এসো হে বৈশাখ/ আফরোজা পারভীন

এসো হে বৈশাখ

এসো হে বৈশাখ

এসো হে বৈশাখ/ আফরোজা পারভীন

 

 চৈত্রদিনের শেষে তোমার আগমনী

বার্তা শোনা গেল।

তুমি এলে দুর্ধর্ষ এক অশ্বারোহীর মত

সকল জরাজীর্ণতাকে পায়ে সরিয়ে

রিক্ত ও শূন্য পত্রপল্লবে নতুনের

পতাকা উড়িয়ে।

তুমি আসছ আমাদের ঘরে ঘরে

আশা ও আকাঙক্ষার শুভবার্তা নিয়ে

রবীন্দ্রনাথের কন্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে

আমরা উচ্চারণ করি,

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।

 

তুমি এসো হে বৈশাখ

 কেবল শহুরে মানুষের বিনোদনের পার্বণ হয়ে নয়,

তাদের সুশোাভিত পাঞ্জাবি আর

উজ্জ্বল হাসিতে নয়,

 মেয়েদের রংবেরঙের শাড়ির পাড় বা

অলংকার হয়ে নয়,

ব্যবসায়ীর নতুন হালখাতায় ভর করে নয়,

সারা বছরের একটি দিনকে সমুজ্জ্বল

করে কী লাভ তোমার

নবীন বৈশাখ?

 

এবার তুমি এসো আমাদের এই পর্ণকুটিরে

 সেখানে এক দুখিনী মা সানকিতে

সামান্য পান্তা আর সুটকি মাছা পোড়া নিয়ে

সন্তানের জন্য অপেক্ষায় থাকে।

ভর্তা তৈরির জন্য এতটুকু সরিষার

 তেলও জোটেনি তার

ইলিশ মাছ খাওয়ার বিলাসিতার

কথা সে ভাবেনা কখনো।

 

তুমি এসো আমাদের এই কুঁড়েঘরে

 যেখানে পয়লা বৈশাখ কোনো

ফ্যাশন নয়, ফ্যাশন শো নয়,

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো!

 

২। স্মৃতিতে বৈশাখ

সেদিন চারুকাকার দোকান

ঝলমল করে উঠেছিল

কাগজের ঝালর, ফুল আর বেলুনে।

বাবাকে শুধিয়েছিলাম,

বাবা, বাবা, চারুকাকার দোকানটা

অমন সেজেছে কেন?

বাবা হেসে বলেছিলেন,

আজ যে নববর্ষ, চারুর দোকানে হালখাতা মা,

আজ আমাদের নেমন্তন্ন।

নববর্ষ, হালখাতা! সেসব আবার কি? সে যাই-ই হোক

 নেমন্তন্নটাই আসল কথা।

 

ফুলতোলা ফ্রক, পাতাকাটা বেণী

কুমকুমের টিপ আর কাজলের

টানে সাজ যেন ফুরোয়ই না

মা বলেছিলেন,

অমন করে সাজিসনে মা ,

বাচ্চাদের অত সাজতে নেই

বাচ্চারা দেবশিশু, এমনিতেই সুন্দর!

 হেসেছিলাম,

খলবলিয়ে বলেছিলাম

আজ সাজতে মানা নেই মা,

আজ যে নববর্ষ, হালখাতা

চারুকাকার দোকানে নেমন্তন্ন।

কাকার দোকানটা কেমন সেজেছে দেখ!

 

রসে ভেজা রসগোল্লা, ছানার

জিলিপি আর পাতা মোড়া

সন্দেশে পরিতৃপ্ত আমি

ছিলাম বড়ই প্রসন্ন

বাবার চোখে ছিল প্রশ্রয়

চারুকাকার দৃষ্টিতে মমতা।

 

ফি বছর রমনায় যাই

পান্তা, ইলিশ. মাটির সানকি

মুড়ি মুড়কি, আলু সিম

ভর্তা, মঙ্গল শোভাযাত্রা

মনে করায় নববর্ষ এসেছে।

 

বটমূল থেকে ভেসে আসে

 বৈশাখের আগমনী

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো

কাল বৈশাখী জানান দেয়

গুরু গুরু ধ্বনি তুলে

অমি আসছি, আসি বার বার।

 

আমার চেতনার অলিতে গলিতে

ভেসে আসে ডাক

হৃৎমাঝারে পড়ে টান

চরুকাকার দোকানের ঝালর

 দোলে বাতাসে।

স্মৃতিতে ফিরে যাই,

ফিরে যাই শৈশবে।

আফরোজা পারভীন
আফরোজা পারভীন