আমরা আমরাই তো! / শফিক হাসান

আমরা আমরাই তো!

আমরা আমরাই তো!

আমরা আমরাই তো! / শফিক হাসান

 

ছাত্রলীগ আলাপে প্রলাপে চায়ের দোকানের বাতচিতে ফিরে এসেছে আবার। ক্যাম্পাসে নানা রকম বগিজগি ঘটনার মাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে তারা। ছাত্রলীগের অবশ্যই এমন (সম)আলোচনার শীর্ষে থাকা উচিত। কারণ:

 

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে

ছাত্রলীগ যেখানেই যাক, মারামারি করবেই। ঢেঁকি যেখানে স্বর্গে গেলেও ধান ভানতে পারে, ছাত্রলীগের মারামারি করতে দোষ কী! বাংলা ভাষার প্রবাদ আছে, কাক কাকের মাংস খায় না। উক্তিটি সবার ক্ষেত্রে, সবসময়ের জন্য ঠিক না। অন্তত ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটতেই পারে। গৃহদাহ এবং অন্তর্দাহ দুটোই রয়েছে এ ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে। প্রথমত নিজেদের অন্যায় চাওয়া না মিটলে সৃষ্টি হয় অন্তর্দাহ, আর অন্তর্দাহের প্রশমন না ঘটলে তা পুঞ্জিভূত হয়ে সৃষ্টি হয় গৃহদাহ কিংবা অগ্নিদাহ!

 

শক্তির মহড়া

সব দলের বড় নেতারাই চান, ছাত্র সংগঠন যেন সবসময় শক্তিশালী থাকে। ছাত্র সংগঠন শক্ত থাকলে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে সাইজ করা সহজ হয়। আর তাদের সাইজ করতে পারা মানে নিজের দলের শক্তিশালী অস্তিত্ব অনুভব করা। ভাগ-বাঁটোয়ারা, দখলবাজি-টেন্ডারবাজিসহ নানান কারণেই ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়িতে লিপ্ত থাকে। নেতারা সেই কর্মীকেই পছন্দ করবেন যারা কামড়াকামড়িতে অধিক পারদর্শী। নেতাদের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ তাই বরাবর শক্তির মহড়া দেখিয়ে দেয়!

 

আনুগত্যের পরিচয়

লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির প্রথম কথাই হচ্ছে, অনুগত হও। দলের প্রতি, দলীয় নেতার প্রতি সম্মান দেখাও। দলের কার্যক্রম ন্যায় কিংবা সঠিক হচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন না তোলা। বুদ্ধিমান কর্মীরা তাই প্রশ্ন করে না, অনুগত হয়। আনুগত্য প্রদর্শনে নেতার সামনে এসে মাথা নত করে। এই নত মাথাই আমজনতার সামনে ভয়াল দৈত্যের মাথা হয়ে ফিরে আসে। ছাত্রলীগ থেকে যায় স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে!

 

অভিভাবকের খবরদারি

অতীতে মিছিলে, পিকেটিংয়ে যেতে অনিচ্ছুক ছাত্রদের অভিভাবক সেজে ধরে আনে ছাত্রলীগ কর্মীরা। তারা জানে, ছোটরা অবাধ্য হয়, বড়দের কথা শুনতে চায় না। অঘোষিত বড় ভাই হিসেবে একটা দায়িত্ব থাকে ছোট ভাইদের সঠিক পথে রাখার। সে জন্য অবাধ হলে, মিছিল-মিটিংয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানালে মাঝে-মধ্যে চড়-থাপ্পড় মেরে শাসন করতে হয়! এই শাসনের মধ্য দিয়েই সাধারণ ছাত্ররা রাজনীতির বাস্তব অভিজ্ঞতা পায়!

 

অস্ত্র ঝনঝনানির সুমধুর শব্দ

অস্ত্রই সকল ক্ষমতার উৎস। ক্ষমতার দখল নিতে এবং ক্ষমতা সমুন্নত রাখতে তাই অস্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষদের কেউ কেউ আছে নীতিবাক্যের বশংবদ। এদের কথা দিয়ে কাজ না হলে অস্ত্রের ভয় দেখাতে হয়। বিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোরও বেশি বাড় বেড়ে গেলে অস্ত্রই দিতে পারে সমাধান। এছাড়া বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং ক্যাম্পাসে অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্রলীগের তৎপরতা দেখা যায়। এভাবে তারা শুধু ক্যাম্পাসই বিজয় করে না, শৌর্য-বীর্যের প্রতীক হিসেবেও বিশেষ কদর লাভ করে সমাজে! অ্যাকশনধর্মী সিনেমার নায়ক হিসেবে চাইলে তারা অভিনয়ও করতে পারে। যেভাবে অস্ত্র হাতে সিনেমার নায়কের মতো পোজ দেয়, সবচেয়ে শক্তিশালী অভিনেতাও স্বীকার করতে বাধ্য হয় ‘জীবনঘনিষ্ঠ’ অভিনয় এমনই!

 

প্রেমী ও প্রেমী…

ছাত্রলীগ শুধু অস্ত্রবাজি নয়, প্রেমও করতে জানে, এটা কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরাই সবচেয়ে ভালো জানে! জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণে  করে গডফাদারের সহায়তায় তড়িঘড়ি করে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল মানিক নামের জনৈক ছাত্রলীগের সোনা-মানিক। ধর্ষণকে তির্যক দৃষ্টিতে দেখার কিছু নেই। কারণ প্রেম থেকেই ধর্ষণের উৎপত্তি! (জোরপূর্বক হলেও এটা প্রেমিক পরিচয়কে প্রতিষ্ঠিত করে)। শুধু নারীর প্রতিই নয়, ছাত্রলীগের প্রেম আছে শিক্ষার প্রতিও। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের ‘লেসন’ দিয়ে তারা নিজেদের শিক্ষাপ্রেমী মনোভাবকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে।

 

অনুগত প্রহরী

নেতা জনসভায় যান আর প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে ছোট রুম কিংবা রাস্তার পাশেই যান, সাথে থাকবে আজ্ঞাবহ বাহিনী। অনুগত প্রহরী হিসেবে ছাত্রলীগ ইতোমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপির সাথে সর্বক্ষণ আঠার মতো লেগে থাকার মতো পারঙ্গমতাও অর্জন করেছে তারা। মাঝে-মাঝে এ দক্ষতা এমনই বেড়ে যায়, নেতা কাউকে পিটুনি দিতে বললে ছাত্রলীগ খুনই করে আসে! কাজের সপক্ষে চটকদার কথা বলিয়ে হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তাদের। সুযোগ পেলে কেউই বাগাড়ম্বর করতে ছাড়ে না, ছাত্রলীগ ছাড়বে কেন!

 

রক্ষণাবেক্ষণকারী জিম্মাদার

নিজের জিনিস হেফাজত করার হিম্মত সবার থাকে না! নিজের জিনিস নিজের কাছেই নিরাপদে না-ও থাকতে পারে। তাই ছাত্রলীগ জনসেবা করার মানসে এগিয়ে আসে। এলাকার ছিঁচকে মাস্তান, চোরদেরও শিক্ষক হিসেবে ভূমিকা পালন করে তারা। চাঁদাবাজি, মাস্তানিতে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দিতে কোনো কৃপণতা নেই। ছাত্রলীগ নেতারা মিডিয়ায় পরিচিত করাতে ভালোবাসে নিজেদের। গণমাধ্যম-বান্ধব হিসেবে ইতোমধ্যে ভালোই নাম কুড়িয়েছে তারা। তাদের কীর্তির কথা আলোচিত হলে গণমাধ্যমের সমালোচনা করতে ছাড়ে না। এভাবেও ছাত্রলীগ থেকে যায় আলোচনার পাদপ্রদীপে।

শফিক হাসান
শফিক হাসান