অভিজাত ব্লাক প্রিন্স
অনুগল্প
অনেক চেষ্টা আর যত্নের পরে ব্লাকপ্রিন্স গোলাপের ডালটাতে অবশেষে কচি পাতা উঁকি দিতে দেখে মার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বাগানে কয়েক রকমের গোলাপ থাকলেও একটা ব্লাকপ্রিন্স গোলাপ গাছের খুব শখ ছিলো মার। বেশ কয়েকবার লাগাবার পরেও কোন বারই বাঁচেনি। শত আদর যত্ন পেয়েও আভিজাত্যের গর্বে কেন জানি ওরা মুখ ফিরিয়ে নিতো।
তবে এবারের ব্লাকপ্রিন্সটা মাকে নিরাশ করলো না। দেখতে দেখতে সেও অন্য গোলাপদের মতোই তাদের সাথে বাগানে তার নিজের স্থান করে নিলো।
মা খুব আগ্রহ নিয়ে গাছটির দিকে রোজ তাকায়, আদর করে আর সেই সাথে অপেক্ষা করে কবে গাছটিতে ফুল ফুটবে?গাছটিও মনে হয় মায়ের মনের কথা পড়তে পারে। সেও বাতাসে তার কচি কচি ডাল নেড়ে মাকে ইশারায় তার ভাষায় কি যেন বোঝাতে থাকে।
এক সকালে মা বাগানে বসে গুণ গুণ করে গান গাইতে গাইতে খুরপি দিয়ে ব্লাকপ্রিন্স গাছের গোঁড়াটি নিড়িয়ে দিচ্ছিলো। পাশেই মার আদরের মুরগিটা তার সদ্য ডিম থেকে ফুটে বের হওয়া বাচ্চাদের কীভাবে মাটি থেকে খাবার খুঁটে খুঁটে তুলে খেতে হয় তা শেখাচ্ছিলো আর মাঝে মাঝে কুক কুক শব্দে মাথার ওপরে কাক বা চিল ছোঁ দিতে এলে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হবে সতর্ক করে দিচ্ছিলো।
বাবা পেপার হাতে বারান্দার ইজিচেয়ারে বসে সেদিনের পেপার পড়ছিলো।
এমন সময়ে ব্লাকপ্রিন্স গাছের গোড়ায় কোত্থেকে একটা সাপ এসে মুরগির বাচ্চাদের দিকে জুলজুল করে তাকিয়ে আছে দেখে মা । মুরগিটা জোরে জোরে কক কক করে উঠতেই মা সেদিকে ফিরে তাকিয়ে ভয়ে বিবর্ণ হয়ে সাপ , সাপ বলে চিৎকার করে উঠলো।
মার চিৎকার শুনে বাবা হাতের পেপারটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সাত তাড়া তাড়ি ঘরের কোনা থেকে লাঠিটা নিয়ে বাগানে ছুটে গিয়ে দেখে ব্লাকপ্রিন্স গাছের গোড়ায় সাপটি ফণা তুলে দাঁড়িয়েছে। যে কোন মূহুর্তে মাকে ছোবল দিতে পারে।
বাবা বিন্দুমাত্র মাত্র দেরি না করে সাপের মাথা লক্ষ্য করে লাঠি দিয়ে সপাটে দিলো এক বাড়ি। সেই এক বাড়িতেই সাপটা তো মরলই সেই সাথে মার সাধের ব্লাকপ্রিন্স গোলাপ গাছটাও মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। মা নির্বাক হয়ে সেই অভিজাত গোলাপের থ্যাঁতলানো চারাটিকে তুলে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। দু চোখ থেকে নীরবে গড়িয়ে পড়ছে জল।
Facebook Comments Sync