জল মাখা জীবন ৪/ আফরোজা পারভীন
সুরমা নদীর তীর থেকে সাংহাইর হাওড়ের শুরু । এরপর ২২টা গ্রাম। এখানকার জনজীবন নিয়ন্ত্রণ করে হাওড়। সাংহাইর হাওড় ,শনির হাওড়, গলাকাটা হাওড় এমন অনেক হাওড়। হাওড় জুড়ে হাজার হাজার একর জমি। পাহাড়ী ঢলে সিজনের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। নামে কৃষিনির্ভর হলেও আসলে এ এলাকা প্রকৃতিনির্ভর। বছরের আটমাস থাকে পানির নিচে। বন্যা ঠেকানো গেলে ফসল বাঁচানো যেত। এই কাজেই এসেছে রফিক। সরেজমিন স্টাডি না করলে ফল কখনই ভাল হতে পারে না। বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কিন্তু তাতে জমির কি পরিমাণ ক্ষতি হবে এ সবই রফিকের স্টাডির বিষয়। এলাকার অধিকাংশ মানুষই জেলে। মাছ ধরাই জীবিকা নির্বাহের সহজ পথ। শুকনো মওসুমে জলমহাল, বিলে মাছ ধরে তারা। ভরা বর্ষাকালে নদীতো রযেছেই। মূলত এরাই রফিকের স্টাডির টার্গেট গ্রুপ। কন্ট্রোলের ডাইরেক্ট প্রভাব তাদের উপর পড়বে কিনা, প্রফেসন ডাইভার্ট করতে বাধ্য হবে কিনা এটা দেখতে হবে সবার আগে। বাঁধ যদি টার্গেট গ্রুপকে লাভবান না করে তবে এ কার্যক্রম অর্থহীন। সার্ভে হল, টেকনিক্যালি ভায়াবল হল , পরবর্তীতে ফিজিবিলিটি স্টাডিও হল । এখন ফলো আপ স্টাডিতে এসেছে রফিক। সে ভাবছে কন্ট্রোলের ডাইরেক্ট প্রভাব জেলেদের উপর পড়বে কিনা। কাজ করতে গিয়ে দেখেছে ম্যাপ উল্টাপাল্টা। ধনী লোকের দশ কাঠা জমি সেফ করতে গিয়ে ক্ষুদ্র কৃষকের হাজার হাজার জমি চলে গেছে। আবার ধনীলোকের এলাকা বাঁধের মধ্যে ফেলার জন্য বাঁধের নক্সা অনেক ঘুরিয়ে নেয়া হয়েছে। আসলে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমটা যেন দিনে দিনে উবে যাচ্ছে। নিজেকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে চায়না মানুষ। মন খারাপ হয় রফিকের। এখানে আসার সময় সে নোয়াখালিতে গিয়ে দেখা করেছিল ডানিডার পিসি জর্জের সাথে। ভদ্রলোক ফিশিং লাইনে এক্সপার্ট। রফিকের সাথে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন বৃদ্ধ। তিনি এখনও বিশ্বাাস করেন মাছে ভাতে বাঙালি। তাই বাঙালিকে মাছ আর ভাত দুটোই দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে একসাথে। বিদেশী এই বৃদ্ধের আবেগ দেখে অভিভূত হয়েছিল রফিক। বৃদ্ধ রফিকের সাথে অনেকক্ষণ ধরে করমর্দন করেছিলেন। পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন। এদেশে থাকতে থাকতে পিঠ চাপড়ানোটা ভালই রপ্ত করেছেন তিনি। দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছিল রফিক। না দিক প্রেমিকা তাকে স্বীকৃতি, বিদেশী একজন মানুষতো তাকে স্বীকৃতি দিল। থাক নিশি তার উচ্চাকাঙক্ষা নিয়ে নিজের জগতে। রফিক পড়ে থাকবে এখানে এই গরীব জেলেদের মধ্যে। তাদের ভাগ্য ফেরাবার জন্য কাজ করবে। তারপর যদি কখনও নিশির তাকে মনে পড়ে, তাকে ডাকে সেদিন বিন্দুমাত্র দেরি না করে ফিরে যাবে নিশির কাছে। নিশিরই তো তার ছকবাঁধা জীবনে একটিমাত্র নিশিপদ্ম, তার জীবন কাগজে রক্তের আঁখরে লেখা একটিমাত্র নাম।
সবকটি গ্রাম ঘুরে হাসনহাটিতে এসে জায়গা নিল রফিক। গ্রামগুমোর নাম হাটি। একগ্রামে পা দিলে পরপর অনেকগুলো গ্রামে যাওয়া যায়। পূর্ণ বর্ষার সময় দুপাশের বিশাল বিশাল ঢেউয়ের মাঝে ঢিবির মতো জেগে থাকে গ্রামগুমো। সুরমা আর হাওড় দুটোর ঢেউই তখন তুঙ্গে। থাকার কোন সুবিধামতো জায়গা জুটাতে না পেরে স্থানীয় স্কুলের হেডমাস্টারের শরণাপন্ন হল রফিক। উদ্দেশ্য বর্ণনা করেও অনুকূল সাড়া পাওয়া গেল না। তবে রফিকের ভাগ্য ভাল বলতে হবে। সেই সময় স্কুলে এসে উপস্থিত থানার এক দারোগা। নতুন লোক দেখে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করল রফিককে। তবে দু একটি কথার পর দারোগা বলল, আপনি স্যার এ এলাকার উন্নয়ন করতে এসেছেন আপনাকে দেখাশুনা করা আমাদের দায়িত্ব। তা বলেন স্যার কি উপকার করতে পারি আপনার। ও ভাল কথা, কোথায় উঠেছেন স্যার?
দারোগা স্যার বলাতে হেড মাস্টারের আক্কেল গুড়ুম। এলাকার জনজীবন যেমন নিয়ন্ত্রণ করে হাওড় তেমনই নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। পুলিশের সাথে যাদের খাতির আছে তারাই এলাকার মা বাপ। সেই পুলিশ এই অল্পবয়সী ছোকরাটাকে স্যার বলছে। এর মাজেজাটা কি?
রফিক মুখ খোলার আগেই কথা বলে ওঠে হেডমাস্টার। না জানি কি বেফাঁস কথা বলে বসে ছোকরা। তাতে না জানি কতোটা নাখোশ হয় দারোগা সাহেব। না আর যাই হোক দারোগাকে চটানো যাবে না।
: উনি এসেছিলেন আমার কাছে থাকার জায়গার ব্যবস্থার জন্য। তা এলাকায় ডাকবাংলো নেই, কারো বাড়িতে থাকার মতো একটা বাড়তি ঘরও নেই। আর সবার বাড়িতে উনি থাকতেও তো পারবেন না। তাই ভেবেচিন্তে আমি স্কুল ঘরে ওনার থাকার ব্যবস্থা করেছি। ভাল করিনি দারোগা সাহেব ?
মাস্টারের কথা শুনে রফিক রীতিমতো অবাক । এইমাত্র উনি সাফ সাফ বলে দিলেন থাকার কোন জায়গা নেই। যাহোক দারোগার অছিলায় একটা থাকার জায়গা জুটে গেল এটাই বড় কথা।
: খুব ভাল করেছেন। আপনি সঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন স্যার। এ এলাকায় হেডমাস্টার সাহেবের মতো কাজের লোক দুটো নেই । সব ধরণের কাজে এক্সপার্ট উনি। সাধারণ মাস্টার বলতে যা বোঝায় উনি তা না।
দারোগার ইঙ্গিতপূর্ণ কথায় মনে মনে খুবই বিরক্ত হলেন মাস্টার। শালা পুলিশ কিনা মাস্টারের ভুল ধরে । কলিকালে আরো কতো কি দেখতে হবে। কিন্তু মুখে সে বিরক্তি প্রকাশ করা যায় না। কথায় বলে বাঘে ছুলে আঠারো ঘা। আর পুলিশে ছুলে ছত্রিশ ঘা। ছত্রিশতো দূরের কথা এক ঘাও খেতে চায় না মাস্টার। তাই যেন দারোগা তার কতো প্রশংসা করছে এমনভাবে গলে গিয়ে বলল,
: কিযে বলেন দারোগা সাহেব, আপনারাইতো বাঁচিয়ে রেখেছেন আমাদের । নইলে হাওড়ের যা পরিস্থিতি ! বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে কি আর বাস করা যায়।
: তা বেশতো বাস করছেন তিন তিন খান বউ নিয়ে। যাক সেসব কথা। স্যারের জিনিসপত্রগুলো নেয়ার ব্যবস্থা করুন আর চলুন আমি স্যারকে নিজেই স্কুল ঘরে পৌঁছে দিই। দেখি কোথায় ওনার থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
হাঁটতে শুরু করে মাস্টার। বলে,
: এতোদিনে স্যার একটা কাজের মতো কাজ করতে এসেছেন আপনি। এলাকার জেলেদের দিকে চাইলে চোখে পানি আসে। আমি মাস্টার মানুষ এমনিতেই মন দিল নরম। তারপর ওদের কষ্ট দেখে সহ্য করতে পারিনে। বউ বলে কিগো মুখে ভাত নিয়ে বসে রইলে যে গৌতম বুদ্ধের মতো?
দারোগা হাসতে হাসতে বলে,
: তা আপনার কোন বউ বলে প্রথম , দ্বিতীয় না তৃতীয়?
: কি যে বলেন স্যার। আপনি বড় রসিক মানুষ। তা যা বলছিলাম স্যার। একদিকে হাওড়ের পানি, অন্যদিকে পাহাড়ী ঢল , তার উপর ভারত তেকে আসা পানি কি থাকে বলেন । তারমধ্যে আছে কারেন্ট জাল। এতো যে বলা হচ্ছে কারেন্ট জাল ব্যবহার করো না, ব্যবহার করো না শুনছে না কেউ।
আপনারই নাকি গোটা বিশেক কারেন্ট জাল আছে ? তা দিয়ে ডিমও তুলে ফেলেন? সেই খোঁজ নিতেই তো এসেছিলাম। তা স্যারকে দেখে আসল কাজটাই খেয়াল নেই।
: কি যে বলেন স্যার, আমি ব্যবহার করবো কারেন্ট জাল ! তাও কি কখনও হয়। আমি মাস্টার মানুষ না। আমাকে দেখে ছাত্ররা শিখবে।
: তাহলেতো মাস্টার সাহেব আপনার সব ছাত্র কমপক্ষে তিনটা বিয়ে করবে। মাস্টারকে দেখে ওরা শেখে আপনিই বললেন। আবার যাতা মাস্টার না, হেডমাস্টার।
: আপনি বারবার তিন স্ত্রীর কথা বলছেন স্যার। আমি জানি স্যার আপনি রসিক মানুষ। ঠাট্টা করতে ভালবাসেন। কিন্তু স্যার শরীয়তেই তো চার বিয়ে করা জায়েজ আছে। আর স্যার এই নিয়মের একটা কারণও আছে।
:কি সেটা? রফিকের কন্ঠে কৌতূহল।
:স্যার যদি বেয়াদবি না নেন তো বলি। দারোগার দেখাদেখি কখন যেন হেডমাস্টার রফিককেও স্যার বলতে শুুরু করেছেন।
: ছিঃ ছিঃ আপনি আমাকে স্যার বলছেন কেন? আপনি শিক্ষক মানুষ, আমার পরম পূজনীয়।
: আহা কি বিনয় কি আদব লেহাজ ! এই না হরে ভাল মানুষের সন্তাান। যাক যা বলছিলাম সেই তিন স্ত্রী সম্পর্কে। বলব দারোগা সাহেব?
: হ্যাঁ হ্যাঁ বলেন।
: মেয়েমানুষের শরীর খারাপ হয় জানেন তো। ওইযে মাসে মাসে যেটা হয়। তা ও সময় যাতে কোন অবস্থাতেই স্বামীর কোন সমস্যা না হয় তাই এই ব্যবস্থা । একসাথে বড়জোর তিনজনের শরীর খারাপ হতে পারে কিন্তু চারজনের নিশ্চয়ই হবে না । তাই স্বামীদের সুযোগের দিকে তাকিয়ে এই ব্যবস্থা।
অবাক হয়ে রফিক বলল,
: বাহ বেশ চমৎকার ব্যবস্থা। কিন্তু স্বামীর যদি শরীর খারাপ হয় স্ত্রীর জন্য কি ব্যবস্থা। অনেক স্বামীরতো কঠিন কঠিন অসুখ রয়েছে। কোন অবস্থাতেই স্ত্রীর তাকে দিয়ে চলে না। সেই স্ত্রীদের জন্য কি ব্যবস্থা । ধরেন আপনার যদি কোন কারণে বড়সড় একটা অসুখ হতো আপনার তিন তিন খানা স্ত্রী কি হতো?
: কি যে বলেন আপনি। মেয়েমানুষের জন্য আবার কি। ওদের জন্মইতো পুরুষের জন্য।
হো হো করে হেসে উঠল দারোগা। ওরা পৌঁছে গেছে স্কুল ঘরে। একটা রুম ঝাড়পোছ করে বসবাসের যোগ্য করা হল। রফিক বলল,
:দারোগা সাহেব, আমার কাজের জন্য একজন লোক দরকার । সে আমার সাথে সাথে থাকবে। তাকে আমার পিয়নও বলতে পারেন গাইডও বলতে পারেন অবার কুকও বলতে পারেন।
: কিন্তু এখানে লোক পাওয়া খুবই শক্ত । সুনামগঞ্জের লোকের জাত্যাভিমান বড় বেশি। তারা নিজেদের দেশি মানে নিজ জেলার লোক ছাড়া অন্য কারো কাছে কাজ করে না।
:আমি ভাল বেতন দেব।
: মাস্টার সাহেব স্যারের জন্য আজই একটা লোকের ব্যবস্থা করবেন। এ কাজটা আপনাকে আমি দিয়ে গেলাম। চার বিয়ে করার পক্ষে যেমন একটা মসলা বানিয়েছেন বিদেশির কাছে কাজ করার পক্ষে তেমন একটা মসলা বানিয়ে নেবেন। সেটা শুনালে আর কোন সমস্যা হবে না।
:আপনি ভাববেন না । নিশ্চিন্তে চলে যান। ব্যবস্থা আজই হয়ে যাবে।
সত্যিই বিকালের মধ্যে ব্যবস্থা হয়ে গেল। রহমত কাজে এসে প্রথমেই জানিয়ে দিল তার চোদ্দ পুরুষের কেউ কখনও বিদেশীর কাছে কাজ করেনি। অনেক বড় বংশের পোলা সে। নেহাত জমিজমা হাতছাড়া হওয়ায় এখন তারা গরীব। গায় গতরে খেটে খাওয়ায় দোষ নেই। কিন্তু দোষ আছে বিদেশী মানুষের কাছে চাকরের কাজ করায়। তারা না খেয়ে মারা যাবে কিন্তু কখনও তা করবে না। রহমত এখানে কাজ করতে এসেছে মাস্টার সাহেবের কথায়। স্যার বলল চাকরের কাজ না। পিয়নের চাকুরি। সাহেবের সাথে সাথে থাকবি। অফিসে আদালতে যেমন পিয়ন থাকে এও তেমন। তাছাড়া স্যার আরো বলল, আপনি আমাদের মতো গরীব মানুষের উপকার করার জন্য এ এলাকায় এসেছেন তাই ভাবলাম আপনার খেদমত করা দরকার। তাই রাজি হয়ে গেলাম। স্যার আপনি কি রাজনীতি করেন? কোন দল স্যার? আপনি কি ভোটে দাঁড়াবেন?
: আরে না না, ভাটে দাঁড়াতে যাবো কেন। তাছাড়া ভোটে দাঁড়ালে তো যাবো নিজের এলাকায়। তোমাদের এলাকায় আসব কেন?
: কিন্তু স্যার ভোটে দাঁড়াবার মতলব থাকলেই লোকে দেশের কাজ করার ভাব দেখায়। তারপর ভোটে জিতে সব রাতারাতি ভুলে যায়। স্যর আপনি যদি ভোটে না দাঁড়ান তাহলে কেন এই অঁজগায়ে এসেছেন দেশের কাজ করার জন্য?
: ও তুমি বুঝবে না।
: কেন বুঝব না । আপনি কি আমাকে গোমূর্খ মনে করেন। স্যার আমারে মূর্খ ভাবলে তো আপনার কাজ করা যায় না।
: আরে না না তা না। তুমি বুঝবে না তো বুঝবে কে। আমি মাস্টার সাহেবকে বলেছিলাম গ্রামের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছেলেটাকে আমার পিয়ন হিসাবে পছন্দ করবেন। তিনি তোমাকেই পছন্দ করেছেন। তখনই বুঝেছি তুমি এলাকার সেরা বুদ্ধিমান। আসল কথা হচ্ছে এই দেশের সেবা করা, উন্নতির চেষ্টা করাটা আমার চাকুরি। আমি এই চাকুরি নিয়ে এখানে এসেছি।
: সেতো সবারই উচিৎ দেশের কাজ করা, দেশের উন্নতির জন্য কাজ করা। কিন্তু স্যার কেউ তা করে না। যাকগে স্যার আপনি মানুষের উপকার করার চেষ্টা করছেন, আপনার সেই ইচ্ছে আছে এ জন্যই আমি মন দিয়ে আপনার কাজ করব। তা স্যার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কি?
: দুটো ভাতে ভাত আর ডাল রেঁধে ফেল। রাঁধতে জানোতো।
: যা জানি পুরষ মানুষের তাতে চলে। কিন্তু স্যার চাল ডাল তো দেখলাম না।
:আমি কি ডাল চাল সাথে নিয়ে ঘুরছি নাকি। এই নাও টাকা। দোকান থেকে কিনে আনো। দোকান কতো দূরে?
: দোকান কোথায় পাবো স্যার। এখানে কোন দোকান টোকান নেই। তবে দুএকটা বাড়িতে টুকটাক জিনিস কিছু বিক্রি হয়। সেখানেই যাচ্ছি। স্যার সাথে কিছু চিড়ে মুড়ি গুড় এনে রাখি।
: যা যা দরকার মনে করো আনো, এই নাও টাকা।
অল্প সময়ের মধ্যেই রেঁধে ফেলল রহমত। খুশি হল রফিক। এই বিদেশ বিভুঁয়ে বৈরী পরিবেশে ছেলেটাকে পেয়ে খুব ভাল হযেছে। কথা বলার জন্যও তো একটা মানুষ দরকার।
খাওয়া দাওয়ার পর স্কুল ঘরটা ঘুরে দেখল রফিক। জরাজীর্ণ অবস্থা , কতোদিন বুঝি সংস্কার হয়নি। এলাকাবাসীর এ স্কুলের দিকে নজর আছে বলে মনে হয় না। রফিক মনে মনে ঠিক করল পরদিন এলাকার প্রভাবশালী লোকজান, চেয়ারম্যান মেম্বারদের সাথে কথা বলবে। তাছাড়া ওদের সহযোগিতা ছাড়া এই প্রত্যন্ত হাওড় এলাকায় কাজ করাও সম্ভব না। ওদের সহযোগিতা তার কাজটাকে অনেকটা সহজ করে দিতে পারে। রফিক স্কুলঘরের কোথাও বাথরুম ল্যাট্রিন না দেখ অবাক হল। ছাত্র ছাত্রীরা প্রাকৃতিক কাজ সারে কিভাবে? হঠাৎ তার নজর গেল স্কুুলের পেছন দিকে। হাওড়ের কোল ঘেঁষা স্কুল। হাওড় থেকে খুঁটি পুতে সেই খুঁটির উপর চট দিয়ে ঘিরে পাশাপাশি বানানো হয়েছে দুটো পায়খানা । অথচ এই হাওড়ের পানি দিয়ে এলাকাবাসীরা গোসল রান্না থালাবাটি ধোয়া সবই করে। রফিককে ওখানে দাঁড়ানো দেখে পাশে এসে দাঁড়ায় রহমত।
: স্যার কি আমাদের এই টাট্টিগুলো দেখে অবাক হলেন? আমাদের এখানে সব টাট্টিই এমন। খুবই ভাল ব্যবস্থা । সবকিছু সরাসরি হাওড়ের পানিতে পড়ে ভেসে যায়।
রফিক রহমতরে সঙ্গে এ প্রসঙ্গ আর আলাপ না করে বলল,
:চল আমাকে গ্রামটা ঘুরে দেখাবে। রাস্তায় যাদের সাথে দেখা হল তাদের প্রত্যেককেই সাড়ম্বরে রফিকের পরিচয় দিতে থাকে রহমত। রফিক যে আল্লাহর রহমত নিয়ে এসেছে তাদের ত্রাণ করার জন্য তা জানতে আর কারো বাকি রইল না। রফিক যতো বারণ করে রহমত ততোই বেশি করে বলতে থাকে। হঠাৎ হাসতে শুরু করে রহমত । হাসছে তো হাসছেই। হাসি আর থামতেই চায় না। রফিক কোন কারণ খুঁজে পায়না। প্রশ্ন করেও উত্তর পায় না। রহমত হাসিতে ভেঙ্গে চুরে যাচ্ছে যেন। ঠিক এই সময় সামনে দিয়ে দ্রুত এগিয়ে এলো এক লোক। রফিকের দিকে ফিরে ও তাকালোনা। ও পাশ দিয়ে যাবার সময় রহমত হাসতে হাসতে দু বার বিদ্রুপের ভঙ্গিতে ডেকে উঠল, ল্যাম ল্যাম।
( চলবে)
Facebook Comments Sync