অরুন্ধতী রায়:  কলম আর আন্দোলন মিলেমিশে একাকার/ আফরোজা পারভীন

অরুন্ধতী রায়

অরুন্ধতী রায় তাঁর লেখা এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে  সারা পৃথিবীতে পরিচিতি  পেয়েছেন । আজ তিনি বিখ্যাত কিন্তু তাঁর চলার পথটি সহজ আর মসৃণ ছিল না। আজও  সে পথ মসৃণ নয়। তাই মাঝে মাঝেই তাঁর লেখা, বক্তব্য, আন্দোলন নিয়ে প্রশংসা যেমন হয়, তমনই  আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে । কখনও দেশের মধ্যে, কখনও  পৃথিবীব্যাপী। কারণ যেখানেই অন্যায়, তা যেকোনো ধরণের অন্যায়ই হোক না কেন, সেখানেই অরুন্ধতীর প্রতিবাদী কন্ঠ। মানবাধিকার আর পরিবেশ যেখানে যতবারই হুমকিতে পড়েছে তিনি ততবারই কথা বলেছেন। 

কাছের মানুষেরা তাকে ডাকেন রায় বলে। স্থাপত্যের বন্ধুরা ডাকেন এস এ রায় (সুজানা অরুন্ধতী রায়) । অপরিচিতদের কাছে তিনি অরুন্ধতী। জন্মেছিলেন ১৯৬১ সালের ২৪ নভেম্বর, ভারতের মেঘালয়ের শিলং-এ।  বাবার জন্মভিটে বাংলাদেশের বরিশাল। বাবা রঞ্জিত রায় কলকাতার একজন বাঙালি হিন্দু। রঞ্জিত রায় ছিলেন চা শিল্পপতি। মা ম্যারি রায় ছিলেন একজন নারী অধিকারকর্মী। যিনি ভারতীয় খ্রিস্টান নারীদের পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। দুই বছর বয়সে বাবার সঙ্গে মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। পরে মা অরুন্ধতী ও তার ভাইকে নিয়ে কেরালায় ফিরে আসেন। দুই সন্তান নিয়ে শুরু হয় মায়ের সংগ্রামী জীবন।

মাঝে কিছুদিন উটি-তে নানার বাড়িতেও কাটান অরুন্ধতী । ৫ বছর বয়সে পুনরায় ফিরে আসেন কেরালায়। সেখানে তাঁর মা একটি স্কুল চালু করেন। অরুন্ধতীর ছোটবেলা কেটেছে  কেরালার নৈসর্গিক  সৌন্দর্যকে সাথি করে।

 কোট্টায়ামের ‘করপাস ক্রিস্টি’ স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন অরুন্ধতী। এরপর তামিলনাড়ুর নীলগিরিতে লাভডেল লরেন্স স্কুলে পড়াশুনা করেন।  পরে দিল্লীর স্কুল অব প্ল্যানিং এন্ড আর্কিটেকচার থেকে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করেন। এখানে আর্কিটেক্ট জেরার্ড দা কানহা’র সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়।  দিল্লী এবং গোয়ায় বেশ কিছুদিন একসাথে বসবাসের পর তাদের বিচ্ছেদ হয়।

দিল্লীর ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট আরবান অ্যাফেয়ার্স’-এ কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে চিত্রনির্মাতা প্রদীপ কৃষাণের সাথে পরিচয় হয় তাঁর। তাঁর  নির্মিত ‘ম্যাসেই সাহিব’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।পরবর্তীতে দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির মিলিত প্রচেষ্টায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে একটি টিভি সিরিজ নির্মিত হয়। নির্মিত হয় ‘ইন হুয়িচ অ্যানি গিভস ইট দোজ ওয়ানস’ (১৯৮৯) ও ‘ইলেকট্রিক মুন’ (১৯৯২) নামে দুটি চলচ্চিত্র। প্রথমটির জন্যে সেরা চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান অরুন্ধতী। দুটো চলচ্চিত্রেরই চিত্রনাট্যকার ছিলেন তিনি।‘ইন হুইচ অ্যানি গিভস ইট দোস ওয়ান্স’ চলচ্চিত্রটি স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্রী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে নির্মিত। এ  চলচ্চিত্রে অরুন্ধতী অভিনয়ও করেছেন। 

চলচ্চিত্রে আগ্রহ হারান একসময়। প্রদীপের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদও হয়ে যায়। অ্যারোবিক ক্লাস চালানোসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে আত্মনিয়োগ করেন । লেখা চলতে থাকে। ১৯৯৭ সালে প্রথম উপন্যাস ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ প্রকাশিত হয়।  এ উপন্যাস তাঁকে তুঙ্গস্পর্শী  জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এনে দেয় আর্থিক সচ্ছ¡লতা ।‘দ্য গড অব স্মল থিংস’-এর পান্ডুলিপি প্রকাশককে দিয়ে প্রকাশের আগেই পাঁচ লাখ পাউন্ড পেয়েছিলেন।এই এক বই তাকে বিশ্বসেরা লেখকদের কাতারে তুলে  দেয়।  এ উপন্যাসের জন্যম্যান বুকার পুরস্কার পান অরুন্ধতী।  সে সময় এটি ছিল ভারতে বসবাসরত কোনো ভারতীয় নাগরিক রচিত সবচেয়ে অধিক বিক্রিত বই।অরুন্ধতী রায় তাঁর ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ বইটি উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর মা ও ভাইকে। 

এইমেনেন বাসকালীন সময়ে অরুন্ধতীর  ছেলেবেলার  অনেকটাই ধরা আছে উপন্যাসটিতে। আছে সে সময়ের  স্মৃতির ছবি। টাইম, গার্ডিয়ান, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, টরেন্টো স্টার প্রভৃতি নামকরা ম্যাগাজিন ভূয়সী প্রশংসা করছে বইটির।  তবে নিজের বাসভূমি কেরালার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ই. কে. নয়নজার বইটির সমালোচনা করেন। তিনি বইটিতে  অনবদমিত যৌনতার ব্যবহারের অভিযোগ আনেন, অভিযোগ আনেন অশ্লীলতার।

এরপর তিনি The Banyan Tree নামে একটি টিভি সিরিয়াল এবং DAM/ AGE:A Film with Arundhuty Ray  নামে একটি ডকুমেন্টরি নির্মাণ করেন। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে সামাজিক বিষয়াবলির উপর প্রবন্ধ  লেখেন।  সত্য সবসময় কঠিন আর  নগ্ন  হয়। সেই সত্যের পক্ষে কথা বলে বিতর্কিতও হন বারবার।

দীর্ঘ বিশ বছরের বিরতির পর তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব দ্য আটমোস্ট হ্যাপিনেস’ প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। বইটি সে বছরের বুকার মনোনয়ন তালিকায় স্থান পায়।

‘দ্য গড অব স্মল থিংকস’ অরুন্ধতীর খানিকটা আত্মজৈবনিক উপন্যাস। উপন্যাসের কেন্দ্রে আছে আম্মু নামের এব নারী। যিনি এস্থা ও রোহেল নামে দুই জমজ শিশুর মা। দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের শীনাচর নদীর তীরেএক ছোট্ট শহর এইমেনেন। মালবার কালিকট কোচিনসহ ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান রয়েছে  কেরালায়। একসময় পর্তুগীজ ইংরেজ ইউরোপিয়ানদের মাধ্যমে এ রাজ্যে খৃষ্টধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটে। আস্তে আস্তে  প্রভাব বিস্তার করে। এ স্থানে  এসেছিলেন সিরিয়ান খ্রিষ্টানরাও। এ রাজ্যে তাই খ্রিষ্টানের সংখ্যা অনেক, শিক্ষার হারও বেশি। অন্যদিকে মার্কসবাদী নেতা কমরেড ই.এম এস নাম্বুদিরিপাদের নেতৃত্বে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বামপন্থী সরকার  প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ রাজ্যে ১৯৫৭ ও ১৯৬৭ সালে। কিন্তু হলে কি হবে। কোনটিরই সুফল ভোগ করেনি সাধারণ জনগণ। যে অভিজাত ব্রাক্ষ্¥ণরা খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তারা হলেন অভিজাত খ্রিষ্টান। আর গরিবরা সেই হীন নিচ। একই ঘটনা ঘটল কমরেডদের ক্ষেত্রে।  ন্যায্যতা আর সাম্যবাদের ধ্বজাধারী কমরেডরা বড়ই রয়ে গেলেন। বড় কমরেডের কাছে নিতান্তই ক্ষুদ্র হয়ে রইল গরিব কমরেডরা। ফলে যা হবার হলো। সশস্ত্র নক্সালবাদী আন্দোলন শুরু হলো। বর্ণবাদ জাতিভেদ দুর্নীতি সন্ত্রাস রাহাজানি কোনোটির থেকেই মুক্ত ছিল না এলাকাটি। এসব থেকে মুক্তির জন্যই আন্দোলন।

আম্মু ছিল অভিজাত খ্রিস্টান ইপে পরিবারের মেয়ে। তার বাবা পাপাচি ব্রিটিশরাজেরঅধীনে দিল্লিতে রাজকীয় পতঙ্কবিদের কাজ করতেন। দাদা রেভারেন্ড খ্রিষ্টধর্মের মানুষদের মাঝে খুব সম্ভ্রান্ত ছিলেন। বড় ভাই চাকো ছিলেন অক্সফোর্ডের নামকরা বিদ্বান।  তাদের জোটখাট জমিদারি ছিল। আর ছিল ‘প্যারাডাইস পিকলস ও প্রিজার্ভস’ নামে একটা আচার কারখানা। মা মামাচি সেটা দেখাশুনা করতেন। পরেচাকো সেটার ভার নেন। পরিবারে ছিলেন ফুফু বেবী কোচ্চাম্মা। তিনি দাদার খুব আদরের মেয়ে ছিলেন। প্রথম সমস্যা তাকে নিয়েই হলো। আঠারো বছর বয়সে তিনি সুদর্শন আইরিস ধর্মযাজক ফাদার মুলিগানকে ভালোবেসে ফেলেন। ফাদার সপ্তাহে একদিন আসতেন রেভারেন্ডের কাছে ধর্ম আলোচনা করতে। পিতার বিরুদ্ধে  গিয়ে কোচ্চাম্মা ক্যাথলিক হলেন। মাদ্রাজের এক কনভেন্টে শিক্ষানবীশির দীক্ষাও নেন। তিনি ভেবেছিলেন এভাবে তিনি ফাদারকে পাবেন। বাস্তবে সেটি ঘটেনি। ফাদার পরে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। কোচ্চাম্মা বিয়ে করেননি। চির কুমারী থেকে যান।

এদিকে আম্মুর পিতা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে গ্রামে চলে আসেন। আম্মু তখন সবে স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে। কিন্তু পিতা মনে করতেন মেয়েদের কলেজে লেখাপড়ার করার কোনো প্রয়োজন নেই। বাজে পয়সা খরচ। তাদের একমাত্র কাজ বিয়ের জন্য অপেক্ষা করা। আম্মু  অপেক্ষা করেন। কিন্তু বিয়ে হয় না। এ ব্যাপারে বাবা মায়ের কোনো তোড়জোড়ও চোখে পড়ে না আম্মুর। বিয়ে মানে  তো যৌতুক। বড় অঙ্কের কোনো যৌতুকের ঘোষণাও দেন না বাবা মা যে সেই প্রলোভনে পাত্রপক্ষ আসবে। বাবা ছিলেন ভীষণ বদমেজাজি। একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ আর পাথুরে সময় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে আম্মs। সে ছুটি কাটাতে কলকাতায় এক দূর সম্পর্কের ফুফুুর বাড়িতে যায়। সেখানে এক বৌভাত অনুষ্ঠানে তার দেখা হয় ভাবী স্বামীর সাথে। লোকটা বেটেখাটো তবে সুদর্শন। সে আসামের এক চা বাগানে সহকারী ব্যবস্থাপকের কাজ করে। শ্বশুর রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান। বিত্তশালী পরিবার। সেও ছুটি কাটাতে কলকাতা এসেছে। ৫ দিনের মাথায় আম্মুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আম্মু তার বিয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাবা মাকে চিঠি দেয়। সে চিঠির উত্তর তারা দেন না। 

জাঁকজমক করেবিয়ে হয়। অনেক গয়না দেন শ্বশুর। বিয়ের পর ওরা চলে যায় আসাম। ১৯৬৭  সালের অক্টোবর মাসে ভারতের সাথে চীনের যুদ্ধ বাধে। আম্মু তখন আটমাসের গর্ভবতী। নভেম্বর মাসে প্রসব দেবনা ওঠে। বাসে প্রচন্ড কষ্টে দাঁত কামড়ে মানুষের দয়া করে দেয়া সিটে বসে সে হাসপাতালে যায় । মানুষ তখন বলাবলি করছিল চীন ভারত দখল করে নিয়েছে। হাসপাতালে মোমবাতির আলো আর জানালাবন্ধ ঘরে  জমজ সন্তান প্রসব করে আম্মু। এস্থার আঠারো মিনিট পরে জন্ম নেয় রোহেল। জমজ সন্তান প্রসবের খবরে ভীত আম্মু বার বার সন্তানদের হাত পা আঙ্গুল নখ চোখ খুঁটিয়ে দেখ। না কোনো সমস্যা নেই, কোনো শারীরিক ক্রুটি নিয়ে জন্মায়নি তার সন্তানরা ।

আম্মু  দেখতে খুবই সুন্দরী আর আধুনিক। পিঠ খোলা ব্লাউজ ও সোনালী চেনের ভ্যাানিটি ব্যাগ ব্যবহার করতেন। তিনি আঙ্গুল গোল করে সিগারেটের ধোঁয়ার বৃত্ত বানাতে পারতেন। চা বাগানের মালিকদের ক্লাবের মূল আকর্ষণে পরিণত হন তিনি। মালিকরা আগেই কর্মচারিদের স্ত্রীদের ভোগ করেছিল। এবার নজর পড়ে কর্মকর্তাদের স্ত্রীর উপর। ম্যানেজার মি.হলিক স্বামীকে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে আম্মুর সেবা পেতে চায়। মাতাল স্বামী সব বুঝে চুপ করে থাকে । শুরু হয় মাতলামি মারপিট ভাঙচুর চিৎকার চেঁচামেচি। একসময় যখন এই মারধোর সন্তানদের দিকে ধাবিত হয় তখন সন্তানদের নিয়ে আম্মু ফিরে আসে নিজ গ্রামে। যেখান থেকে আলোকিত জীবনের সন্ধানে দু বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল। তখন সে ছিল একা, এখন সাথে দুই সন্তান। তখন তার অনেক স্বপ্ন আর ইচ্ছে ছিল, এখন নেই।

এরপর কাহিনি দ্রুত এগোয়। বিশাল ক্যানভাসের এই উপন্যাসে আমরা জমজ ভাইবোন দুটোকে পাই যেন একজন হিসেবে। তারা একই ভাবনা ভাবত, একই স্বপ্ন দেখত। ওরাও ভাবত দুজন মিলে একজন। কিন্তু যা হয়,এক ওরা থাকতে পারেনা। আলাদা হতে হয় বাস্তবতার নির্মম কষাঘাতে। ভেলুথা নামের নিম্ন বর্ণের কম্যুনিস্ট এক পারাভান তাদের খুব ভালবাসত।আম্মুর কাছে এটাই ছিল ভেলুথার যোগ্যতা। আম্মুর জীবনে সন্তান দুটিই ছিল সব। তার মনে হত ভেলুথা যেন তার সন্তানদের বাবার অভাব পূরণ করছে। সে ভেলুথার সাথে নিষিদ্ধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনা জানাজানি হলে মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বেবী কোচাম্মা আম্মুকে ঘরে আটকে রেখে ভেলুথার বিরুদ্ধে আম্মুকে ধর্ষণের মামলা দেয়া হয়। সাথে জুড়ে দেয়া হয়  জো মলকে হত্যার অভিযোগ।  জো মল চাকো আর মার্গারেটের সন্তান। চাকোর স্ত্রী মার্গারেট দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল। মায়ের দ্বিতীয় স্বামীকে জো নিজের পিতার মতো ভালোবাসতো। এই পিতার মৃত্যুশোক ভুলতে সে এখানে এসেছিল।  এস্থা আর রোহেলকেনিজেদের আর তাদের মায়ের  জেলের ভয় দেখিয়ে বাধ্য করা হয় ভালুথার বিরুদ্ধে মিথ্যে সাক্ষি দিতে। ভালুথা সাহায্যের জন্য বামপন্থী নেতা কমরেড পল্লাইয়ের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু বর্ণবাদি কমরেড সাহায্য করেনি। বরং ছয় জন মিলে পিটিয়েছিল ভালুথাকে। ভালুথা মারা যায়। আম্মু এস্থা  রোহেল তিনজনই ভালুথার মৃত্যুর জন্য নিজেদের দায়ি করত। চাকো একসময় আম্মুকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। নিরুপায় আম্মু এস্থাকে পাঠিয়ে দেয় তার বাবার কাছে। যাবার সময় অনেক জিনিসের সাথে কগজ কলম দিয়ে বলে,  ‘বল আমাকে লিখবি, লিখবি  তো? বল রোহেলকে ভুলবি না। ভালো একটা চাকরি জোগাড় করে আবার তোকে আমার কাছে নিয়ে আসব।’ আম্মুর সাথে আর এস্থার দেখা হয়নি। চাকরি জোগাড় করতে গিয়ে সস্তা হোটেলে মারা যায় আম্মু। মারা যাবার আগে শুধু বমি করত আর কাশত। আম্মুর মৃত্যুর পর তার অন্ত্যষ্টেক্রিয়া করতে রাজি হয়না কোন পাদরি। চাকো আর রোহেল তাকে শ্মশানে পুড়ায়। পুড়িয়ে ছাই নিয়ে আসে। শ্মশানের রশিদ রোহেল হারিয়ে ফেলে। মনে ভাবে, এস্থা থাকলে গুছিয়ে রাখত । এস্থার ছিল গুছিয়ে রাখা স্বভাব। এভাবে সে প্রতিনিয়ত  ভাইকে মনে করে।

আম্মুর মৃত্যুর পর রোহেলকেও পাঠিয়ে দেয়া হয় হোস্টেলে । সে এক পর্যায়ে আর্কিটেকচারে পড়াশুনা করে। সেখানেই পরিচয় হয় আমেরিকান ছাত্র ল্যারির সাথে। ল্যারি রোহেলের গভীর চোখের প্রেমে পড়ে । ওরা বিয়ে করে আমেরিকা চলে যায়। এক সময় ল্যারির মোহ কেটে যায়। ওদের বিচ্ছেদ হয়। 

বাবার কাছে যাবার পর থেকেই এস্থা একেবারেই নিজের মাঝে গুটিয়ে যায়। একসময় বাবা চাকরি নিয়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। এস্থা ফিরে আসে নিজের গ্রামে। গ্রাম থেকে  রোহেলের কাছে এস্থার ফিরে আসার খবর যায় চিঠিতে। সেও ফিরেআসে আমেরিকা থেকে। দু ভাইবোনোর দেখা হয়, চোখাচোখি হয়। ওরা কথা বলে না। ওদের বয়স এখন একত্রিশ। এই বয়সেই ওদেরমা আম্মু মারা গিয়েছিল। একত্রিশ বয়সটা হয়ত খুব বেশি নয়, আবার কমও নয়। তবে মারা যাবার জন্য যথেষ্ট। এখানেই কাহিনি শেষ করেছেন অরুন্ধতী।

স্পষ্টতই বোঝা যায়, এটি কেবল কল্পকাহিনি নির্ভর উপন্যাস নয়। এ উপন্যাসে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রেম, লড়াই, পরম্পরা, বিশ্বাস, নিয়তি । নিজে জাতপাত, শ্রেণিবৈষম্য মানেননি তাই সজাগ দৃষ্টি রেখে তুলে এনেছেন শ্রেণিবৈষম্য, জাতপাতের বিভেদ, লুটেরা আর চরিত্রহীনদের সাথে স্থানীয় বুর্জোয়াদের আঁতাত। চা বাগানের মালিকদের চরিত্রহীনতা, নির্যাতন, কমরেডদেরস্বরূপ। ধর্মে দীক্ষিত করার নামে হীন নিচ করে রাখা, নারীর প্রতি বৈষম্য  অন্যায্যতা, উচ্চ বংশের মানুষের দম্ভ.পুলিশি নৃশংসতা, গণতান্ত্রিক সুবিধাভোগী ও চরমপন্থীদের দৌরাত্ম্য। কিছুই বাদ যায়নি তাঁর লেখা থেকে। প্রেমকে দেখেছেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। তাঁর লেখা  থেকে বাদ পড়েনি অবশ্যম্ভাবী নিয়তির কথা। নিয়তি বড় কঠিন জিনিস।  নিয়মির নিষ্ঠুর খেল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না মানুষ। হ্যাঁ, অরুন্ধতী যতই আপসহীন নারী হননা কেন, নিয়তির কার্যকারিতাকে অস্বীকার করেননি তিনি।

এ বইটিতে আমরা একজন আবেগপ্রবণ, প্রবল অনুভূতিসম্পন্ন  লেখককে খুঁজে পাই। মায়ের দ্বিতীয় পক্ষের স্বামীকে বাবা ভাবা নিজের বাবা জীবিত থাকতেও, তার জন্য শোক করা, এটা কেবল অরুন্ধতীর পক্ষেই  লেখা সম্ভব। আবার মানুষের  দ্বৈত সত্তার প্রকাশও দেখি। যে বেবী কোচ্চাম্মা ভালোবেসে চিরকুমারী থেকে যায় সেই কোচাম্মাই ভেলুথা নিম্নবর্ণেরআর কমরেড বলে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে দ্বিধা করেনা। উচ্চতার কী ভীষণ মিথ্যে দম্ভ। এ উপন্যাস এক ঘোর। জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলির যে এত বিশালত্ব আছে এ বই পাঠ না করলে বোঝা যায় না। ভেলুথার মতো নিন্নবর্ণের মানুষরা, যারা শিশুদের হাসায়, আনন্দ দেয় তারা লেখকের চোখে দেবতা, ক্ষুদ্রের দেবতা। যে দেবতা বড়দের নিষ্পেষণে রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে প্রাণ দেয় মাটির পৃথিবীতে । তারপরও সে দেবতা । আম্মু এস্থা রাহেলের মতো অনেক মানুষের দেবতা। 

একজন অনন্যসাধারণ মা পেয়েছিলেন অরুন্ধতী। যে মা শিকল ভেঙেছিলেন। তাঁর মেয়েও ভেঙেছে। দ্য গড অব স্মল থিংকস ও এক শিকল ভাঙার গল্প । মা ও নিজের শৈশব সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে  লেখক বলেছেন,

কেরালায় বংশ পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আপনার যদি বাবা না থাকে তাহলে আপনার কোনো বংশ পরিচয়ই নেই। আপনাকে নাম পরিচয়হীন মানুষ বলা হবে। আমি আয়োমেনে (একটি জায়গার নাম) বড় হয়েছি। যেটি The God of Small Things উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট। এই পরিচয়হীনতাই আমাকে বহিমুর্খী হবার পথ করে দিয়েছে, এখন আমি স্বাচ্ছন্দ্যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে পারি কেননা ভারতের আর আট দশটা মধ্যবিত্ত মেয়ের অবস্থা আমার হয়নি। আমার বাবা ছিলনা, তাই কারো ভরণপোষণের বিনিময়ে আমাকে মারও (মাঝে মাঝে) খেতে হয়নি। আমার কোন গোত্র, শ্রেণি কিংবা ধর্ম ছিলো না। আমার চোখে প্রথাসিদ্ধতার ঠুলি পরানো ছিলো না। যা আমাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে হতো। মাঝে মাঝে ভাবি আমি সম্ভবত সেই মেয়ে যাকে তার মা বলতেন যাই করোনা কেন, কখনো বিয়ে করোনা (হাসি)।

অরুন্ধতীর মা একটা স্কুল চালাতেন। সেই স্কুল ও মা সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে অরুন্ধতী বলেন:

আমার মা ছিলেন Fellini film হতে বিচ্যুত কারো মতো। তিনি এমন একজন নারী যার কখোনো কোনো পুরুষের প্রয়োজন পড়ে না। এটা খুব চমৎকার ব্যাপার। (যদিও এর জন্যে তাকে ভুগতে হয়)। আমার মা একটি স্কুল চালাতেন। আর স্কুলটি আশ্চর্য জনকভাবে সফল। বাবা মা’রা বাচ্চার জন্মের আগেই তাদের সন্তানটির জন্যে সেই স্কুলে আসন সংরক্ষণ করে রাখতো। তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারতো না আমার সাথে বা মায়ের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে। কারণ সমস্যাটা হলো আমরা দুজন তাদের ভাষায়, ‘প্রথাবিরোধী নারী’। কথা প্রসঙ্গে একটু বলি, আমার মা কেরালাতে সুপরিচিত কারণ ১৯৮৬ সালে তিনি একটি জনস্বার্থ মামলায় জয়লাভ করেন। এই মামলায় তিনি সিরীয় খ্রিষ্ট উত্তরাধিকার আইনকে চ্যালেঞ্জ করেন। যাতে বলা হয়েছে একজন নারী তার পিতার সম্পত্তির চারের একাংশ অথবা ৫,০০০ রুপির মধ্যে যেটি কম সেটি পাবে। ১৯৫৬ সালের আইন পর্যালোচনা করে সুপ্রীম কোর্ট যে রায় দেয় তা নারীকে সমানাধিকার দিয়েছিলো। কিন্তু খুব কম মহিলাই এই অধিকারের সুবিধা ভোগ করতে পারে। এমনকি চার্চের ফাদাররা এমনভাবে উইল লেখে যাতে কন্যারা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী না হয়। এই ধরনের অদ্ভুত নিপীড়ণ ঘটে সেখানে।

প্রথমেই বলেছিলাম তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বার বার কথা বলেছেন। নিজ রাষ্ট্র ভারত থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রসহ দুনিয়ার সব পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন তুলে যাচ্ছেন তিনি।

২০০৮ সালে তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে কাশ্মীরের স্বাধীনতার স্বপক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। ১৮ আগস্ট, ২০০৮ কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবিতে প্রায় ৫ লক্ষ কাশ্মীরি জনতার একটি র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়। অরুন্ধতি মনে করেন, তাদের এই র‌্যালী ছিল ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হবার আকাক্সক্ষার নিদর্শন। তার মতে কাশ্মীরে শান্তি  প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় কাশ্মীরি জনগণকে স্বাধিকার প্রদান করা। এই মতামতের জন্য তিনি কংগ্রেস ও বিজেপি’র তোপের মুখে পড়েন।

নর্মদা ড্যাম প্রজেক্টের বিরুদ্ধে  সোচ্চার ছিলেন অরুন্ধতী। তিনি বলেছিলেন, এই প্রজেক্ট প্রায় আধা মিলিয়ন মানুষকে গৃহহীন করে ছাড়বে এবং তাও কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়া। নিজের বুকার প্রাইজ থেকে পাওয়া ও বই এর স্বত্ত¡ হতে পাওয়া অর্থ তিনি দান করেন ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে’। নর্মদার বাঁধ ইস্যুতে অরুন্ধতী   গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তাঁর এই আন্দোলনও কংগ্রেস ও বিজেপি নেতাদের সমালোচনার শিকার হয়। পরিবেশ ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহও অরুন্ধতির এই আন্দোলনকে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি মনে করেন, মিস রায়ের এই পক্ষ সমর্থন অতিরঞ্জিত ও আত্মকেন্দ্রিক। প্রত্যুত্তরে অরুন্ধতি সোজা বলে দেন,

আমি বিকারগ্রস্ত। আমি ছাদে উঠে চেঁচিয়ে যাচ্ছি, আর উনি আর উনার ফিটফাট শাবকেরা আমায় বলছেন, ‘হিসসস,প্রতিবেশিরা জেগে যাবে! আমি প্রতিবেশীদের জাগাতেই চাই। এটাই আমার উদ্দেশ্য। আমি চাই সবার চোখ খুলুক।

রাজস্থানের পোখরানে ভারত সরকারের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে অরুন্ধতী  লেখেন ‘দ্য এন্ড অব ইমাজিনেশন’। ২০১৩ সালে নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়াকে তিনি একটি ‘ট্র্যাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। পরবর্তী সময়ে ভারতে বর্ধিঞ্চু অসহিঞ্চুতা ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্রতিবাদে সুশীল সমাজের যে অংশটি নিজ নিজ জাতীয় পুরস্কার ফেরত দেন, তাদের মধ্যে অরুন্ধতীও ছিলেন। ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা বলছেন, পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কারণে বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। অরুন্ধতী বলেন, লোকজনকে যখন হত্যা করেন, পিটিয়ে মেরে ফেলেন তখন ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় না? আর পুরস্কার ফেরত দিলেই ভাবর্মূর্তি নষ্ট হলো গেলো? তিনি আরও বলেন,মানুষকে বিনা বিচারে মেরে ফেলা, পুড়িয়ে ফেলা, গণহত্যা এসব ঘটনার জন্য ব্যবহৃত অসহিঞ্চুতা শব্দটি যথেষ্ট নয়।

নকশাল ও মাওবাদী বিদ্রোহীদের উপর সরকারের সশস্ত্র আক্রমণেরও তিনি সমালোচনা করেন। তিনি একে ভারতের সবচেয়ে গরীব মানুষদের বিরুদ্ধে সরকারের যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন।

ফুলন দেবীর জীবনী নিয়ে ‘ব্যান্ডিট কুইন’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন শেখর কাপুর। ১৯৯৪ সালে ফুলন দেবীকে নিয়ে অরুন্ধতী The Great Indian Rae নামে একটি ধারাবাহিক প্রবন্ধ  লেখেন। তিনি লেখেন চলচ্চিত্রটিতে ফুলন দেবীকে কিভাবে Exploit করেছে । একজন বেঁচে থাকা ধর্ষিতা নারীর ধর্ষণ কাহিনি তাঁর বিনানুমতিতে চলচ্চিত্রায়ন  করা উচিত কিনা এটাই ছিল তাঁর লেখার বিষয়।

২০০১ সালে ব্রিটেনের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে অরুন্ধতী আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা এবং বুশ-ব্লেয়ার জোটের সুতীব্র নিন্দা করেছিলেন। তিনি বলেন,

তো এখন আমরা জানি, শুয়োর মানে ঘোড়া, নারী মানে পুরুষ আর যুদ্ধ মানে শান্তি!

‘বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার ও সংস্থাগুলো কর্তৃক সাধারণ নাগরিকগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব বিস্তার’- শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন তিনি। যেখানে তিনি ন্যায়বিচার ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য দূরীকরণের বিষয়াবলী তুলে ধরেছেন।

এছাড়া ভারতের পরমাণু অস্ত্র এবং ভারতে মার্কিন পাওয়ার জায়ান্ট ‘এনরন’-এর কার্যক্রমের সমালোচনা করে তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন।

বাংলাদেশি ফটোগ্রাফার শহিদুল আলম যখন কারাবন্দী ছিলেন তখনও তাকে মুক্ত করার কথা বলে অন্যান্য লেখকদের সঙ্গে বিবৃতি প্রকাশ করেন অরুন্ধতি রায়।

২০০৬ এর আগস্টে ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ নোয়াম চমস্কি, হাওয়ার্ড জিনসহ প্রায় ১০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে অরুন্ধতী রায়ও একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর প্রদান করেন। এই চিঠিতে ২০০৬-এর লেবানন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইজরায়েলকে যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করা হয়।

লিখনশৈলি ও সমাজসেবার জন্য অসংখ্য পুরস্কার  পেয়েছেন অরুন্ধতী। অহিংসার পক্ষে সামাজিক আন্দোলনকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৪ সালে ‘সিডনী পীস প্রাইজ’ লাভ করেন তিনি। ২০০৬ সালে তার প্রবন্ধসমগ্র ‘দি অ্যালজেবরা অব ইনফাইনাইট জাস্টিস’ এর জন্য ‘সাহিত্য একাডেমি’ পুরস্কার লাভ করেন, তিনি তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। ভিন্নধর্মী লেখার জন্য ২০১১ সালে ‘নরম্যান মেইলার প্রাইজ’ লাভ করেন । ২০১৪ সালে ‘টাইম’ ম্যাগাজিনে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকাতেও উঠে আসে তাঁর নাম।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় আন্তর্জাতিক বইমেলায় 

তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কোনো বিশেষ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নেই। আমি ক্যারিয়ারবাদী ব্যক্তি নই। আর আমি ক্যারিয়ার নামক কোনো জায়গায় যাওয়ার চেষ্টাও করছি না। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- সমাজের স্পর্শে থাকা, সমাজের মধ্যেই বেঁচে থাকা, ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করা’।

অন্য এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন: ‘একজন খ্যাতিমান ব্যক্তি হিসেবে আমি কিছু করি না, আমি যা করি তা একজন নাগরিক হিসেবেই করি।আমার লেখা আমার নির্ভরতা।আমি যা লিখি তা আমি বিশ্বাস করি।

জাতীয় হোক বা আন্তর্জাতিক, যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে সেখানেই সচকিত হয়েছেন অরুন্ধতী, হয়ে চলছেন অবিরত। হয়ত তাঁর একক প্রচেষ্টায় পৃথিবীজুড়ে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে না, কিন্তু তার মতো অনেকে এখনও আছেন। সেজন্যই মানুষ এখনও বাঁচার, সাম্যের, সৌহার্দ্যের স্বপ্ন দেখে। 

মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে  কলমকে অস্ত্র হিসেবে তুলে নিয়েছেন অরুন্ধতী। তাঁর কলমে ফুটে উঠেছে নির্যাতিত মানুষের ছবি।  লেখা চলচ্চিত্র ডকুমেন্টারি সবকিছুতেই  তিনি বলেছেন পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে । বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের অধিকারের জন্য নিরলস লড়ে যাচ্ছেন কলমযোদ্ধা অরুন্ধতী রায়। তাঁর সংগ্রাম সফল হোক এই কামনা। 

 

সূত্র:

১.লাল সংবাদ/  পোস্টেড জুলাই ৮,২০১৫

২. অরুন্ধতী একটা তারার নাম, তৌহিদা শিরোপা, দৈনিক প্রথম আলো, পোস্টেট ৬ মার্চ ২০১৯ 

আফরোজা পারভীন
আফরোজা পারভীন
%d bloggers like this: