বৃষ্টি সেলাই করি/ শাহনাজ পারভীন
যখন এ বাড়িতে প্রথম এসেছিলাম
তখন তার ছাউনিটা ছিল এক কাব্যিক ছুতোরের তৈরি
বৃষ্টির শব্দে গরম ভাতে ঘুম ভর্তা খেতে খেতে চোখ লেগে যেতো
তখন দখিনা জানালায় দুলতো ঝুমকো জবা
পুব জানালার বারান্দায় ঝুলতো ভেজা সালোয়ার
জ্যোৎস্নার প্লাবনে ভেসে যেতো উঠোনের গল্প ফুল
পশ্চিমে কোন জানালা ছিলো না,
ছিলো না পাখির কলকাকলী, প্রশান্ত বাতাস আর
শুভ বিকেলের স্বপ্ন মাখা সান্ধ্যকালীন পশ্চিমারাগ।
পাড়ার এলিট মুরব্বিরা বলতেন
এ গুদোমে থাকো কী করে?
আর বিড়বিড় করে বলতো ‘বানরের গলায় মুক্তোর মালা!’
আমি শুনে ফেলতাম আমার পঞ্চইন্দ্রীয় দিয়ে
তাই আর প্রথম প্রশ্নের উত্তরের দায় থাকতো না আমার।
একসময় বেড়ি কেটে বেরিয়ে এলাম সামনের লিচু বাগানের স্বপ্নময় অলিন্দে
সে দু দশক আগের কথা
আমি ঘরের চারপাশ সাজালাম জানালার সৌন্দর্যে
দেওয়াল থাকলো না কোন
বাতাসের, আলোর, মেঘের, কল্লোলের যুদ্ধ আর প্রেম, আনন্দের ঝাড়বাতি
হুড়োহুড়ি করে মানিপ্লান্ট আর লজ্জা লতার সাথে
সুখ স্বপ্নের সুই সুতো আমার হাতে
ইচ্ছে মাফিক রিপু করি, সেলাই করি দুঃখ সুখের পদাবলী!
দেওয়াল বিহীন সে ঘরে স্বপ্ন সাজাই থরে থরে
দুঃখ গুলো আটকে রাখি সিন্দুকে
আর ইচ্ছের জানালা খুলে রাখি পশ্চিমের
উত্তর দক্ষিণ আমার খোলা আকাশ
তার সব আলো হাওয়া নিয়ে ঢুকে পড়ে যখন তখন
তাদের হট্টগোলে আমার ঘুমিয়ে থাকা সুখগুলো জেগে ওঠে
আজ তিন দশক পর আমার উত্তরের জানালায় ঝুলে আছে হাইরাইজ বিল্ডিং
দক্ষিণের জানালায় মিশে আছে পাঁচ তারকা ভবন
আমি যতই ঘুম ভর্তাকে ডাকি
ওরা আমায় নির্ঘুম কফির পেয়ালা হাতে ধরায়
আমি মাঝরাতে জেগে জেগে বৃষ্টি সেলাই করি ঘুম ভর্তার সাথে।
Facebook Comments Sync