রবীন্দ্রনাথের রস-রসিকতা ৫ / রক্তবীজ ডেস্ক
বাইশ
একদিন রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভক্ত ও ছাত্রছাত্রীদের সামনে গান গাইছেন- ‘ হে মাধবী, দ্বিধা কেন?’
এমন সময় ভৃত্য বনমালী আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে ঘরে ঢুকছিলেন। গান শুনে থমকে গেলেন। ঘরে ঢুকবে কি ঢুকবে না ভাবছে। রবীন্দ্রনাথ গান গাইছেন, এ সময় ঘরে ঢুকলে বিরক্ত হবেন কিনা কে জানে? রবি ঠাকুর বনমালীর দিকে তাকিয়ে গাইলেন, ‘ হে মাধবী, দ্বিধা কেন?’
বনমালী আইসক্রিমের প্লেট রবীন্দ্রনাথের সামনে রেখে লজ্জায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
রবীন্দ্রনাথ বললেন- ‘বনমালীকে যদিও মাধবী বলা চলে না। তবে তার দ্বিধা মাধবীর মতই ছিল। আর আইসক্রীমের প্লেট নিয়ে দ্বিধা করা মোটেই ভাল নয়।’
তেইশ
রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের ছেলেদের বকাঝকার পক্ষপাতি ছিলেন না। একবার প্রমথনাথ বিশী সম্পর্কে একটা গুরুতর নালিশ এলো। এ অবস্থায় বিশীকে না বকলেই নয়। অনিচ্ছাসত্ত্বেও গুরুদেব অনেকক্ষণ ধরে বকলেন। তিনি থামলে প্রমথ বললেন, ‘কিন্তু ঘটনা হলো আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’ রবীন্দ্রনাথ হাঁক ছেড়ে বাঁচলেন। বললেন, ‘বাঁচলি। তোকে বকাও হলো আবার তুই কষ্টও পেলি না।’
চব্বিশ
শান্তিনিকেতনের ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলছে অন্য এক প্রতিষ্ঠানের ছেলেরা। খেলায় শান্তিনিকেতনের ছেলেরা আট গোলে জিতলো। তারা মহাখুশি। জানাতে গেল গুরুদেবকে। গুরুদেবও খুশি। তবে কপট ঠাট্টায় বললেন, ‘জিতেছো ভাল। তাই বলে আট গোল দিতে হবে? ভদ্রতা বলেও তো একটা কথা আছে।’
পঁচিশ
একবার রবী›শ্রনাথ ও গান্ধীজী একসঙ্গে বসে সকালের নাশতা করছিলেন। গান্ধীজীকে দেওয়া হয়েছিল ওটসের পরিজ। গান্ধীজী লুচি পছন্দ করতেন না। রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি। গান্ধীজী তাই দেখে বলে উঠলেন, ‘গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছো।’ উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘বিষই হবে; তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।’
ছাব্বিশ
এক দোল পূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের। পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর দ্বিজেন্দ্রলাল পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথকে রঞ্জিত করে দিলেন। রবীন্দ্রনাথ অসন্তুষ্ট না হয়ে সহাস্যে বললেন, ‘এতদিন জানতাম দ্বিজেন বাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন। আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়, দেহরঞ্জনেও তিনি একজন ওস্তাদ।’
Facebook Comments Sync