আধুনিক জীবন/ তাজনাহার মিলি

আধুনিক জীবন

আধুনিক জীবন

আধুনিক জীবন/ তাজনাহার মিলি

 

এখন  মানুষ কর্পোরেট রোবট। অনুভূতিহীন। সত্যি কী নিজের বেলায় তা গ্রহণযোগ্য! শরীর অসুস্থ থাকলে জীবন থমকে দাড়ায়। মানুষ পশুপাখি এবং গাছপালার শরীরের ভিতরের কার্যপদ্ধতি শারীরিক মানসিক এবং ব্যবহার সম্বন্ধীয় যা প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলে, তাকে এক কথায় বলা হয় বায়োলজিক্যাল ক্লক। আমাদের শরীরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এ অদৃশ্য ঘড়ি জানান দেয় কখন আমাদের খেতে, ঘুমাতে বা জাগতে হবে। দুপুরে রোজ একই সময়ে খিদে পাওয়া, রাত্রিবেলা একটা নির্দিষ্ট  সময়ে ঘুম পাওয়া, নিজের দেশের চৌহদ্দি পেরোলে অনেকের জেট ল্যাগে ভোগা। সবই বায়োলজিক্যাল ক্লক – এর জন্য। দৈনন্দিন জীবনের সাথে, বৃহত্তর ক্ষেত্রেও এ ঘড়ির বড় ভূমিকা আছে। মেয়েদের মেনস্ট্রুায়াল সাইকেল বা ঋতুচক্র জৈব ঘড়ির নির্দেশে চলে।

মাতৃত্ব একটা সময় ছিল কিছুটা চিন্তাহীন। এখন ফাষ্টিলিটি এবং ফাইব্রয়েড প্রায় বয়স্ক মেয়েদের ফেস করতে হচ্ছে। সাধারণ ঘটনা জরায়ুর ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড। এটি বিনাইন টিউমার।

মহিলাদের  ৫০ শতাংশই এখন ইনফার্টাইল ফাইব্রয়েডের আক্রান্ত। অনেক ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সির সমস্যার অন্যতম কারণ হয়। উল্লেখ্য এগুলি সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড এবং জরায়ুর দেয়ালে বেড়ে ৬ সেমির চেয়ে বড় হয়। তখন  ফ্রাইব্রয়েড সাভিক্সের স্থান পরিবর্তন করে সাধারণত ফলত: স্পার্ম সঠিক জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় না। জরায়ুর আকৃতিগত পরিবর্তন ও স্পার্মের গতিপথে বাধা হয়। ফ্যালেপিয়ান টিউবে ব্লকেজ ঘটাতে পারে। ফাইব্রয়েড ইউটেরাইন ক্যাভিটিতে রক্তপ্রবাহকে প্রভাবিত করে যেখানে ভ্রণ প্রতিস্থাপিত হয়, ফলত: ৯০% মিসক্যারেজ ঘটায়।

চিকিৎসা : পেলভিক আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে ফ্রাইত্রয়েডের উপস্থিতি বোঝা সম্ভব। গজও পরীক্ষার মাধ্যমে অবস্থান এবং সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব। মাসিক পিরিয়ডের সময় যাদের অতিরিক্ত ব্যথা হয়, সেখান থেকেই বিয়ষটি গুরুত্বের সাথে নিয়ে, বিষেজ্ঞদের সাহায্য নেয়া উচিত। হেভি ব্লিডিং এ সূত্রপাত বোঝা যায়। (২) পেটে ব্যাথা (৩) কনস্টিপেশন (৪) তলপেটে ভারী ভাবের সমস্যা (৫) টয়লেট স্বাভাবিক চেপে রাখারও সমস্যা দেখা যায়। ওভার ওয়েটদের মধ্যে প্রবণতা বেশি দেখা যায়। মোট কথা যখন ম্যাচুরিটি  আসে তখনই মেয়েদের সম্ভাবনা দেখা দেয় বেশি।

সাধারণত : ৬ সেমি: চেয়ে বড় গুলি মায়ামেকটসিম করে। ল্যাপ্রোস্কপি হিমটেরোস কপি বা ওপেন প্রসিডিওরের মাধ্যমে মায়োমেকটসি করা যায়। অপারেশনের ৬ মাস পর মা হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। টেস্ট টিউব বেবি এদের ক্ষেত্রে ভাল ও সহজ পদ্ধতি।

বেশি বয়সে মাতৃত্ব, উচ্চশিক্ষা অর্জন করে বিয়ে করতে বয়স বেড়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে সন্তানধারণ বিয়ের অনেক দেরিতে করছেন। শারীরিক কারণ অনেক ক্ষেত্রে দায়ী থাকে। মেয়েদের জন্মের সময় সাধারণত দুটি ওভারিতে ২ কোটি ডিম্বানু নিয়ে পৃথিবীতে আসেন। প্রতি মাসে কিছু ডিম্বানু খরচ হয়। ১২-৫০ বছর বয়সে প্রতি মাসে গড়ে ১৫/২০টি ডিম্বানু ম্যাচিউরিটি লাভ করলে মাত্র একটি অভ্যুলেটেড হয়। তাহলে বছরে ১২ বার ওভ্যুলেশন হয়। ৩৮ বছরে মোট সম্ভবত: প্রায় ৪৫০ বার ওভ্যুলেশন হয়।

তবে প্রেগনেন্সি সময়  বেস্ট ফিডিং করানোর সময় বা আর্লিমোনেপেজের সময় ওভ্যুলেশন কিছু বন্ধ থাকতে পারে, এ সংখ্যক বাদ দিয়ে প্রায়ই সবই নষ্ট হয়ে যায়। ব্যতিক্রম যাদের যথেষ্ট  ডিম্বানু থাকে তারা বেশি বয়সে প্রেগনেন্সি ধারণ করতে পারেন।

বয়স বাড়ার সময় ডিম্বানুর গুণমান খারাপ হতে পারে, মিস ক্যারেজের সম্ভাবনা বাড়ায়। গর্ভস্থ সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও জন্মাতে পারে। নানারকম ব্যস্ততায় দেরি করে বিয়ে সন্তানধারণে দেরি করেন। শারীরিক কারণে প্রেগনেন্সি দেরীতে ধারণ করে। জন্মের সময় সাধারণত : দুকোটি ডিম্বানু নিয়ে জন্মান  একজন কন্যা শিশু, কিন্তু সন্তান-সুখী পরিবার এ বাধা হতে পারে:

এক : জ্যাঙ্ক ফুড – নারীদের নানা ধরণের ওভারি সিনড্রোম জরায়ু সংক্রান্ত জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফলত: ডিম্বানু সংখ্যা কমাচ্ছে। দূষণ/পলিউশন এ আক্রান্ত হয়ে বন্ধ্যাত্ব-এর কবলে পড়ছেন।

দুই : স্মোকিং

তিন : সফট ড্রিংকস

চার : ব্যায়ামের অভাব আদুরে শরীর

পাঁচ : লেট নাইটস ঘুম কম ঘুমানো

ফলত : এর ফলে  এক : কম বয়সী মহিলাদের এক বা একাধিক টিউমার কেটে বাদ দিয়ে প্রেগনেন্সির উপযোগী করা যায়। একে মায়োমেষ্টমি বলে।

দুই : বেশি চিকনদের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা অত্যন্ত কমে যায়।

তিন : ওজন বেশি ও প্রেগনেন্সির পথে বাধা হতে পারে।

ব্রেকফাস্ট সকাল ৮টার মধ্যে করতে হবে। সুস্থ প্রেগনেন্সির জন্য প্রয়োজন। ফলমূল খেলে সুগার নিয়ন্ত্রণ থাকে। সকালে সঠিক সময়ে না খেলে সুগারের মাত্রা তারতম্য  হতে পারে। খুব বেশি চা কপি/ সিগারেটের একদম নয়। নিয়মিত বৈজ্ঞানিক ডায়েটিং হরমোনের ভারসাম্য ধরে রাখা। যা প্রয়োজন মাতৃত্বের ধারণে। মাত্রারিক্ত ইস্ট্রোজেন বের হলে ডিম্বানু বা এগ বাড়তে পারে না।

পেশাগত  স্ট্রেসও অনেক ক্ষেত্রে বাধা হয়। ডিম্বানু মাত্র ১২/১৪ ঘন্টা জীবিত থাকে অল্প সময়ে স্পার্ম এর উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন।

স্বামীর নার্ভ সংক্রান্ত সমস্যাও স্পাইনাল কডের আঘাত।

এসব শারীরিক সমস্যা ও অন্যান্য জটিলতার বাধা পেরিয়ে কৃত্রিম উপায়ে সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। সারোগাসি মাদার ও অন্যান্য বিষয় আছে।

প্রকৃতির নিয়মে মা/মাতৃত্ব প্রাপ্তির হওয়ার বয়স আছে সুতারাং প্লানিং এখন তৈরি করুন। ফলিক এসিড, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, পর্যন্ত পরিমানে প্রয়োজন মাঝে ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড যা ডিম্বানু ও স্পার্ম কোয়ালিটি ভালো করে।

মানসিক টানাপোড়েন থেকে বেরিয়ে সচেতনভাবে সন্তান আগমনের প্রস্তুতি সুসন্তান, সুস্থ সন্তান। নিজের যতন   নিয়ে শারীরিক মানসিক বিড়ম্বনা দুর করুন। বন্ধ্যাত্ব সমস্যা দূর হোক। ডিপ্রেশন দূর করুন। একটি মেয়ে স্বামীর হাত ধরে নুতন পরিবারে পরিবেশে। বৈরিতার মুখোমুখি হতে হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভালবাসা দুজনের নিবিড় বন্ধন। কারণ বিয়ের উদ্দেশ্যই হল বিশেষ একজনের সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে উঠা। গুণ/দোষ আত্মস্থ করা, ভাল বন্ধুত্ব  মনোবল আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে সংবেদনশীল/ সহকর্মী হয়ে উঠলেই ৯৯ ভাগ দম্পতির সুস্থ/সুন্দর সন্তান ঘরে আগমনে আনন্দের জোয়ার আসবে।

রাস্তাঘাট তীব্র যানজট/ মানব জট এ আক্রান্ত। সারাদিন অতি ব্যস্ততার পর নিজের প্রতি খেয়াল প্রতিদিন সব মানুষের করা উচিত। নিজেকে ভালবেসে, প্রকৃতিকে ভালবেসে- চারপাশের মানুষকে ভালবেসে চলতে পারলে চিন্তাহীন শরীর নামক যন্ত্রের প্রতি ছক কেটে রুটিন করে বলি আমরা সুস্থ দেহে প্রশান্ত মনে দীর্ঘায়ু নিয়ে বাঁচতে চাই। আগামীর সুসন্তানকে ধারণ করবো আমরা।