নীল নদের মাছ/ নন্দিতা আহমেদ

নন্দিতা আহমেদ

নন্দিতা আহমেদ

 

মাছ ধরার নেশা পাগল করা নেশা, রাত নেই দিন নেই বসে থাকতে থাকতে সময় যে কিভাবে গড়িয়ে যায় একদম টের পাওয়া যায়না। যদি সিগারেট টানার অভ্যাস থাকে সাথে চা তবে তো কথাই নেই, সময়ের ভুড়ি ভোজন আর- কি! তবে দক্ষিণ সুদানে মাছ ধরা এতো সহজ নয়, আনন্দ থাকলেও মাঝেমধ্যে অনেক ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করে আর তা এড়িয়ে চলতে হয়। বিকাল শেষ তো তল্পিতল্পা গুটিয়ে প্রস্থান করাটাই যুক্তিযুক্ত বা উত্তম।

 

সুদানের মাছ ধরার একমাত্র স্থান হচ্ছে নীল নদ আর এর শাখা প্রশাখায়। বাংলাদেশে যেসব মাছ পাওয়া যায় তার প্রায় সবই পাওয়া যায় সেখানে বিশেষ করে নীল নদের শাখা থেকে উৎপন্ন বিল বা হাওড়ে। কই, পুটি, শিং, মাগুর, টাকি বা পাবদা মাছ। পাবদা মাছগুলো আকারে বেশ বড় হয়। তবে নদীতে এসব দেখা মেলেনা সহজে।

 

একবার বসে আছি নীল নদের উপর একটি ফেরীর উপর। মাছ ধরছিলাম আর দূরে বাইনো দিয়ে কুমির দেখছিলাম। এই নদীতে প্রচুর কুমির তাই সহজে কেউ পানিতে নামে না। সেদিন কুমির নয় পটকা মাছ নিয়ে বিপাকে পড়েছিলাম। হঠাৎ পটকা মাছ ধরে ফেললাম। মাছ রেখে দিয়েছিলাম পাশে।,এর মধ্যেই নদীর পারে কিছু সংখ্যক সুদানীজ এসে হাজির। মাছটি দেখে সুদানীরা চিল্লাচিল্লি শুরু করলো। কিছুই বুঝিনা ভাষাগত কারণে। তবে বুঝেছিলাম তারা বুঝাতে চাচ্ছিল এটি বিষাক্ত মাছ, খাবে না ছেড়ে দাও। আমি কিছুক্ষণ মজা নিলাম ছাড়লাম না। কিন্তু ওরা নাছোড়বান্দা । মানতে চাইলোনা। আমার থেকে মাছটি কেড়ে নিয়ে নদীতে ফেলে দিল তা। সেদিন ভাগ্যটাই খারাপ কিছুই পাওয়া গেল না আর। সব দিন ভালো যায় না।

 

আর একদিনের গল্প, সেই মাছ ধরা নিয়েই। এবার গেলাম এক শাখা নদীতে, আশেপাশে প্রচুর ঝোপঝাড়, এখানে সাপের ভয়। তবুও গাছের ডালপালা কেটে গ্রাউন্ড সীট বিছিয়ে বসে পড়লাম মাছ ধরতে। প্রচুর পাবদা মাছ পাচ্ছিলাম সেখানে। হঠাৎ একটি মোটামুটি সাইজের মাছ বাধিয়ে ফেললাম। উঠাতে পারলাম না, নদীর জঙ্গলে বেধে গেল তা। আমার রানার সামছু বেশ তৎপর, নেমে পড়লো পানিতে। মাছটি কাছেই ছিল, তা ধরেই সে চিৎকার করে উঠলো, ‘স্যার মরে তোগেলাম, কারেন্ট।’ উঠানো হলো সামছুকে সাথে মাছ। আমি মাছ ধরার সাথে সাথে ইলেক্ট্রিক একটা শক খেয়ে পড়ে গেলাম। নিমিষেই যে কি ঘটে গেল বুঝতে পারলাম না। পাশেই আমার ড্রাইভার ইব্রাহিম ছিল।  কিন্তু তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেলনা, কখন যে কেটে পড়েছে সে!

 

আর থাকলাম না সেখানে।  মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো। দেখলাম ইব্রাহিম গাড়ি স্টার্ট করে বসে আছে। শুধু বললো, স্যার বিরাট সাপ। খুব ভয় পাইছি। প্রতি উত্তরে বললাম আমাকে বললে না কেন!!! সে চুপ। এদিকে কুক হাসেম সেই মাছটি সাবধানে নিয়ে এসেছে। বললো, স্যার এই মাছের নাম না-কি ইলেক্ট্রিক ফিস, এক সুদানি বললো। বললাম নিয়ে চলো এটিকে, রান্না করা হবে, ভূরিভোজন।

 

ক্যাম্পে সেই মাছের উপর গবেষণা হলো। তার দিয়ে তার উপর ধরে দেখা গেল লাইট জ্বলে!!

 

এটিকে লবণ দিয়ে মেরে কাটা হলো, শরীরের চারদিকে তারের মতো পেচানো একপ্রকার মাংসালো লাইন। অদ্ভুত সৃষ্টি। ফেলানো হয়নি, মজা করেই খাওয়া হয়েছে তা। এই মাছটি ছিল ইলেক্ট্রিক ক্যাট ফিস।

%d bloggers like this: