করোনা কি শেখালো?/ অনুপা দেওয়ানজী

অনুপা দেওয়ানজী

অনুপা দেওয়ানজী

আবহমান কাল থেকে ঘরের কাজের প্রতি কর্তাদের অনীহার কথা বেচারা গিন্নিদের চেয়ে ভালো আর কে জানে ! অনেক গৃহকর্তা তো মশারির দড়িটা পর্যন্ত কীভাবে টানটান করে টাঙাতে হয় তাও জানেন না।। তারা বাইরের কাজে যতটা দক্ষতা অর্জন করেন ঘরের কাজেক ততটাই অদক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। এর কারণ আর কিছু নয়, তা রাই যে সংসারে আয়ের উৎস এই অধিকারবোধ থেকেই ঘরের কাজের প্রতি তাদের এই অনীহা। তবে এটাও ঠিক ঘরের কিছু কিছু আবশ্যিক, অথচ একঘেয়ে কাজ আছে যে কাজগুলোতে বৈচিত্র্য একেবারেই নেই। সেগুলো আবার না করলেও নয়।যেমন ঘর ঝাড়ু দেয়া, মোছা, ঘরের ধুলো ঝাড়া, কাপড় কাচা, বাসন মাজা, মশলা পেষা। এসব কাজ তাই গিন্নিরা নিজেদের তদারকিতেই গৃহকর্মীদের দিয়ে করিয়ে নেন।
তা চলছিলো এভাবেই গিন্নিদের দিন।
তবে সময় তো আর যুগে যুগে একরকম চলে না। একসময়ে শুধুমাত্র কর্তার আয়ে যখন সংসার নামের তরীটা টলমল করতে শুরু করলো , তখন বাধ্য হয়ে গিন্নিকেও ঘরের বাইরে এসে সেই তরীটা ঠেলার জন্যে বৈঠা হাতে তুলে নিতে হল।
কিন্তু এতে কি গিন্নির ঘাড় থেকে ঘরের কাজের বোঝা কমে গেলো!
নাও ঠ্যালা। তাও আবার হয় নাকি ? উল্টো বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো কি ঘরে বাইরে দুদিকেই গিন্নিদের বৈঠা চালানোটা রপ্ত করা শিখতে হল।

এভাবেও চলে যাচ্ছিলো গিন্নিদের দিন।
হঠাৎ গিন্নিদের এই কষ্ট লাঘব করতে কি বুঝে এই সময়ে এগিয়ে এলেন করোনা নামের এক ভাইরাস।
এই ভাইরাস হয়তো স্ত্রী জাতির মধ্যেই পড়ে নইলে আবহমান কাল ধরে গিন্নিরা কর্তাদের যা শেখাতে পারেননি করোনা কিভাবে সেসব শিখিয়ে ছাড়ছেন তাদের!
করোনা এসেছে বলেই কর্তা সংসারে সময় দিতে শিখেছেন, গিন্নি ও সন্তানদের সাথে গল্প করছেন। করোনার প্রভাবে অনেকের ঘরেই এখন গৃহকর্মী নেই। কর্তা, গিন্নি দুজনে তাই কাজ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
বিশেষ করে অনেক গৃহকর্তাই রান্নাবান্না জানেন না বলে তাদের ওপর ভার পড়েছে ঘর ঝাড়ু দেয়া আর মোছার কাজ।
করোনা না শেখালে এই গৃহকর্তারা কি আদৌ জানতেন যে ঘর ঝাড়ু দেবার সময়ে আগাতে হয় আর মোছার সময়ে পিছিয়ে যেতে হয়!
করোনা বিদায় নেবার আগে হয়তো তাদের শিখিয়ে যাবেন এভাবেই আগুপিছু করে সংসারেরও ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়।