সূর্য সেন/  কাজী মুজাহিদুর রহমান

সূর্য সেন

সূর্য সেন

সূর্য সেন/  কাজী মুজাহিদুর রহমান

 

যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের বিজ্ঞান শাখা এবং তার সাথে দুইটি হোষ্টেল ভবন আমাদের পাড়ার প্রবেশ মুখে। ১৯৭১ সালেই এগুলো পরিত্যক্ত হয়। ১৯৭২ সালের শুরু থেকে এটা শরণার্থীদের ট্রানজিট ক্যাম্প হিসাবে ব্যবহৃত হতো। তখন ভারত থেকে আসা শরণার্থীরা ভারতীয় ট্রাকে করে প্রথমে এখানে আসতেন, পরে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। ‘৭২ সালের এপ্রিল মাসে হঠাৎ করে দেখলাম কলেজের গেটে ‘স্বাগতম সূর্য সেনের সহযোদ্ধারা’ লেখা ব্যানার। বিকালে দেখলাম ৩/৪ বাস ভর্তি হয়ে লোকজন কোলকাতা থেকে আসলেন। কলেজ ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত ক্লাসরুমগুলোতে ঐ রাতে তাদের থাকার ব্যবস্হা করা হয়েছিল। তাদের একজনের সাথে আলাপ করে জানলাম, কোলকাতাকেন্দ্রিক তাদের সংগঠনের উদ্যোগে এই যাত্রা। তারা এখান থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম যাবেন। সেখানে মাস্টার দা’র আবক্ষ মূর্তি স্হাপন করবেন। পূর্ব পুরুষের ভিটা দেখাসহ আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করবেন। কেউ কেউ আবার নিকট আত্মীয়দের সাথে নিয়ে এনেছেন। একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, অভ্যাগতরা সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তবে কী অন্য কোন ধর্মের লোক সূর্য সেনের বিপ্লবী দলে যোগ দেননি? তার কারণ, এই লেখায় খোঁজার চেষ্টা করেছি।

 

সেই সময় সূর্য সেন সম্পর্কে আমার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। তাই তাঁর জীবন ও বিপ্লবী কর্মকাণ্ড  নিয়ে লেখা বই খোঁজা শুরু করলাম। কিছু দিন পর পেয়েও গেলাম একটা বই। সেটা ছিল কুন্দ প্রভা সেনগুপ্তার ‘কারা স্মৃতি’। এই কিশোরী মাত্র ১৪ বৎসর বয়সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিপ্লবী দলে যোগ দেন। বিপ্লব ব্যর্থ হবার পর গ্রেফতার হন। বিচারের পর সুদীর্ঘ সময় কারাভোগ করেন। রাজশাহী জেলে কল্পনা দত্তের সাথে একসাথে ছিলেন। সুতরাং নিজ চোখে দেখা ঘটনা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি পরে বইটা লেখেন। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার শ্রীপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন নামকরা কবিরাজ। চট্টগ্রাম কোতয়ালী থানার সামনে এক ভবনে তার বাবার চেম্বার ছিল। কল্পনা দত্ত আর তিনি ছিলেন একই গ্রামের মেয়ে। উল্লেখ্য, সূর্য সেনের বেশির ভাগ যোদ্ধারা ছিলেন পটিয়া ও বোয়ালখালী থানার অধিবাসী। 

 

বাংলায় প্রথম সার্থক উপন্যাস লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘আনন্দমঠ’ রচনা করেছিলেন। তাঁর লেখা ‘দেবী চৌধুরাণী’ সহ এই উপন্যাস ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে এক বিরাট ভূমিকা রেখেছে। আনন্দমঠ উপন্যাস লেখার তিন বৎসর পূর্বে তাঁরই লেখা গান ‘সুজলং সুফলং… বন্দে মাতরম্’ তিনি এই উপন্যাসে সংযোজন করেন। এই গান  লেখার ৭০ বছর পরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এটাকে তাদের দলীয় সঙ্গীত হিসাবে ব্যবহার করে। বাংলার বিপ্লবীরা এই উপন্যাসকে তাদের প্রেরণা পুস্তক হিসাবে মনে-প্রাণে ধারণ করেছিলেন। আনন্দমঠ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র সশস্ত্র সন্যাসীদের দিয়ে সন্ত্রাসী কাজ চালিয়ে একটি হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের উপায় হিসাবে দেখেছিলেন। এই আদর্শকে লালন করে কোলকাতায় অনুশীলন সমিতি নামে গুপ্ত সশস্ত্র সংগঠন গড়ে ওঠে ১৯০২ সালে। যার উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ করা। এর কিছু দিন পরে ঢাকায়ও অনুশীলন সমিতি গঠিত হয়।  বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের উক্ত গানের অংশ ‘বন্দে মাতরম’ তাঁদের স্লোগান হয়। ঋষি অরবিন্দ সন্যাস গ্রহণের আগে ইন্ডিয়ান এডমিনিসট্রেটিভ সার্ভিসের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি গোপনে অনুশীলন সমিতি চালাতেন। তাঁদের বাড়িতেই গোপনে প্রশিক্ষণ হতো। ব্রিটিশ পুলিশের তদন্তে তিনি গ্রেপ্তার হন। কিন্তু ততদিন পুরো মাত্রায় সন্যাসী হয়ে যান। তবে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একান্ত প্রচেষ্টায় শাস্তি এড়াতে সক্ষম হন।

 

সূর্য সেন (প্রকৃত নাম: সূর্য কুমার সেন) জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে। কোলকাতা থেকে বি এ পাশ করে চট্টগ্রামে ফিরে এসে স্কুলে অংকের শিক্ষক হয়েছিলেন। এর কারণে সবার কাছে হয়ে যান মাস্টারদা। এক সময় বিয়েও করেছিলেন পুষ্প কুন্তলা দত্ত নামে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে, কিন্তু দেশের ডাকে তাঁর সংসারের বাঁধন আলগা হয়ে যায়। তিনি ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান কংগ্রেস কর্মী। ১৯২৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর আগের বছর তিনি চট্টগ্রাম জেলার প্রতিনিধি হয়ে লাহোর সম্মেলনে যোগ দেন এবং সেখানেই মুসলিম লীগ ও কংগ্রসের মধ্যে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটে যায়। এর মধ্যে হিন্দু মহাসভার উগ্রবাদী নেতা মদন মোহন মালব্যের সাথে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। বঙ্কিমচন্দ্র যে রাষ্ট্রচিন্তা করেছিলেন, সম্ভবত সূর্য সেন সেই দর্শনে প্রভাবিত হন। এজন্য তিনি গুপ্ত সশস্ত্র সংগঠন তৈরি করেন। এই কাজে তিনি ব্যবহার করেন অল্পবয়সী ছাত্রদের। তাদেরকে যথাযথভাবে মোটিভেট করা থেকে শুরু করে অস্ত্রচালানোর প্রশিক্ষণ পর্যন্ত দেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের কোনরকম মতামত না নিয়েই তাঁর একক নেতৃত্বে গড়ে তোলেন এক গুপ্তবাহিনী, যার নাম দেন Indian Republican Army। 

 

অত্যন্ত  গোপনীয়তার সাথে তাদের রিক্রুটমেন্ট হতো। কুন্দ প্রভা সেনগুপ্তা তাঁর বইতে লিখেছেন-দেশ সেবার দীক্ষা নেবার উদ্দেশ্যে সূর্য সেনের সাথে দেখা করলে, তিনি বললেন ‘পূজো করতে হবে বুকের রক্ত দিয়ে’। এই পূজোর বিবরণ দিতে গিয়ে কুন্দ প্রভা সেনগুপ্তা লিখেছেন- আমি পিছু পিছু চললাম, কিছু দূর এগিয়ে একটা মন্দিরের কাছে দুজনই পৌঁছালাম। দরজা খোলাই ছিল। মাস্টারদা আর আমি ভিতরে ঢুকলাম। তারপর তিনি টর্চ জ্বালালেন। দেখলাম ভীষণ এক কালী মূর্তি। মাস্টারদা এক হাতে একটা ডেগার বের করে আমার হাতে দিলেন, বললেন ‘মায়ের সামনে বুকের রক্ত দিয়ে পূজো করো, ওখানে বেল পাতা আছে। বুকের মাঝখানে চামড়া টেনে একটুখানি কাটার সাথে সাথে কয়েক ফোটা রক্ত বের হলো। তা বেল পাতায় করে মাস্টার দা’র কাছে গেলাম। আমি মায়ের চরণে রক্ত আর মাথা রেখে প্রতিজ্ঞা করলাম (পৃ-১৪৩, কারা স্মৃতি)।

 

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল তাঁর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে শুরু হয় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ। প্রথমে নন্দন কাননে টেলিফোন ও টেলিগ্রাম সিস্টেম ধ্বংস করা, এরপর রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্হাকে বিচ্ছিন্ন করা, একই সাথে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুট করা ও দামপাড়া পুলিশ লাইন নিজেদের দখলে নেয়ার পর বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ে একত্রিত হয়েছিলেন। মাত্র তিন দিনের জন্য তাঁরা চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছিলেন। ব্রিটিশ আর্মি জালালাবাদ পাহাড়ে তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায়। ১২ জন বিপ্লবী নিহত হন মেশিনগানের গুলিতে। আহত হন বেশ কয়েকজন, বাকিরা পালিয়ে যান। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবার তারা আক্রমণ করেন পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবের ওপর, সেখানেও তাঁরা কাঙ্ক্ষিত  সাফল্য লাভে ব্যর্থ হন। পুলিশ তাঁদেরকে ঘিরে ফেলে, তবে ধরা পড়ার আগে প্রীতিলতা ওয়েদ্দেদার আহত হয়ে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহনন করেন। এই সাথে শেষ হয় ‘IRA’-এর সশস্ত্র বিপ্লব। ব্রিটিশ পুলিশ বিপ্লবীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনে। স্পেশাল ট্রাইবুনালে সূর্য সেন ও তাঁর সহযোগী তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির সাজা হয়। বাকিদের কারো দীপান্তর (আন্দামান জেল), যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। ফাঁসীর আগে সূর্য সেনের ওপর নির্যাতন করে হাতুড়ি দিয়ে তাঁর দাঁত ও হাত পায়ের হাড় ভেঙ্গে দেওয়া হয় এবং হিন্দু ধর্ম রীতি অনুযায়ী সৎকার না করে, জাহাজে করে মৃতদেহ নিয়ে ভারী লোহা বেধে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়। ১৯০৮ সালে ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি এবং ১৯৩৪ সালে সূর্য সেনের ফাঁসির পর ইংরেজ সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে করা গুপ্ত সশস্ত্র সংগ্রাম নির্মুল করে ফেলে। সেই সাথে সমাপ্তি ঘটে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসের রাষ্ট্রচিন্তা। 

 

সূর্য সেনের সশস্ত্র বিপ্লব তিন দিন পরে চতুর্থ দিনে কেন ব্যর্থ হলো? প্রথম কারণ, সাধারণ জনগণ এমনকি নিজ দলের সমর্থনের অভাব, তাঁরা জানতেন না যে এমন একটা সংঘর্ষ ঘটতে যাচ্ছে। যখন জেনেছেন, তখন এর সাথে যুক্ত হননি। ফলে এক প্রকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেন। সেখানে আগে থেকে কোন রকম খাদ্য, পানির সংস্হান ছিল না, ফলে শেষ দিন পর্যন্ত অভুক্ত থেকে তাঁদেরকে যুদ্ধ করতে হয়। দ্বিতীয়ত,  যথেষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি। অস্ত্রাগার লুট করে প্রচুর অস্ত্র  পেলেন, কিন্ত তন্ন তন্ন খুঁজেও তাঁরা গুলি পেলেন না। অস্ত্র পুলিশ লাইনে থাকলেও তার গুলি গোপনে রাখা ছিল কয়েক মাইল দূরে হালিশহরে। তৃতীয়, সঠিক পরিকল্পনার অভাব। সাফল্য আসার পর কিভাবে সাধারণ মানুষকে নিয়ে যুদ্ধ এগিয়ে যেতে হবে, সে ব্যাপারে কোন ধারণা ছিল না কিংবা ব্যর্থ হলে, কোথায় আত্মগোপন করে যুদ্ধ এগিয়ে নিতে হবে সে কৌশলও ছিল না। চতুর্থত, এক দল প্রশিক্ষিত ও পেশাদার বাহিনীর বিপক্ষে তিনি যুদ্ধে নেমেছিলেন একশরও কম অল্প বয়স্ক ছাত্র-যুবক নিয়ে, ফলে বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে পড়ে। সর্বোপরি সংগঠিত শক্তির বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে শুধু চট্টগ্রামে এই ধরণের যুদ্ধ করলে তার ফলাফল কি হতে পারে কিংবা কি retaliation/ প্রত্যাঘাত আসতে পারে তা আগে থেকে অনুমান করতে না পারা। ইংরেজ সরকারের পক্ষ থেকে পরে পুরো ঘটনার প্রশাসনিক তদন্ত করা হয়েছিল, তাতে জানা যায় যে কোন মুসলিম ব্যক্তি, এমনকি কংগ্রেসের দু-এক জন নেতা ছাড়া সাধারণ কর্মীরা জড়িত ছিলেন না। 

 

ঐতিহাসিক এই ঘটনা নিয়ে ভারতে বেশ কয়েকটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তার মধ্যে যে তিনটি আমার দেখার সুযোগ হয়েছে, তা’হলো ১৯৪৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কোলকাতার বাঙলা ছবি ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন’। এটি অত্যন্ত নিম্ন মানের চলচ্চিত্র।  ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। এর পর আছে মনোজ বাজপেয়ী ও নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর ‘চিটাগং’ ছবি। সে ছবির নির্মাতা বেদাব্রত পাইন। আমার ধারণা তিনি অগ্নিযুগের ইতিহাস নিয়ে যথাযথ গবেষণা করেননি, ফলে এটা মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র হতে পারেনি। সবশেষে উল্লেখ করতে পারি, আশুতোষ গোয়ারিকারের ১৯১০ সালের ছবি ‘খেলে হাম জী জান সে’। যেখানে অভিনয় করেছেন অভিষেক বচ্চন ও দীপিকা পাড়ুকোন। মানিনী চ্যাটার্জীর Do and Die the Chittagong Uprising 1930-34 নামে যে পুস্তকের ওপর ভিত্তি করে এই ছবি বানানো হয়েছে, তা লোকে মুখে শুনে লেখা। ভারতে বসে কয়েকটা লাল রঙের দালান পিছনে রেখে সুটিং করে চট্টগ্রাম বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। নেই বাস্তবের সাথে তার কোন মিল। আসেনি চট্টগ্রামের পাহাড়, নদী, সমুদ্র কিংবা প্রকৃতি। সেই সময়ের কোন ঐতিহাসিক স্থাপনাও আনা হয়নি। এমনকি কুন্দ প্রভার চরিত্রটাও আসেনি। 

 

সূর্য সেনের যে আবক্ষ মূর্তিটার ছবি এখানে ব্যবহার করেছি, যেটা চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লায় জে, এম, সেন হল প্রাঙ্গণে স্হাপন করা হয়েছে।

কাজী মুজাহিদুর রহমান
কাজী মুজাহিদুর রহমান
%d bloggers like this: