লকডাউন/ অনুপা দেওয়ানজী
– হ্যালো করোনা কেমন আছিস ? সেই যে গেলি আজও ফেরার নামটি নেই? ফিরবি কবে দাদুভাই ?
-কে? প্লেগ দাদু? তোফা আছি দাদু। আমার জন্যে চিন্তা কোর না।
– অসুবিধে হচ্ছে নাকি ওখানে? যাওয়ার সময়ে কোন অসুবিধে হয়নি তো?
– মোটেই না দাদু। চীনের উহানে পৌঁছার সাথে সাথে বাদুড়ের শরীরে ঢুকে পড়েছিলাম।
তুমি তো আসার আগে আমাকে বলেই দিয়েছিলে এখানকার মানুষ ইঁদুর, বাদুড়, কুকুর,সাপ,ব্যাঙ,,নানারকম পোকা খেতে খুব ভালোবাসে।
সেই বাদুড়ের স্যুপই বুঝলে? মিসেস ওয়েই গুইজিয়ান নামে এক চীনা ভদ্রমহিলা এক চামচ ঠোঁটে ছুঁয়েই যেই তৃপ্তিতে আহ্ বলে উঠলেন আমিও দেরি না করে তার লিপস্টিপ মাখা ঠোঁটে চুমু দিয়ে সোজা তার ফুসফুসের ভেতরে ঢুকে পড়লাম ।
– বাঃ তুই তো খুব সাহসী ছেলে দেখছি! চুমু টুমুও দিতে শিখে ফেলেছিস দেখছি?
দেখতে হবে না নাতিটা কার?
তারপর নূতন আর কি খবর বল?
-তারপরই তো শুরু হয়ে গেলো উহানের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।
– বিন্দাস আছিস তবে।
তা বলতে পারো। আমার জন্যে একদম ভেবো না। আপাতত শুধু এটুকুই জেনে রাখো তোমার নাতি বিশ্বের সর্ববৃহৎ এক ইতিহাস রচনাতে হাত দিয়েছে।
– বলিস কী দাদুভাই ?
– তবে আর বলছি কী তোমায়? এই ইতিহাসের কথা ভেবে ভেবেই তো বিশ্বের তাবড় তাবড় রথী মহারথীদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
আমাকে তাই ওরা ঝেঁটিয়ে বিদায় করবার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে।
– লাগুক তুইও কিন্তু ছাড়বি না দাদুভাই।
মানুষের শরীরে জন্ম নেয়ার ইচ্ছেটা তো আমাদের মোটেই ছিলো না।কিন্তু আমাদেরও তো বাঁচতে হবে।ওরাও জানে স্তন্যপায়ী প্রাণির শরীর ছাড়া আমরা বাঁচি না। তারপরেও আমরা তো কখনও তাদের বিরুদ্ধে যাইনি।ওরাই বরং আমাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে,যে সব প্রাণিদের শরীরে আমরা বাসা বানিয়ে থাকতাম তাদের হত্যা করেছে।
বাদুড় আমাদের বন্ধু। তার শরীরেই তাই আমরা ঘর সংসার বাঁধি। পৃথিবীতে এত খাবার থাকতে তাদের লকলকে জিভ যদি বাদুড়ের মাংসের জন্যে লালায়িত হতে থাকে তাহলে আমরাই বা বাঁচি কি করে বল?
– জানি দাদু এজন্যেই আমি ওদের শরীরে ঢুকে পড়েছি। পারলে সংগ্রাম করে টিকুক এবার।
– কেমন বুঝছিস?
– বাদুড় যা সহ্য করতে পারে মানুষ তা পারবে বলে মনে হচ্ছে না দাদু।
-তা ইতিহাসটা তুই রচনা করতে পারবি তো?
-দাদু আমার অনেক আগেই তোমরা মানুষের শরীরে জন্ম নিয়ে ইতিহাস রচনার কাজ অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছিলে। আমি তো তোমাদের উত্তরসূরী মাত্র। তুমি সার্সচাচ্চু,মার্সভাই,ডেঙ্গিদিদি সবার আশীর্বাদ নিয়েই আমি এই ইতিহাস রচনায় হাত দিয়েছি।
– মিসেস গুইজিয়ান এখন কেমন আছে?
– তাঁর খবর জানি না। আমি ক বে তাঁর শরীর থেকে গুটিগুটি করে বেরিয়ে পড়েই ফ্রান্স,কানাডা,ইতালি , জার্মান,অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন, বলতে পারো বিশ্বের প্রায় সব দেশ ঘুরে ঘুরে সবে জমিয়ে বসেছিলাম শক্তিশালী আমেরিকাতে। তবে এর মধ্যেই বিশ্বের সবাই আমাকে মারার একটা অস্থায়ী কৌশল বের করে ফেলেছে যার নাম লকডাউন।
– লকডাউন মানে?এটা কি কোন ওষুধ?
– না দাদু ওষুধ বের করার চেষ্টা চলছে। কিছুতেই পারছে না।
লকডাউন মানে দেশ জুড়ে সবখানেই দরজা বন্ধ করে থাকা। তবে এটা স্থায়ী কোনও সমাধান নয়। চিড়িয়াখানার বন্দী প্রাণিদের মতো বন্দিজীবন বলতে পারো। হয়তো এটাও একটা শিক্ষা তাদের। তবে
লকডাউনের জন্যে আমার কাজে একটু বিঘ্ন ঘটছে। উন্নত দেশগুলি এটা মানলেও গরীব দেশে মেনে চলা সম্ভব না। তাই বাংলাদেশে চলে এসেছি।
এখানে লকডাউন কেউ মানে না। আমিও তাই মহানন্দে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
ইতিহাসটা এত তাড়াতাড়ি শেষ করে দিতে চাই না দাদু। এখুনি ফিরে যাবার ইচ্ছেও তাই নেই।
– ভালো থাকিস দাদু।
– তুমিও ভালো থেকো।
-বাই
-বাই বাই।
Facebook Comments Sync