ধাওয়া -৯ / শাহানাজ শাহীন

ধাওয়া 17-19

ধাওয়া

ধারাবাহিক উপন্যাস 

ধাওয়া -৯ / শাহানাজ শাহীন

 

আমি কখনোই বিব্রত হইনি কোথায় থেকেছি, কেমন বাড়িতে । এমনকি অর্থ সম্পর্কে কখনো ভাবিনি । আমি জানতাম, আমরা বিত্তশালী নই ততদিন পর্যন্ত যখন না মেঘ আমাদের বাড়ি সম্পূর্ণ জঘন্য ,

নোংরা এসব বলেছে । দরিদ্র বলে যে আমাদের কোনো কিছুর কমতি আছে এরকম আমার কখনোই

মনে হয়নি ।

 

সন্ধ্যা নেমে এসেছে । বাইরে এখনো হালকা আলো ছড়িয়ে আছে । সুহাসিনীদের বাড়িতে আলো জ্বলছে ।

শহরের শেষ মাথায় মানুষের জীবন যাপনে অনেকটা গ্রামের ছোঁয়া আছে । এখানে সূর্য ডোবার পর পর রাস্তা ঘাট ফাঁকা হতে শুরু করে । দোকানপাট আট নয়টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় । নির্ভর করে খদ্দেরের উপর । সুহাসিনী তার ঘরে । সে শুয়ে আছে ।

তার দুই দাদা , মা আর বাবা ডাইনিং টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছে । সে শুনতে পেল দাদাদের গানের

গলা । সুহাসিনী বিছানা ছেড়ে ডাইনিংরুমে যায় ।

মা রাতের খাবারের আয়োজন করছেন । সেই ফাঁকে দাদারা গান ধরেছেন । বড়দার গানের গলা অসাধারণ । আমি বাবার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলাম । আমার দূই দাদা পাশাপাশি বসেছেন বাবার ডানদিকে । আমার পাশের চেয়ারটি খালি মায়ের জন্য ।

বাবা গজল পছন্দ করেন । দাদা বাবার জন্য একটি ধর্মীয় গান গাইছেন,

 

ও নবী তোমায় কোন নামে ডাকি,

আমার তরী বেয়ে নিবে পূণ্যে নাকি?

এ পথ বড় কঠিন পাইতে নিজেকে সঠিক

যেমন পেয়েছেন আপনি দিনের নবী

 

মা আমার পাশে এসে বসেছেন, আমি টের পাইনি।

ছিলাম ভাবনার ভুবনে । আমি কিছু একটার মধ্যে ছিলাম । আর আমি জানি সেটি কি ছিল ।

 

দাদাদের গান শেষ । বাবা হাততালি দিলেন । মা-ও ।

আমি ফিরে এলাম ভাবনার জগত থেকে ।

সবার সাথে আমিও তালিতে সামিল হলাম ।

গান শোনা শেষে মা বললেন ,

 

“তোমার গলা অসাধারণ । “

 

“হুম । “

এই গানটি আমি রেকর্ড করছি নন্দিতার স্টুডিওতে ।

 

নন্দিতা মেঘের বড় বোন ভালবাসার বন্ধু । আমার দুই দাদাও নন্দিতার বন্ধু । দাদার প্রথম গান রেকর্ডিং হচ্ছে । মা শুনে খুব খুশি হলেন । এই দরিদ্র ঘরে আমরা তিন ভাই বোন রত্নগর্ভা । মার দিকে লক্ষ্য করলে বুঝা যায় । বাবাও । মা বললেন,

 

” তোমার গান রেকর্ডিং হচ্ছে এতো বিস্ময়কর কার্যক্রম ! “

 

“যেহেতু কার্যক্রম কথা উঠল, আমি চিন্তা করছিলাম

আমাদের পিছনের উঠোনে মুরগির ঘরটি একটু বড় করবো । অর্থাৎ ছোট খামার আকারে । “

 

“কি বললে? বাবা বললেন ।

 

আমি বলতে চাইছিলাম কতো খরচ পড়বে বাবা? আমার কিছু টাকা জমনো আছে ডিম বিক্রি থেকে ।

খামারের ভিতরে দুর্বাঘাস লাগানো হবে ।

কিছু ফুলের গাছ থাকবে । পরিবেশ এমন হবে যেনো এটি একটি উন্মুক্ত জায়গা । মুরগি, পোকা মাকড় খাবে স্বাধীনভাবে । তাদের কাছে মনে হবে না তারা আটকা আছে । বন্দি আছে ।

 

“মা এটা একটি বড় কাজ । “

বাবা খুশি হয়ে বললেন ,  তোমার জমানো টাকা তূমি রেখে দাও ।

দরকার হলে পরে খরচ করো । তোমার খামার করতে যা খরচ হবে আমি দিব ।

আমি মালিকের সাথে কথা বলছি । তাছাড়া জায়গাটি উনার । তারই খরচ করা উচিত ।

 

” বাবা ধরে নাও উনি করবেন না । এবং আমরা এখানে থাকছি । সুতরাং আমাদেরই করা উচিত ।

খামার আমাদের ,টাকা খরচ করবেন উনি এটা দেখতে খারাপ লাগে । “

 

সুহাসিনী আঙ্গুল দিয়ে ভাত নাড়াচাড়া করছে ।

শওকত মিয়া মেয়েকে নীচু স্বরে বললেন,

” কি চিন্তা করছ? “

 

“কিছু না বাবা । “

 

মা আমার হাত ধরলেন । বললেন,

 

“মন খারাপ কর না । তুমি আমাদের বলতেই পার ।”

 

সুহাসিনী বাবাকে লক্ষ্য করে বললো,

 

“মেঘ আমার দেয়া ডিমগুলো খায়নি । সব ফেলে দিয়েছে । কারণ তারা ভয় পাচ্ছে খেতে । তাদের ধারণা মুরগি থাকার জায়গাটি নোংরা । সেখানে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে , যা মানব শরীরের বিষক্রিয়া ছড়াতে পারে । “

 

“আলম সাহেব বলেছেন? “মিসেস ফাহমিদা বললেন ।

 

” না , মেঘের কাছ থেকে শুনেছি । “

 

” এর মানে তাদের পরিবারে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে । ছেলেটির ঠিক হয়নি তোমাকে বলা ।

সে কাজটি ঠিক করেনি ।”

মিসেস ফাহমিদা বললেন ।

 

বড়দা বললেন,

“কে কি বলেছে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে?”

 

শিপন বললো, ছোটদা একই সুরে,

 

” হুম, কিছু যায় আসে না । “

 

মিসেস ফাহমিদা রেগে উঁচুস্বরে বললেন,

 

” আমার জন্য যায় আসে । “

 

বাবা পরাজিতের মতো মার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

তিনি মাকে বললেন, “বাদ দাও না? “

 

” না । বাদ দিতে পারব না । এভাবে জীবন যাপন করে আমি ক্লান্ত । আমার এই পার্টটাইম চাকরিটি না থাকলে এই সংসার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে চিন্তা করতে পার? ফ্রিজটা কতো দিন হলো ঠিকমতো চলছে না । খাবার রাখলে নষ্ট হয়ে যায় । কতো আর সহ্য করা যায়? দমবন্ধ অবস্থা । “

 

খাবার টেবিলের পরিবেশ এখন থমথমে । কিছুক্ষণ আগের হাসি ঠাট্টা এখন বাস্তবতার গ্যাড়াকলে আক্রান্ত । মা একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন,

 

“আমি অতি ক্লান্ত প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার দেনা করে । বাড়িতে দু চারজন মানুষ এলে তাদের আপ্যায়ন করতে প্লেট বাটি মানুষের কাছ থেকে আনতে হয় । “

 

“তোমার কি ধরণা এই জীবন আমি বেছে নিয়েছি তোমাদের জন্য? কখনো তোমাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে সঠিক কাজটি করার জন্য ।

আমরা সন্মতি হয়েছি যে জয়নালকে চিকিৎসা করাবো । “

 

“এখন সময় এসেছে চিন্তা করার কোনটি বেশি জরুরি সকলের জন্য । তোমার সব উপার্জন ঢালছ এক ভাইয়ের পিছনে । আমার মেয়েটা মানুষের কাছে অপমানিত হচ্ছে এই দরিদ্র অবস্থার জন্য ।

মেয়েটি একা সহ্য করেছে এই অপমান ।

আমাদের বলেনি । তার ছোট্ট একটা আবদার আমরা রাখতে পারছি না ।

সন্তানের জন্য অপারগতার এই কষ্ট মার চেয়ে কেউ বেশি বুঝে না । জায়গাটা ঠিক করে দিলে মেয়েটি মুরগিগুলো পালতে পারত ঠিকমতো । “

 

“এটি আমাদের জায়গা না ।” বাবা চেঁচিয়ে উঠলেন ।

 

“তুমি কিভাবে এটা বল, হুম ? যেহেতু আমরা এখানে এক যুগের বেশী সময় ধরে থাকছি অতএব আমাদেরই ভাবতে হবে । কিছু মেরামত করতে হলে আমাদের করতে হবে । তুমি টাকা খরচ করবে বলে এড়িয়ে যাচ্ছ । গত এক যুগ ধরে তুমি একথাই বলে আসছ । অস্থায়ী জায়গা । কিন্তু এটা অস্থায়ী না ।

এটা আমাদের থাকার জায়গা । আমাদের গৃহ ।

তুমি কি মনে কর অন্য জায়গায় ভাড়া বাড়িতে থাকতে পারবে? বাচ্চাদের কলেজের খরচ যোগাড় করতে পারবে । আমরা এখানে বিনে পয়সায় থাকি বলেই কোনো রকমে চলে যাচ্ছে । এখন তো মনে হয় সরকারি খাতায় বাস্তুহারা নাম দিতে হবে । “

 

“আমি আমার ভাইকে ছাড়তে পারব না । “

 

“তোমার ভাই কি তোমার ছেলে মেয়েদের চেয়ে বেশি আপন ? “

 

বাবা টেবিলের উপর কষে চাপ্পড় মারলেন । তিনি গলায় যত জোর ছিল দিয়ে বললেন,

 

“কতো বড় সাহস তোমার ! তিনি টেবিল ছুঁড়ে দিলেন মায়ের দিকে । আমি জীবনে এই প্রথম বাবাকে ধমক দিলাম,

 

” বাবা থামতো , একদম মুখ বন্ধ কর । আর একটা কথাও না । উঠ । উঠো বলছি । এক্ষুণি । আমি কাঁদতে থাকলাম । বাবা শান্ত হলেন । তিনি মাথা চাপড়াচ্ছেন হাত দিয়ে । তিনি আমাকে বললেন,

 

“মাগো এটা তোমার দোষ না । সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে । আমি প্রতিজ্ঞা করছি । খুব তাড়াতাড়ি ।”

 

সুহাসিনী বাবার কথায় অপ্রস্তুত হয় । তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল । তার জীবনে এটাই ছিল প্রথম বার সে দেখেছে তার বাবা মাকে ঝগড়া করতে । গলার সর উঁচুতে তুলে কথা বলতে । সুহাসিনী তার ঘরে । পায়ের উপর একটি পা তুলে সে বসে আছে চেয়ারে । সামনের চেয়ারটিতে বসে আছেন বাবা ।

আজ রাতের ঘটনার জন্য বাবা খুব লজ্জিত । ভারাক্রান্ত । তিনি মাথা নিচু করে আছেন । গম্ভীর মুখে বললেন ,

” আজ রাতের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত । “

 

সে রাতে বাবা ও মা দুজনেই আলাদাভাবে সুহাসিনীর সাথে কথা বলেন । একই কায়দায় দুজনে দুঃখ প্রকাশ করেন । বাবা তার ছোট ভাইটিকে কতটা ভালোবাসেন তা বললেন । দাদা দাদির মৃত্যুর সময়ে

তিনি কথা দিয়েছিলেন, ছোট চাচ্চুর দেখাশোনা করবেন সব সময় ।

 

মা বললেছেন তিনি কতটা ভালোবাসেন বাবাকে তার ইস্পাত কঠিন মনোবল ও মহানুভবতার জন্য ।

আমি শুয়ে আছি । মা আমার ঘরে এলেন ।

আমি চোখ বুজে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা ভাবছিলাম । মা আমার কপালে হাত রাখলেন ।

আমি চোখ বুজেও দেখতে পাচ্ছিলাম মা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন । তিনি অন্তর খালি করে আমার জন্য দোয়া করছেন । আমি তৃপ্তির হাসি হাসলাম । বাবার জন্য এখন মন খারাপ লাগছে ।

মায়ের জন্য কষ্ট লাগছে । এ দুজন মানুষ প্রিয় মানুষ ।

অনেক ভালবাসার মানুষ । সব চাইতে বড় বিষয় আমি নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে করি তাদেরকে বাবা মা হিসেবে পেয়ে ।

 

আমি ভাবতে শুরু করলাম, যে কারণে বাড়ির সামনের খোলা জায়গাটিতে বাগান করার পরিকল্পনা।

এটা ছিল একমাত্র মেঘের জন্য । তাছাড়া এই বাগান আমাদের বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে । আমার দেয়া ডিমগুলোর সাথে সে যা করেছে, কেনো আমি তার কথার এখন মূল্য দিব?

 

সুহাসিনী বাগানে কাজ করছে । তার মাথায় কেবল মেঘের কথা খেলে যাচ্ছে । মেঘের কথা মনে হলেই তাঁর খুব রাগ লাগে । সে শরীরের শক্তি প্রয়োগ করে আগাছা পরিষ্কার করছে । আসলে তার হাত কাজ করছে । মাথায় চলছে অন্য কিছু ।

মেঘের দাদাজান এদিকে আসছেন । তিনি দেখতে পেলেন সুহাসিনী ঝড়ের গতিতে আগাছা পরিষ্কার করছে । আগাছার সাথে ফুলের ডালপালা কেটে ফেলছে । সেদিকে খেয়াল নেই । তিনি হা করে এই দৃশ্য দেখে বিস্মিত হলেন ।

 

” তুমি কি আগাছা ছাঁটাই করছো না গাছগুলো কেটে ধ্বংস করছ? “

সুহাসিনী উনার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে ।

সে এই বৃদ্ধ মানুষটিকে ভালো করেই জানেন ।

মেঘের দাদাজান । কখনো কথা হয়নি । ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন সুহাসিনীর কাছাকাছি ।

 

“এই মেয়ে তোমার নাম কি? আমাকে চেনো, আমি

মেঘের দাদাজান । “

 

সুহাসিনী এগিয়ে যায় । মানুষটির সামনে এসে দাঁড়ায় । তারপর মুচকি হেসে বলে ,

“আমার নাম সুহাসিনী ।”

 

তোমরা আমাদের প্রতিবেশী হলেও পরিচয় হলো অনেকদিন পর । এটা অবশ্য আমার দোষ । উচিত ছিল আগেই পরিচিত হওয়া । আমি বারান্দায় বসে প্রতিদিন দেখি তুমি বাগানে কাজ করছো ।

 

“খুশি হলাম দাদু আপনার সাথে পরিচিত হয়ে । “

ভদ্রলোক এগিয়ে গেলেন বাগানের কাছে ।

তিনি ছেঁটে দেওয়া গাছের দিকে তাকিয়ে বললেন,

তুমি কি একই উচ্চতায় সবগুলো গাছ ছাঁটাই করছো?

 

হুম, আমি এমনটাই ভাবছি । তবে বুঝতে পারছি না কিভাবে করব । আপনি কি মনে করেন এগুলো সব

ছেঁটে দিলে ভালো হবে না ?

সুহাসিনী সামনের দিকে ছোট গাছগুলো দেখিয়ে কথাগুলো বললো ।

 

ভদ্রলোক সুহাসিনীর কাছ থেকে পাতা ছাঁটাই করার জন্য কাচিটি হাতে নেন । তিনি ছোট ছড়ানো গাছগুলো দেখিয়ে বললেন,

এগুলো হচ্ছে পাতাবাহার । এই গাছগুলো উপরের দিক থেকে ছেঁটে দিতে হবে । তিনি বগলে চাপ দিয়ে রাখা কাচিটি হাতে নেন । গাছের উপর দিক থেকে ছেঁটে দিতে লাগলেন । সুহাসিনী পাশে দাঁড়িয়ে

দেখছে । মেঘের দাদা এখন সুহাসিনীর দখলে ।

সুহাসিনী খানিকটা ইতস্তত । প্রভাবশালী লোকের বাবা তার সাথে বাগানে কাজ করছেন ।

 

বিষয়টি কেমন অবাস্তব লাগছে । সে সাহস করে বললো, স্যার বলছিলাম যে ..

সুহাসিনীর কথা শেষ না করতে দিয়ে তিনি বললেন,

তুমি আমাকে দাদু বলে সম্বোধন করতে পার ।

তাতে আমি খুশি হবো ।

“দাদু আপনি কি মেঘের কথা মনে করে এখানে এসেছেন? যদি কিছু মনে না করেন, আসলে আমি চাই না আপনি আমাকে কাজে সাহায্য করেন । “

তিনি হাসিমুখে সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

পত্রিকায় তোমার সম্পর্কে লেখা পড়েছি ।তোমার মুরগি বাচ্চা ফুটানো প্রজেক্ট । অসাধারণ ।

আমি তোমার গাছ নিধনের বিপক্ষে প্রতিবাদ পত্রিকায় পড়েছি । আমার গর্দভ নাতিটির উচিত ছিল

তোমার সাথে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া । গাধাটা সেটা না করে স্কুলের বাসে উঠে যায় ।

ফরিদা যোগ দিতে পারত । সে সারা রাত থাকতে পারত অনশনে ।

 

ফরিদা ? সুহাসিনী বিস্মিত হয়ে জানতে চাইল ।

 

আমার স্ত্রী । তোমার দাদি । তুমি আমাকে তার কথা মনে করিয়ে দিলে । সুহাসিনীর মাথায় ঢুকছে না এই প্রবীণ মানুষটির কথা । মেঘের দাদাজানের সাথে প্রায় সপ্তাহ খানেক কাজ করল বাগানে । পুরো কাজের সময়টা তারা গল্প করে কাটিয়েছে।

 

পুরো বাগান জুড়ে কাঠের কেচি বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হলো । দাদাজান যত্ন করে তারকাটা গাঁথছেন ।

হাতুড়ি দিয়ে কাঠের খুঁটি পুঁতে দিচ্ছেন মাটিতে । সুহাসিনী সহকারী হিসেবে কাজ করছে মাত্র ।

নিমগাছ কাটার বিপক্ষে সুহাসিনীর অনশনের গল্প তিনি শুনতে চাইছিলেন কাজের ফাঁকে ।

আর সত্যি বলতে তিনি পুরো বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন । তিনি মনে করেন, এটিও মানুষের মতোই । গাছের প্রাণ আছে ।

একজন জীবন্ত মানুষকে কি মেরে ফেলা যায়?

কিন্তু কখনো কখনো মানুষের কাছে, একটি পূর্ণাঙ্গ বিষয় হয়ে যায় গুরুত্বহীন । আমার কাছেও সেটি ছিল বেশ আকর্ষণীয় ।

 

আমি সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে মানুষজন দেখে আসছিলাম । বুঝার চেষ্টা করেছি তাদের সম্পর্কে ।

তারা আসলেই কতোটা বুঝতে পারতেন নিজেদের কর্ম সম্পর্কে । মেঘের দাদাজান ঠিকই বলেছেন,

অধিকাংশ মানুষই হচ্ছেন ক্ষুদ্র ।

আমার সহপাঠীদের মধ্যে একজনকে মনে করতে পারছিলাম না যে কিনা ছিল মেঘের মতো ।

এই তো সেদিনের কথা যদি বলি, তখনো সে ছিল বহু দূরে, বহু বহু দূরে তার সমগ্র সত্তা থেকে ।

সুহাসিনী সদ্য জন্মানো সবুজ ঘাসের বুকে পানি দিচ্ছে । মনের মধ্যে রয়ে গেছে মেঘ । তার সাথে করা আচরণ । পিছন থেকে মেঘের কন্ঠস্বর ।

পিছন ফিরে তাকায় ।

 

“খুব ভালো কাজ করছো সুহাসিনী । তোমার বাগান দেখতে এখন অসাধারণ লাগছে । চালিয়ে যাও । “

 

“কেমন আছো? সুহাসিনী কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে ।

বাগানের অধিকাংশ কাজ তোমার দাদাজান করেছেন । “

মেঘ চোখ মুখ শক্ত করে বললো,

 

“আমি দুঃখিত তোমার সাথে যা করেছি তার জন্য । “

সুহাসিনী হাতে ধরে রাখা পানির নলটি নীচে রাখে ।

মেঘের দিকে ঘুরে দাঁড়ায় ।

“আমি আসলে বুঝতে পারছি না সমস্যাটা আসলে কি ছিল । সমস্যা যাই হোক, কেনো তুমি আমাকে বলতে পারলে না । বা কেনো খুলে বললে না? “

 

সুহাসিনী তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে আসলেই কি সে দুঃখিত? নাকি সে এগুলো বলছে নিজেকে ভার মুক্ত করার জন্য?

শাহানাজ শাহীন
শাহানাজ শাহীন