমরা খারাপ ব্যবহার করবে তবুও আমি আমার কষ্টের টাকা বিলিয়ে যাবো! সাফ জবাব ইথিকার।  

‘বেশি কথা বলো না। দিয়ে এসো টাকা।’ ধমকে ওঠে তমিজ।

‘অনেক ধমক ধামক দিয়েছো, আর না। চেষ্টা করলাম তোমাদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে। আর না!’

‘কি মুখে মুখে কথা।’ হাতে চায়ের কাপ ছিল সেটা ছুঁড়ে মারে ইথিকার মুখ লক্ষ্য করে। খুব গরম না হলেও চা গরমই আছে। গরম চা চোখের মধ্যে দিয়ে চোখ জ্বালা করতে শুরু করে। মুখ জ্বালা করছে। তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দেয়।

অনেকক্ষণ পানি দিয়ে চোখের জ্বালা কমলে ঘরে এসে বাক্স গোছাতে শুরু করে। এখানে আর থাকা যায় না। থাকা কি উচিত। উচিত নয়।

চেষ্টাতো এই চার বছর ধরেই করে আসছে। এদের সঙ্গে সমঝোতা করার কিন্তু দুর্ভাগ্য ওর। ও সমঝোতা করতে পারলো না কিছুতেই। এক সঙ্গে থাকা, সংসার করা ওর কপালে নেই। গুরুজনদের কথাই ঠিক; প্রথমে যার কপালে সুখ হয় না তার দ্বিতীয় বারেও হয় না। কখনওই হয় না। সুটকেস গুছিয়ে ও বাড়ি থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নেয়।

    কিন্তু যাবে কোথায়? মায়ের কাছে। মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে ওর। ও জানে ওর মা আবার এখানে ফেরত পাঠাবে ওকে। মায়ের বিশ্বাস স্বামীর বাড়িই মেয়েদের বাড়ি। বিয়ের পর বাপের বাড়িতে মেয়েদের কোন অধিকার থাকে না। মায়ের অবশ্য দোষ নেই; এই সমাজ ব্যবস্থা যা সেই নিয়মেই সেই বিশ্বাসে সমাজবদ্ধ থাকে মানুষ। মাকে তো দোষ দেওয়াা যায় না। মা তার বিশ্বাসে সন্তানকে বড় করে; কখনও কোন সন্তান খারাপ থাক তা কখনও চায় না কোন মা! মা হলো ত্যাগী মানুষ, মায়ের ধর্মই ত্যাগ করা।

     ( চলবে)

আফরোজা অদিতি
আফরোজা অদিতি