সত্যেন্দ্রনাথ দে পরিচালিত " ধ্রুব

কাজী নজরুল ইসলাম ও সত্যেন্দ্রনাথ দে পরিচালিত ” ধ্রুব ” ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৩৪ সালের পহেলা জানুয়ারি ক্রাউন টকী হাউসে। 

কাহিনি:  মহাকবি গিরিশচন্দ্র ঘোষ, সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম, আলোকচিত্রী:  টমাস মার্কনী।

পায়োনীয়ার ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত ” ধ্রুব ” ছবিতে অভিনয় করেছিলেন:কাজী নজরুল ইসলাম: নারদ,মাষ্টার প্রবোধ:  ধ্রুব,নিত্যানন্দ ঘটক:বিষ্ণু,কুঞ্জলাল চক্রবর্তী:  মহাদেব,জয়নারায়ণ মুখোপাধ্যায়: উত্তানপাদ,সত্যেন্দ্রনাথ দে: মন্ত্রী,কার্তিক চন্দ্র দে: বিদুষক,মিস ভায়োলেট:  লক্ষ্মী,পারুলবালা।  মুনী পত্নী,আঙ্গুরবালা দেবী: সুনীতি,মিস শরিফা : সুরুচি। 

 

বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের অভিনয় আঙ্গিনায় যে সব বরণীয় মানুষ এসেছিলেন, যাঁদের অভিনয় এবং প্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতায় চলচ্চিত্র আঙ্গিনা এক তীর্থে রূপান্তরিত হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে একটি উজ্জ্বলতম নাম কাজী নজরুল ইসলাম। ” ধ্রুব ” ছবিতে তাঁকে প্রথম অভিনেতা রূপে পাওয়া গিয়েছিল।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩৬০ বঙ্গাব্দের ১১ ই জৈষ্ঠ্য বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে। 

 

ধ্রুবর কাহিনি: 

পুরাকালে উত্তানপাদ নামে এক রাজা ছিলেন। তার সর্বগুণালঙ্কৃতা মহিষী সুনীতি পরম শ্রদ্ধাভরে নিত্য বিষ্ণু বিগ্রহের পূজা অর্চনা করতেন। নারায়ণ তাদেরকে কোন  ঐশ্বর্য দিতে কার্পণ্য করেন নি – ছিল না কেবলমাত্র রাজ্যের ভাবী উত্তরাধিকারী – পুত্র। পতিপরায়ণা সুনীতি সুরুচি নাম্নী এক সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে রাজা উত্তানপাদের আবার বিয়ে দিলেন। কিন্তু বহুদিন গেল সুরুচিরও কোন সন্তান হলো না। এক সময় সুরুচি চালাকি করে রাজাকে  বশীভূত করে সুনীতিকে বনে নির্বাসন দিল। 

রাজা একদিন স্বপ্নে দেখলো, তার পূর্বপুরুষেরা মৃগয়ালব্ধ মাংসে তাদের তর্পণ করতে বলছে। সুতরাং রাজা মৃগয়ায় গেল। সেখানে ভীষণ ঝড় – বৃষ্টিতে পথ হারিয়ে রাজা  সুনীতিরই কুটির দ্বারে আশ্রয় ভিখারি হলো। 

পাঁচ বছর পরে সুনীতি তাঁর ইষ্টদেবতাকে পেলেন। 

বনে জন্মগ্রহণ করলো তাঁর গর্ভে বিশ্বের বিস্ময় ” ধ্রুব “।

জন্ম – তপস্বী ধ্রুব মায়ের মুখে প্রথম পদ্মপলাশলোচন হরির মন্ত্র লাভ করলো।  

একদিন ধ্রুব খেলার সাথীদের কাছে লাঞ্ছিত হয়ে মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করে ধ্রুব জানতে পারলো সে রাজা উত্তানপাদের পুত্র। একদিন মাকে না বলে পঞ্চম বর্ষীয় শিশু রাজপ্রাসাদে পিতার কাছে উপস্থিত হয়ে বসন ভূষণ ভিক্ষা করলো। রাজা ধ্রুবকে কোলে তুলে সিংহাসনে বসাতে গেলে সুরুচি এসে বাধা দিল এবং ধ্রুবকে তিরস্কার করলো। ধ্রুব কাঁদতে কাঁদতে বনে মায়ের কাছে ফিরে এলো। 

ধ্রুব শুনলো, হরির কৃপালাভ করলে – পিতা, বসন, ভূষণসহ সব পাওয়া যায়। 

ধ্রুব গভীর অরণ্যে প্রবেশ করলো। শুরু হলো তার কঠোর তপস্যা। 

শেষপর্যন্ত নারায়ণের বরে রাজা উত্তানপাদ সসন্মানে রাণী সুনীতি ও ধ্রুবকে রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে গেল।

 এবং ধ্রুবের জন্য ভগবান স্বর্গেরও উর্ধ্বে অক্ষয় ধ্রুবলোকের সৃষ্টি করলো।

%d bloggers like this: