ভালবাসো, তাই ভালবাসি – ফিরোজ শ্রাবন।   

ফিরোজ শ্রাবন

ভালবাসি বড় ভালবাসি, এর বেশি ভালবাসা যায় না। শ্রদ্ধেয় কাউছার আহমেদ চৌধূরীর একটি লেখা পড়েছিলাম। লাইনটা এমন যে, দূর থেকে একটি গান ভেসে আসছে । গানের কথা বোঝা যায় না, শুধুই মিউজিক আর একটা গানের লাইন ‘ভালবাসি বড় ভালবাসি’, ব্যস এতটুকুই। আমরাও ঠিক তেমনই, কিছু বুঝি আর নাই বুঝি, ভালবাসো তাই ভালবাসি । এর বেশি ভালবাসতে পারবো না । এটা অবশ্য বউদের ক্ষেত্রে প্রযোয্য নয় । কারণ মশা যখন প্রচন্ড রকমের বাড়াবাড়ি করে আর আমিও জিদ ধরি যে দেখি মশা কত রক্ত নিতে পারে, এমন সময় বউ এসে মশারিটা টাঙিয়ে দেয়। তো তাদের ভালবাসাটা ফুলের মত তরকারি না হলেও ফুলকপির মত দরকার’ই।

সত্যিই এখনকার ভালবাসা দেখে হিংসা হয় যে, কত সহজে ভালবাসা পাওয়া যায় । আমাদের সময় যখন প্রাইমারিতে পড়তাম, তখন একজনকে অনেক ভাললাগত । তার নাম যে ভালবাসা তা জানতাম না। তবে বুঝতাম তাকে দেখলে বুকের মাঝে কেমন যেন করে। সে কেন এত সুন্দর, কি খায় ,কিভাবে ঘুমায় ইত্যাদি ইত্যাদি..। আর এমন সব ভাবনা থেকে চাইলেও রেহাই পেতাম না । কারণ প্রতিদিন স্কুলে তার সাথে দেখা হত । আর শুক্রবার যেন আমার সব নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিত। কখন শনিবার আসবে.., আর ক্ষুধা যতই লাগুক  ছুটির ঘন্টা যত দেরিতে বাজবে তাতেই আমার সুখ। আমার সহপাঠীরা সবাই অনেক প্রতিভাবান ছিল, আমি শুধু না বুঝে পড়া মুখস্ত করতাম ,বুঝতে পারতাম না। আর প্রচন্ড রকমের ভীতু ছিলাম। স্যার যখন পড়া ধরতেন তখন অনেক দ্রুত বলার চেষ্টা করতাম । কখনও কখন্ও স্যার এর মন জয় করতে পারতাম কখনও পারতাম না। স্যার ও যেন কেন আমাকেই বেশি পড়া ধরতো । আর তার সামনে পড়া না পারলে আমার কি যে খারাপ লাগতো। তাই স্যারকে সহজে সে সুযোগ দিতে চাইতাম না । বুঝি আর না বুঝি পড়া মুখস্ত করেই আসতাম। আমি কখনও- ই কারো মন জয় করতে পারি নাই । কারণ মনের কথা বলার মত সৎ সাহস আমার ছিল না। ভাবতাম, আমি যদি বড় হয়ে ভাল কোন চাকুরি না পাই তাহলে, তাকে কি করে ভালবাসার কথা বলি। সে যদি বলে কি যোগ্যতা আছে তোমার যে আমাকে ভালবাসতে চাও? কিন্তু সিনেমায় যে ধনীরা শেষ পর্যন্ত গরীবের ভালবাসা মেনে নেয় । যাই হোক আমার বেলায় হয়ত মানবে না। তাই তাকে আর ভালবাসতে চাই বলতে পারলাম না । তবে, এখন কার ছেলে-মেয়েদের হাতে অনেক টাকা। আর বুকে প্রচন্ড  সাহস।বন্ধুরা সবাই গোল হয়ে দাড়িয়ে বৃত্ত তৈরি করে। এবার ছেলে মেয়েটাকে প্রস্তাব দেয় যে, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি ।’আর যে বেশি পটু সে ইংরেজিতে বলে, ‘আই লাভ ইউ ।’ কেউ গোলাপ উপহার দেয়। আর যার বেশি টাকা সে ভাল কোন উপহার দেয়। আবার কেউ কেউ বিলবোর্ড টাঙ্গিয়ে বলে, ধানমন্ডির ২৭ নম্বরের সৈকতকে ভালবাসি । যাই হোক বন্ধুরা সবাই যার যার মতো চলে যায় । এবার ছেলেটা মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ভালবাসি, তোমাকে পাগলের মত ভালবাসি। জানো তোমার জন্য ২/৩ রাত আমি ঘুমাতে পারি নাই।’ শেষে মেয়েটাও বলে, ‘আমি ও।’ ছেলেটি বলে, ‘আমিও মানে?’ মেয়েটা বলে, ‘আমিও মানে, তোমার জন্য কাল রাতে ঘুমাতে পারি নাই।’ ‘না জান এভাবে বেলো না, এখন থেকে আমাদের নো ব্রেকআপ শুধু ডেটিং, হ্যাংআউট, পার্টি ঠিকাচ্ছে?’ অতপর তাহারা দু সপ্তাহ সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল। কিন্তু ,চাইলেই কি শান্তিতে থাকা যায়। ভালবাসা তো কারো একার জন্য নয়, বাবা -মার কথাও তো শুনতে হবে । ছেলে অস্ট্রেলিয়া থাকে, তাই সৈকত তুমি আমাকে ভুল বুঝ না । বুঝতেই তো পারছো বাবা -মা না.., তারা তো আমার ভাল চায়। তাই না বলো, আর তাছাড়া তোমার কি আছে বলো? তোমার তো নিজের পায়ে দাঁড়াতে আরও সময় লাগবে । তুমি এক কাজ করো, আমার প্রিয় লেখকের কিছু বই আর হাবীব ভাইয়ার কয়েকটা সিডি নিয়ে নিজেকে একটু ম্যানেজ করো ঠিকাচ্ছে, জান ? ছেলেটি হয়ত নিজেকে না মানিয়ে অন্য কোথাও আবার বৃত্ত তৈরি করবে । কিন্তু আমাদের সময়ের প্রেম কি এমন  ছিল! তাহলে মিতালী মূখার্জী যে গাইলো , ‘জানি আসবে না ফিরে আর তুমি -তবু পথ পানে চেয়ে থাকি ‘