আজ বসন্ত – ফিরোজ শ্রাবন

ফিরোজ শ্রাবন

ফুল ফুটুক, আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত। প্রচন্ড শীতের রাতগুলো রাস্তার ভাসমান মানুষেরা  দুহাতে সরিয়ে দিতে চায়। বৃদ্ধরা বলে ওঠে, যাক, এবারের মত হয়ত বেঁচে গেলাম। সবাই চায় বসন্ত আসুক।

তরুণ তরুণীদের অপেক্ষার  অবসান হল । কারণ, আজ বসন্ত। শীতের তীব্রতা সরিয়া দখিনা হাওয়া  গায়ে লাগিয়ে তারা গাইছে, আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায় । তারা আজ বাঁধাহীন । নদীর জোয়ারের মত আজ তারা নিজেকে বাসন্তি রঙে সাজিয়ে বসন্তকে বরণ করার জন্য ছুটে চলছে প্রিয় মানুষের হাত ধরে। কেউ বা আজকেই প্রথম কোন মানুষের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।  হয়ত সে হলেও হতে পারে প্রিয়তম বা প্রিয়তমা। আজকের বসন্ত যেন সেই সুযোগটাই করে দিচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাএ- ছাত্রীরা আজ আর নিজেকে আটকাতে পারছে না। কারণ ফাগুন যেন মনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তবে দয়া করে কেউ ফায়ার বিগ্রেডকে খবর দেবেন না। বুঝতেই তো পারছেন, এ আগুন বসন্তের। কোন সর্টসার্কিট থেকে নয়। মন দেয়া নেয়ার এই দিনে কত মনের যে মিলন ঘটবে। কত প্রিয়মুখ যে প্রিয়মুখীর জন্য পথ চেয়ে থাকবে তার অন্ত নেই। আবার কেউ যদি কারো মন  কারো কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে দেয় তাহলেও বসন্তকে অভিশাপ দিয়ে লাভ নেই। তবে এই বসন্ত হয়ত তার জন্য সারাজীবনের দুঃস্মৃতি হয়ে থাকবে। টেলিফোনে কোথায় যে তাকে আসতে বলি, সবখানেই তো

বসন্তের আভাস। যে দিকে তাকাই সেদিকেই যেন জীবন্ত ফুলের সমাহার । আর যদি প্রিয়মুখীর ফোনে ফোন করে তাকে না পাওয়া যায় তাহলে এ জীবন অর্থহীন। শুনেছি এক মাঘে শীত যায়না কিন্তু এক বসন্তে কিন্তু ভালবাসা হারিয়ে যায়। কারণ ভালবাসা তো শীত নয় । আজ কবি যেমন তার লেখনিতে বসন্তকে নিয়ে লিখবে কবিতা, গায়ক গাইবে গান, তেমনি বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা যেন স্মৃতির বাগানে পায়চারি করতে থাকবে। আর আজকে যাদের মনের মানুষ পাশে নাই তারা হয়ত মোবাইল ফোনে দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করবে। ভেজালের ভীড়ে বসন্ত যেন আজ খাটি মানের নিশ্চয়তা। গ্রাম থেকে নিয়ে আসা একগ্লাস খাঁটি দুধ খেয়ে বাড়ির কর্তা যেমন ফোঁকলা হাসি হাসে । তেমনি প্রতিটা বসন্তের সকাল আমাদের হৃদয়ে খাঁটি সুখের দোলা দেয় । প্রতিটা বসন্ত যদি আমাদের সবার মনকে রাঙিয়ে দেয় ,তবে তাই হোক। আর যদি এ বসন্ত রঙিন স্বপ্নগুলো ফিকে করে দেয় তবে আগামীর বসন্ত নিশ্চয়ই সুখের কোন বারতা নিয়ে আসবে সেই অপেক্ষায়।