চোখতলা / জাকির আবু জাফর
চোখতলা / জাকির আবু জাফর
ব্যাংক যোগে নয় বিকাশ করে দাও তোমার নগদ দৃষ্টি
ক্যাশ করে দেখি-
কী হৃদয় সেলাই করা তোমার দৃষ্টির ইজারে
ভ্রু উল্টিয়ে দেখে নেবো তোমার চোখতলা
কীভাবে ঝরাও তোমার দৃষ্টির শিশির
চোখতলায় দাঁড়াতেই দেখি-
অকারণ কুয়াশায় ভিজে থাকার দাগ
অশ্রুতে ধুয়ে থাকা দৃষ্টির কেয়ারি
মনছেদা দৃষ্টির খোঁচায় যখন হৃদয় ক্ষত
আমি করতেই পারি চোখের মামলা
দৃষ্টি-বাণিজ্যকে হৃদয়-শিল্প করার পক্ষে আমি নই
আমি চাই মনের রাজস্বধারী হৃদয়ের দীর্ঘস্থায়ী চেক
দৃষ্টি-খেলাপী হবার ইচ্ছেও রাখি না আমি
রাজি নই দৃষ্টি-হামলায় জিম্মি হতেও
আমি চাই দৃষ্টি-মাচায় হৃদয়-লতার লকলকে ডগা
যার তরুণ পাতায় লেখা হবে চোখের গল্পটি
বিষাদ আগুনে পোড়া দৃষ্টির ছাই
কুড়িয়ে নেবো বুকের কাছে
ছাইগুলো সুরমা করে সাজিয়ে দেবো চোখের দোকান
দেখো শেষ তর্কেও দৃষ্টিই থাকে বিক্রির শীর্ষে
প্রেমের দৃষ্টিতে নাকি থাকে ক্রসফায়ার
কে হয় খুনের শিকার!
মন নাকি দৃষ্টির পাখি!
যে ই হোক দাউদাউ জ্বলতেই থাকে দৃষ্টির আগুন
চোখ তো হৃদয় শাসিত ক্যামেরা
তোমার দৃষ্টির ছবি তুললেই দেখি-
তোলা হয় মনের ছবি
আর মন সে তো গোপন লীলার ময়ূরী
চোখ দেখে দেখে চোখাতুর আমি
দৃষ্টি-জালে ছেঁকে তুলি মন-জলের মাছ
পৃথিবীর উঠোন থেকে জগতের চোখ দেখে ভাবি-
আহা আমারই আছে কোটি কোটি দৃষ্টিঋণ
এ দুটি চোখের কৃতজ্ঞতায় নতমুখে লিখি-
দৃষ্টির মসনবি
কেননা চোখের দাম চোখ ছাড়া বুঝবে না কেউ!
২। আমিও বৃষ্টির পাঠক
বৃষ্টির অক্ষর থেকে শব্দ তুললেই শুনি হৃদয় ঝরার ধ্বনি
শুনি শূন্যতার শরীর বেয়ে নামা জলের সংগীত
মেঘের হৃদয় যখন প্রাচীন বাঁশির অনলবর্ষী
সন্ধ্যা নয় শুধু মধ্যরাতও তখন মহামগ্ন ধ্যানের আসর
হৃদয়ের তাসবিহ্ যখন বৃষ্টির শ্বাস
অনায়াসে তাকে লিখি জলের ঠোঁটে
কে শোনে ঝরঝরন্ত জলের উচ্চারণ
পাঠের কৌশল দেখে নড়ে ওঠে আমার ঠোঁট
আমার হৃদয় তখন বর্ষণধারী বৃষ্টিবিদ্যালয়
ভেবে বেশ লাগে – আমিও বৃষ্টির পাঠক এক
আমিও হৃদয়ে লিখি বুনোবৃষ্টির নাম
কে যেনো আদেশ করেন- মূর্ছনায় তন্ময় হও
আমি হই,
সারাটা শরীর ছেঁকে তন্ময় আনি হৃদয়ের কাছে
সন্তর্পণে হৃদয়টি গুঁজে রাখি বৃষ্টিবীণায়
তারপর হৃদয়তারে বেজে ওঠা সুর
সারারাত খেলে নির্জন কুহরে
খুব সহজেই নির্জনতার হয়ে উঠি আমি
আবার বলেন- শোনো এই বৃষ্টিতেই ঝরে আত্মার কেরাত
জানোনা প্রতিটি ফোঁটার শরীরে লেখা উদগমের আদেশ
মেঘের হৃদয় থেকে আমার হৃদয় খুব দীর্ঘ পথ নয়
মন-কুঞ্জে তাই জমে বর্ষণের চিরন্তন উদাস
কে আছো, এমন উদাসী নির্জনে নিজেকে
ভেজায় সহসা
উচ্ছল উদ্যম আর উল্লাসের ঝরঝরে উৎসবে
হৃদয় বিছিয়ে বসে একাকীত্বের পাশে
মেঘের হৃদয়গুলো ঝরে পৃথিবীর হৃদয়ের কাছে
আর হৃদয় মানেই অনন্তের তসবিহ্ রাখার সিন্দুক
দেখি পৃথিবীর নদীগুলো বৃষ্টির প্রাচীন গুদাম
সারাটা জমিন যেনো একান্ত বিছানা
পাহাড়গুলো সমর্পিত শিথান
পাঠের আনন্দ এঁকে মন আমার অনন্তের স্মারক
Facebook Comments Sync