মার্কিন কবি ও গীতিকার অ্যালেন গিন্সবার্গ ও ‘ সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’/ আফরোজা পারভীন

মার্কিন কবি ও গীতিকার অ্যালেন গিন্সবার্গ ও ‘ সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’/ আফরোজা পারভীন

মার্কিন কবি ও গীতিকার অ্যালেন গিন্সবার্গ ও ‘ সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’/ আফরোজা পারভীন

 

(আরউইন অ্যালেন গিন্সবার্গ,জুন ৩, ১৯২৬- এপ্রিল ৫, ১৯৯৭।  মার্কিন কবি, লেখক, গীতিকার। যিনি ১৯৫০-এর দশকের বিট প্রজন্ম এবং বিপরীত সংস্কৃতি আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। গিন্সবার্গ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশী শরণার্থী শিবিরগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। এসময় যশোরের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি কবিতা  লেখেন যার নাম ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড।’ যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে তাঁর বন্ধু বব ডিলান ও অন্যদের সহায়তায় এই কবিতাটিকে তিনি গানে রূপ দিয়েছিলেন। কনসার্টে এই গান গেয়ে তাঁরা বাংলাদেশী শরণার্থীদের সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন)।

 

মার্কিন কবি ও গীতিকার অ্যালেন গিন্সবার্গ- পুরো নাম আরউইন অ্যালেন গিন্সবার্গ। তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্তিম বন্ধু ও একজন মানবতাবাদী।তাঁর নাম উচ্চারণের সাথে সাথে ‘ সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতা বা গানটির কথা মনে পড়ে যায়। যে কবিতা বা গান  মুক্তিযুদ্ধের সময় রচিত। যা পড়লে বর্বর পাকিস্তানিদের নির্মম নৃশংস গণহত্যার চিত্র যেনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমরা প্রবলভাবে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি ।  এখনও  শিহরিত ও রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে শরীর-মন।  ভিজে যায় চোখ এবং মন। মন নিমিষে চলে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধের  সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে ।

‘ সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ এমনই একটি কবিতা যা পড়লে না কেঁদে উপায় নেই। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে কালজয়ী কবিতাটির পঙক্তিমালাগুলো এখনও জীবন্ত। ১৫২ লাইনের এই কবিতা যেন চোখের জলে লেখা ।

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ ১৯২৬ সালের ০৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে জন্ম নেন। ০৫ এপ্রিল অ্যালেন গিন্সবার্গের মৃত্যুদিবস। ১৯৯৭ সালে নিউইয়র্কে তিনি পরলোকগমন করেন।  রেখে যান একাত্তরে হানাদার পাকিস্তানিদের বর্বরতার  নিরব সাক্ষী তার অমর কাব্য ‘ সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’।

 

 সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড- অ্যালেন গিন্সবার্গ

 

শত শত চোখ আকাশটা দেখে

শত শত শত মানুষের দল

যশোর রোডের দু’ধারে বসত

বাঁশের ছাউনি, কাদামাটি জল

 

কাদামাটি মাখা মানুষের দল

গাদাগাদি হয়ে আকাশটা দেখে

আকাশে বসত মরা ঈশ্বর

নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে

 

ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে

যুদ্ধে ছিন্ন ঘরবাড়ি দেশ

মাথার ভিতরে বোমারু বিমান

এই কালো রাত কবে হবে শেষ

 

শত শত মুখ হায় একাত্তর

যশোর রোড যে কত কথা বলে

এত মরা মুখ আধ মরা পায়ে

পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে

সময় চলেছে রাজপথ ধরে

যশোর রোডেতে মানুষ মিছিল

 সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর

গরুগাড়ি কাদা রাস্তা পিচ্ছিল

 

লক্ষ মানুষ ভাত চেয়ে মরে

লক্ষ মানুষ শোকে ভেসে যায়

ঘরহীন ভাসে শত শত লোক

লক্ষ জননী পাগলের প্রায়

 

রিফিউজি ঘরে খিদে পাওয়া শিশু

 পেটগুলো সব ফুলে ফেঁপে ওঠে

এইটুকু শিশু এতবড় চোখ

দিশেহারা মা কার কাছে ছোটে

 

 সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর

এতো এতো শুধু মানুষের মুখ

যুদ্ধ মৃত্যু তবুও স্বপ্ন

ফসলের মাঠ ফেলে আসা সুখ

কার কাছে বলি ভাত রুটি কথা

কাকে বলি কর কর কর ত্রাণ

কাকে বলি ওগো মৃত্যু থামাও

মরে যাওয়া বুকে এনে দাও প্রাণ

 

কাঁদো কাঁদো তুমি মানুষের দল

 তোমার শরীর ক্ষত দিয়ে ঢাকা

জননীর কোলে আধপেটা শিশু

এ কেমন বাঁচা, বেঁচে মরে থাকা

 

 ছোট ছোট তুমি মানুষের দল

 তোমার ঘরেও মৃত্যুর ছায়া

গুলিতে ছিন্ন দেহ-মন-মাটি

ঘর ছেড়েছো তো মাটি মিছে মায়া

 

 সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর

ঘর ভেঙ্গে গেছে যুদ্ধের ঝড়ে

যশোর রোডের দু’ধারে মানুষ

এত এত লোক শুধু কেন মরে

 

শত শত চোখ আকাশটা দেখে

শত শত শত শিশু মরে গেল

যশোর রোডের যুদ্ধক্ষেত্রে

 ছেঁড়া সংসার সব এলোমেলো

 

কাদামাটি মাখা মানুষের দল

গাদাগাদি হয়ে আকাশটা দেখে

আকাশে বসত মরা ঈশ্বর

নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে

 

ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে

যুদ্ধে ছিন্ন ঘর-বাড়ি-দেশ

মাথার ভিতরে বোমারু বিমান

এই কালো রাত কবে হবে শেষ

 

শত শত মুখ হায় একাত্তর

যশোর রোড যে কত কথা বলে

এত মরা মুখ আধ মরা পায়ে

পূর্ব বাংলা কলকাতা চলে।’

২১.৩.১৭ পান্থপথ

আফরোজা পারভীন
আফরোজা পারভীন