হাউস – বেগম জাহান আরা
পাশের বাড়ির শিমুর আবার একটা ছেলে হয়েছে। এই নিয়ে পর পর পাঁচ ছেলের মা হলো মেয়েটা। অবাক হয় ঝুমি। শিমুরা একটা মেয়ে চায়। বলেছে কথাটা সেই। তাই বলে চান্স নিতে নিতে পাঁচ পাঁচটা ছেলে সংসারে আনবে? কতোই বয়স হবে? বড় জোর তার থেকে তিন চার বছরের বড়ো। এসএসসি পাশের বছর দিয়ে এই হিসেব বের করেছে সে। শিমুর পাঁচ নম্বর সন্তানের বিষয়টা খুব পোড়াচ্ছে তাকে।
রাতে কথায় কথায় উঠে পড়ে শিমুদের কথা। মিলাই তোলে গল্প। তারও ইচ্ছে হয় দুটো মেয়ের পর একটা পুত্র সন্তানের ঝুঁকি নিতে। কিন্তু মাসুম যেনো শুনতেই পায় না বৌয়ের কথা। বলে, ছেলে দিয়ে কি হবে? রুমা ঝুমাকে ভালোভাবে মানুষ করার চেষ্টা করো।
-মানে কি মাসুম? আমরা তো গরিব না। দশটা সন্তানও নিতে পারি।
-হাসালে মিলা। বাড়িটার আটতলা এখনও শেষ হয়নি। এখন হিসেব করে চলতে না পারলে বিপদ হতে পারে।
-কি বিপদ হবে? এই মাসেওতো হুন্ডি করে টাকা পাঠালে কানাডায়। এমন করলে বাড়ি শেষ হবে কি ভাবে?
-ওখানকার বাড়ি কেনার টাকা তাহলে কে দেবে?
-ওখানে বাড়ি কেনার দরকার কি?
-একেই বলে মেয়েছেলে। দেশের যা পরিস্থিতি, যদি কোনোদিন বিদেশে গিয়ে থাকতে হয়?
-মানুষ খুব বেশি হলে দশ দিক চিন্তা করে। তুমি করো একশো দিক।
-হা হা হা মিলা বেগম, কথাটা বড্ড দামি বলেছো।
-লোকে তোমাকে খারাপ জানে, সেটা বোঝো?
-কি বলে?
-বলে, তুমি একটা বোকা। পরের ছেলেদের জন্য রাজপ্রাসাদ বানাচ্ছো। ছেলে থাকলে কথা ছিলো। খাবে তো জামাইরা।
-তুমিও তাই শুনে নাচো?
-কথা তো সত্যি। আমাদের একটা ছেলে দরকার না?
-মাঝে মাঝে আমারও ইচ্ছে হয় মিলা। কিন্তু…, এই যাহ, ভুলে গেলাম কেমন করে?
হঠাত বিছানা থেকে উঠে পড়ে মাসুম। কাকে যেনো ফোন করে মালয়েশিয়ান পদ্মফুলের গাছের জন্যে। কদিন থেকে বড়ো উঠোনের এক কোনায় দুটো মাটির বেশ বড়ো গামলা এনে তাতে পানি, মাছ, জলজ উদ্ভিদের চারা এইসবের চর্চা হচ্ছে। সখ হয়েছে, উঠোন বাগান করার। কবে ছাদ শেষ হবে, তবে তো ছাদ বাগান! তর সয় না মাসুমের।
লোকটার সখেরও অন্ত নেই। বাড়ির সামনে ফুলের বাগান। একপাশে ক্যাকটাস এবং অর্কিডের জন্য গ্রিনহাউস টাইপের কিছু জায়গা। সেখানে বেশ অনেক রকমের গাছ। একটু পাশে সরে কয়েকটা টবে বনসাই গাছের সমাহার। মিলা রেগে মাঝে মাঝে বলে, যেখানে যা দেখবে সেটাই তোমার চাই কেনো? বেশি বেশি হাউস।
রাগ করেনা মাসুম। ওর শরীরে আল্লাহ রাগ দেন নি। কতো রকম ভাবে রাগাতে চেষ্টা করেছে মিলা। সংসারে কোনো কিছু নিয়ে তার অখুশি নেই। খাওয়া দাওয়া সেবা যত্ন এসব নিয়ে দাবি দাওয়া নেই। বাড়ির জন্য তার খুব মায়া। যেখানে যা ভালো পাবে, তাই তুলে নিয়ে আসবে বাড়িতে। আর বাজারে গেলে মনে হয় দোকান উঠিয়ে নিয়ে আসতে মন চায়। এই বাজারের হাউস নিয়ে কতোদিন রাগ করেছে মিলা। তবে কাজের লোকজন আছে। খানেওয়ালাও আছে। দারোয়ান, ড্রাইভার, মালি, ছাড়াও নানা পদের অতিথি আসে। সবাই খাবে। সে আর এক হাউস তার।
মাসুম হেসে বলে, হাউস না থাকলে জীবন কিসের বৌ? পুরুষ মানুষের হাউস না থাকলে হয়? তাছাড়া তোমারও তো হাউস আছে।
-আমার আবার হাউস কি?
-একটা পুত্র সন্তানের হাউস আছে না? হা হা হা।
লজ্জা পায় মিলা। বলে, তুমি ভারি অসভ্য মাসুম। লজ্জা দাও কেনো?
-না না লজ্জা নয়। মনে করে দেখো, হাউস না থাকলে তোমাকে পেতাম?
-থাক। আর সেই সব কথা বলার দরকার নেই।
মিলা রাগ করলে এই কথার অবতারণা করে মাসুম। আগুনে পানি পড়ে।
রুমা ঝুমা তর তর করে বেড়ে উঠছে। আর কবে তারা ছেলে নেবে?
মাসুমের ব্যাবসার সুবাদে দুচারজন ব্যবসায়ী আসা যাওয়া করে মিলাদের বাড়িতে। মেলামেশা ছিলোই। এখন বেড়েছে। নব্য ধনীদের গল্প যেমন হয়, তেমনই তাদের গল্প। দেশ বিদেশ বেড়ানোর গল্প। নানা দেশ থেকে আনা সুভেনিরের গল্প। বড়ো শপিংমলে কেনাকাটা করার গল্প। নানা রকম রেস্তোঁরায় রকমারি স্বাদের খাবারের গল্প। রোজার মাসে ভালো রেস্তোঁরায় ইফতার এবং সেহরি খাওয়ার গল্প। বেগম সাহেবদের শাড়ি গয়নার গল্প। এখনকার গল্পে বিদেশে বাড়ি থাকা না থাকার গল্পও যুক্ত হয়েছে।
মিলা সুখেই আছে। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় একটা জীবনের জন্য এতো কিছুর প্রয়োজন কি? তারাও মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে।কোথায় একটা সংযমের বেড়া দিয়ে রেখেছিলো মা বাবা। প্রয়োজনের সবই পেয়েছে। সখের জিনিস পেয়েছে খুব কম। বাবা বলতেন, শৈশব কৈশোর বিলাসের সময় নয়। এখন লেখা পড়া করো মন দিয়ে। পরে রোজগারের টাকা দিয়ে করতে হবে বিলাসিতা। তাই মেনেছে তারা ছয় ভাইবোন। মিলাও মাস্টার্স পাশ করেছে সমাজবিজ্ঞানে। তখন শুরু হয়ে গেছে মেয়েদের জর্জেট শিফন শাড়ি পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা। তাদের বরাদ্দ ছিলো টাঙ্গাইলের পাড়ওয়ালা শাড়ি আর সুতি ছাপা শাড়ি। পরিবারে অনেক মানুষ ছিলো বটে, কিন্তু খাঁই খাঁই ছিলো না।
স্বামীর ঘরে ক্রমে ক্রমে মিলা বিলাসী হয়ে উঠেছে। মাসুমের সেটাই পছন্দ। মেয়ে দুটোও মায়ের পথ ধরেছে। তাদের স্কুল যাওয়া আসার জন্য গাড়ি লাগবে বলেছে বাবাকে। বাবাও রাজি। কম্পিউটার লাগবে। পর দিনই সেটা হাজির। চারজনের সংসারে চারটা কম্পিউটার। ঘরে ঘরে এসি। দুই মেয়ের ঘরে দুটো টিভি। দামি কার্পেট। সুদৃশ্য পড়ার টেবিল। চমৎকার টেবিল ল্যাম্প। তারপরেও তাদের বায়নাক্কা ঘোচেনা। যার যা কিছু ভালো দেখবে, সেটাই তাদের চাই।
মিলা ভেবে পায় না, সখের জিনিস আর কতো চাই? শুধু তো রুমা ঝুমা নয়, মাসুমেরই কি সখের কমতি আছে? ভয়ে বুক কাঁপে তার। কখনও যে নতুন নারী ধরে আনবে না, তাই বা কে জানে? যেদিন থেকে বোতল আনা শুরু করেছে বাড়িতে, সেদিন থেকে মাসুমকে তার ভয় করছে। এর চেয়ে সাদামাটা জীবনই ভালো ছিলো। মেয়েরা তো বলেই, মা-টা কি ভীতু!
অনেক সময় কাটায় মিলা ফেইসবুকে। কতো রকম যে কাহিনি! তরুণ প্রজন্মও যেনো কেমন হয়ে যাচ্ছে। শুধু বস্তু চাহিদার কথা। নতুন নতুন খাবারের ছবি। নিজেদের রান্না করা খাবারের ছবি। অমনি হুমড়ি খেয়ে পড়ে অনেকে। আপু বা ভাইয়া, খেতে চাই খেতে চাই। যেনো না খেয়ে আছে কতো কাল। যেনো ঐ খাবারটা খেতে পেলে জীবন ধন্য হয়ে যাবে।কারও বাগানে শাক সবজি হয়েছে, সে ছবি দিয়েছে। ব্যস, অমনি হা পিত্যেস। ইস, কি ভাগ্যবান তুমি আপু বা ভাইয়া, আমার যদি অমন একটা বাগান থাকতো! যেনো অমন একখানা বাগান থাকলেই সে ভাগ্যবান হয়ে যাবে। এমনকি কেউ যদি ঘুমের মধ্যে চলে যায় তারার দেশে, তখন বলবে, আহা আমার শেষ যাত্রা যদি এমন শান্তির হতো।
কেউ হয়তো সুন্দর মাটির টবে মানিপ্ল্যান্টের ছবি দিয়েছে। আর যায় কোথায়। কোথায় সেইরকম টব পাওয়া যায়? দাম কতো? কোথায় মানিপ্ল্যান্ট পাওয়া যায়? যেনো উড়ে গিয়ে কিনে আনবে, নাহলে খাওয়া ঘুম হারাম হয়ে যাবে।
কারও পটপ্ল্যান্ট হিশেবে পুঁই শাকের ডগা লক লক করে বেড়ে উঠেছে। তার ছবি দিয়েছে। দেখেই জিবে পানি এসে গেছে জানায়। যেনো ওই বিশেষ পুঁই শাকের তরকারি না খেলেই না। কাকুতি মিনতি করে বলে, ইস, আমাকে না দিয়ে খেওনা আপু। পুঁইশাক আমি খুব ভালোবাসি।
অনলাইন শপিং আজকাল ফেবুতে বেশ চলে। বিশেষ শাড়ি, বিশেষ থ্রি পিস, লোরিয়াল-এর কসমেটিকস, ইত্যাদি দেখে সে কি কলকলানি! বাড়িতে ঢিবি হয়ে আছে নানা রকম কসমেটিকস। তবু নতুনগুলো না হলেই চলবে না। দাম যাই হোক। আর বিয়ের অনুষ্ঠানে চোখ লাগা শাড়ি পরা ছবি দেখলে অন্যের ওয়ালে গিয়েই আলাপ শুরু করে। শাড়ির প্রশংসা করে। তার দাম জানতে চায়। ঠিকানা চায় দোকানের।
রোজই দেখে মিলা এই সব হাউসের ছবি এবং বর্ণনা। ভাবে, চাই-পাই-খাই ছাড়া মানুষের আর কি কোনো কাজ নেই? মিলার বাবা বলতেন, আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত সমাজের গড়ন ঠিক না হতেই সেটা উঠতি ধনীর চরিত্র পেয়ে যায়। ব্যালেন্স থাকে না। মধ্যবিত্তের চাওয়া সীমিত।সাধ্য সীমিত। আকাশ কুসুম কল্পনা করতে তারা ভয় পায়। অনেক কষ্টের রোজগারের প্রতি খুব মায়া। বুকের ভেতর ভীরু ভীরু আদর্শ এদিক ওদিক চাইতে দেয় না। নব্য ধনীদের তা নয়। এরা সহজে অনেক টাকা আয় করে। খরচ করে দুহাতে। আদর্শকে তারা বোকামি মনে করে। কিশোর বয়সে বাবার এই সব কথার মানে বোঝেনি মিলা। এখন কিছু বুঝতে পারে নিজের জীবনের পরিবর্তন দেখে।
রুমা ঝুমার জন্ম হলো মধ্যবিত্ত পরিবারে। কৈশোর পার না হতেই তারা উঠতি ধনী পরিবারের সদস্য হয়ে গেছে। মধ্যবিত্তের সেই টানাটানির সংসার ওরা দেখলোই না। মাসের শেষ সপ্তায় মায়ের চিন্তিত মুখ দেখতো মিলা। উৎকন্ঠায় দিন কাটাতেন মা। রীতিমতো নামাজ পড়ে মুনাজাত করতেন, আল্লাহ, সবাইকে হেফাজতে রেখো। আমার ছেলেমেয়েদের হায়াত দরাজ করো। সুস্থ রাখো। কারণ মাসের শেষ প্রান্তে কারও অসুখ বিসুখ হলে, ডাক্তার বদ্যি, পথ্য, জোগাড় করা খুব ঝক্কির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতো। সংসার চলে যেতো। কিন্তু সঞ্চয় তেমন কিছুই থাকতো না।
মিলার সংসারে তা নেই। সারামাসই একরকম স্বাচ্ছন্দ্য। সারা মাসেই ভালোমন্দ রান্না হওয়া। আর মাসের শেষ তারিখে পোলাও, কোর্মা, রোস্ট, মিষ্টি রান্না হয় তাদের সংসারে। কেনা কাটা চলে প্রতি মাসেই। মেয়েদের কাপড় চোপড়ের লেখা জোখা নেই। এর বাইরেও মিষ্টি, আইস্ক্রিম, আপেল, আঙুর, মৌসুমী ফল তো আছেই। খাওয়া দাওয়ার বিলাস কেনো মাসুমের তা জানে মিলা। শৈশবে বাবা মারা গেলে মামা চাচাদের দানে তাদের জীবন চলতো। এসএস সি পাস করার পর কলেজে পড়ার সময় শহরের এক পরিবারে জায়গীর থাকতো মাসুম। সেখানে রোজ আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেতে হতো। সাথে শুকনো মরিচ পোড়া আর পেয়াজ। কিংবা কাঁচা মরিচ আর একটু শর্ষের তেল। বলতে গেলে এইভাবেই গ্রামের এক কলেজ থেকে সে বিএ পাশ করে। অংকে মাথা ভালো থাকায় টিউশনি পেয়ে যেতো। তখন থেকেই তার স্বপ্ন, অনেক বড় হতে হবে।
মুড়ির মোয়া হাতে পেয়ে এবং খেয়ে বড়ো হয়নি মাসুম। কর্মী মানুষ। নিজের হাতে গড়া তার সব কিছু। স্বপ্ন ছিলো বড়ো হবে। নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত না, উচ্চবিত্ত হবে সে। সেই অন্বিষ্ট থেকেই দস্যুবৃত্তি করে মিলাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করা। কি একটা সময় গেছে! কি ভাবে যে বাবাকে ম্যানেজ করেছিলো মাসুম, সেটা আজও অজানা মিলার।
ঘুমিয়ে পড়েছিলো মিলা। দুপুরে ঘুমোনোর স্বভাব নেই তার। সেদিনের কথা মনে করতে করতেই আলস্য এসে গেলো। ঘড়ি দেখে আঁতকে ওঠে মিলা। সন্ধেবেলা পার্টি আছে। রাজ্যের খাবার কিনে এনেছে মাসুম। সেগুলো পরিবেশনের ব্যবস্থা ছাড়াও লিভিংরুমে ফুল সাজাতে হবে।
কাজের লোক দিয়ে এইসব কাজ হয় না।
লিভিংরুম যেনো জাদুঘর। কোথাকার সামগ্রী না আছে এই ঘরে? ঝাড়বাতিটা গতমাসে বেইজিং থেকে এনেছে। অসাধারণ! মাসুমের জন্য গর্বে ভালোবাসায় উথলে ওঠে মিলার মন। বন্ধুরা সবাই তাদের লিভিংরুমের সাজসজ্জার প্রশংসা করে। সবই তো ভালো। কিন্তু মাসুমের খাঁই খাঁই চাই চাই ভাবটা বেড়েই যাচ্ছে, এতেই মিলার চিন্তা। আজকাল ঘন ঘন মনে হয়, অন্য নারীতে যদি চোখ যায় মাসুমের। শির শির করতে থাকে বুকের গহীন অতল।
আলো ঝলসানো ঘরে জমজমাট পার্টি চলছে। রাত একটু গভীর হলে লিভিংরুমের দরজা লাগিয়ে দেয়া হলো। মিলা অবাক। মাসুম বললো, এভাবে আর নয়। একটা সাউন্ড প্রুফ পার্টিরুম বানাবো আটতলায়। সেখানে শুধু পার্টি হবে। মাঝে মাঝে ভাড়াও দেবো।
অবাক হয়ে বলে মিলা, কি বলছো এইসব? তোমার মুখে ওয়াইনের গন্ধ?
-কি বোকার মতো কথা বলো মিলা রানি? ওপরে ওঠার সিঁড়িতে বোতল সাজানো থাকে। তুলে নিতে হয়। তারপর খাওয়া না খাওয়া কোনও ব্যাপার না। ওসব নিয়ে কথা বলতে নেই।
-কি বলছ মাসুম? তোমার ভাষা আমি বুঝতে পারছি না।
সবার সামনেই তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয় মাসুম। বলে, ডার্লিং, আমি আরও ওপরে উঠতে চাই।
-বোতল হাতে নিয়ে? লোকে কি বলবে?
-কিচ্ছু বলবে না। টাকা দিয়ে কিনে নেবো সবাইকে।
-আর কি কি চাই তোমার মাসুম?
-জানি না ডার্লিং। শুধু জানি, আরও অনেক চাই।
-এতো বিকট হাউস কেনো তোমার? পাপ ঢুকেছে তোমার মনে মাসুম।
-কি বলছ মিলা বেগম? ওপরে উঠতে চাও না?
-চাই , কিন্তু…কিন্তু…
-ওপরে উঠতে গেলে আদর্শের কথা ভুলে যেতে হবে বেগম।
-তাই বলে তুমি মদ খাবে? নেশা করবে?
-শুধু কি তাই? আজকে তোমাকে সাথে নিয়ে নাচবো।
-আমি? নাচবো?
-কেনো না? নাচের পোশাক পরেছো, অথচ নাচবে না?
নিজের দিকে চেয়ে দেখে, বিকিনি পরেছে সে। সারা গায়ে ফুলের গয়না।
হঠাৎ পরীর মতো এক মহিলা এসে মাসুমকে টেনে নিয়ে যায় সোফায়। ওর বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মেয়েটা।
দিগবিদিক জ্ঞান হারিয়ে মিলা ছুটে যায় মেয়েটাকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার জন্যে। কিন্তু কে যেনো তার মাথায় শক্ত কিছু দিয়ে প্রচন্ড জোরে আঘাত করে। পড়ে যায় সে।
জ্ঞান ফিরে দেখে মাসুমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। মাথায় অসহ্য ব্যথা। চোখের পাতায় যেনো পাথর চাপা দিয়েছে কেউ।
-কি কান্ড বলো তো মিলা?
-কি হয়েছিলো আমার? শুয়ে কেনো আমি? পার্টির লোকজন গেলো কোথায়?
-কিচ্ছু হয়নি। মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলে। খাটের পাশিতে ব্যথা পেয়েছো।
-পার্টির কি হলো?
-সব বন্ধ করে দিয়েছি মিলা বেগম।
-সেই মহিলা কোথায়?
-কার কথা বলছ?
-তোমাকে টেনে নিয়ে গেলো?
– ও, তোমার সেই বারোমেসে ‘সন্দেহ রমণ’?
ধড়ফড় করে উঠতে চায় মিলা।
-না না বেগম, বিশ্রাম নাও। ডাক্তার এসেছিলেন। লক্ষণি দেখে বললেন, সুখবর আছে।
-কিসের সুখবর মাসুম?
-তোমার সন্তানের হাউস সফল হয়েছে। তুমি মা হবে মিলা।
রুমা ঝুমার সামনেই মাসুমকে জড়িয়ে ধরে মিলা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। বিড় বিড় করে বলে, জানতাম। কিন্তু আল্ট্রাসোনো করার আগে তো জানতে পারবো না, মেয়ে না ছেলে হবে আমার।
Facebook Comments Sync