প্রেসক্রিপশন / শাহনাজ পারভীন 

প্রেসক্রিপশন / শাহনাজ পারভীন 

প্রেসক্রিপশন / শাহনাজ পারভীন 

প্রেসক্রিপশন / শাহনাজ পারভীন 

বহুদিন পর বাড়িটা আজ ঈদের আনন্দে হেসে উঠেছে। দীর্ঘদিন পর ছোট দেবর রাশেদ আর সোহা তাদের মেয়েদের নিয়ে দেশের বাড়িতে  বেড়াতে আসবে। বাড়িটা হৈ হুল্লোড়ে ভরে যাবে আগের মতোই। ভাবতেই শায়লার মনটা আনন্দে ভরে গেলো!  এ এক অন্য রকম স্বর্গীয় আনন্দ। কারো জন্য নিঃস্বার্থ কিছু করতে পারার আনন্দ। এই আনন্দের স্বাদ পাওয়া অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার। সবার কপালে সব সময় এই আনন্দ জোটে না। উপভোগ করতে পারে না যখন তখন। ভোগের থেকে ত্যাগের আনন্দ যেমন মহীয়ান, তেমনি কারো জন্য কিছু করতে পারার আনন্দও বড় বেশি হৃদয়স্পর্শী, গভীর। 

অথচ কথা ছিল এই ঈদের আগেই সব কিছু চুকিয়ে ফেলা হবে। সেভাবেই মেয়েরা  কথা বলেছিল তাদের পারিবারিক চেনা উকিল আঙ্কেলের সাথে। সোহা-রাশেদ দম্পতির ত্রিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে ফাটল ধরেছে জীবনের প্রথম থেকেই। দিনকে দিন তার চিড়  বেড়েই চলেছে। প্রলেপের কোনো অয়েন্টমেন্ট খুঁজে পাচ্ছে না দুজনের একজনও। অতঃপর মেয়েরাই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলো-

— দরকার নেই, আমাদের কথা ভেবো না তোমরা। তোমরা নিজেরা সুস্থ থাকো। আমরা দু’বোন হোষ্টেলে উঠে যাবো। আমার তো আর মাত্র পাঁচটা সেমিস্টার বাকি। ছোটোর দায়িত্ব আমিই পালন করবো। দেখতে দেখতে তিনটে বছর কেটে যাবে ওর।

খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে সল্যুশন দিয়ে যুদ্ধাহত পরিবেশটাকে শান্ত করে দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকে যায় বড় মেয়ে রাইসা।

–এর কোনো মানে হয়? সেই জন্মাবধি একই ব্যাপার দেখছি। চলছে তো চলছেই। এটা আর বাড়তে দেওয়া যায় না। এখানেই থামা উচিত। ব্যস।

–তুই ঠিকই বলেছিস আপি। আমাদের জীবনকে আমরাই গড়ে নেবো। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদেরকেই ছাড় দিতে হবে। 

— নইলে কে কখন, যখন তখন মাডার   হয়ে যাবে, খেসারত দিতে হবে পুরো ফ্যামিলির। আজীবন আমাদের। তার চেয়ে বরং তারা একা থাকুক। যার যার সুখ খুঁজে নিক। ডিভোর্স নিয়ে নিক।

–তাই হোক, বিল ও মেলিনডা গেটসও তো তাদের বিয়ের সাতাশ বছর পর ডিভোর্সের ঘোষণা দিলো। তাদের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিটিজেন যদি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তো? হুমায়ুন আহমেদও কি কোনো লোক লজ্জা, পরিবার, সমাজ, কারো পরোয়া করেছিলো?

–তাই তো। আগামীকালই দুই বোন উকিল আঙ্কেলের কাছে যাবো। পরামর্শ নিয়ে যেটা তিনি সিদ্ধান্ত দেন, যেভাবে করতে বলেন, সেভাবেই হবে। সেভাবেই করবো।

–কাউকে এ ব্যাপারে কিছুই বলার দরকার নেই।

— শুধু বড় চাচাকে জানিয়ে রাখতে হবে। আফটার অল তিনি বংশের সিনিয়র সিটিজেন। তার জানার অধিকার এবং ন্যায্যতা রয়েছে। 

–বড় চাচীকেও বিষয়টি অবহিত করতে হবে। 

–হ্যাঁ।  ঠিক বলেছিস। তার সহযোগিতার কারণেই কিন্তু আব্বু আম্মুর সংসারটা এতদিন স্থায়ী হলো। প্রথম থেকেই কিন্তু বড় চাচী সব সময় মাকেই সাপোর্ট করে। 

–তা ঠিক। বিষয়টি চাচীকেও জানিয়ে রাখতে হবে। 

এভাবেই তারা সিদ্ধান্ত নিতে নিতে ডাইনিং টেবিল গোছায়। ডাইনিং টেবিল সাজাতে হয়, কিন্তু আজ আর তাদের কারোরই ডাইনিং টেবিল সাজানোর কথা মাথায় আসছে না, কোনমতে থালায় থালায় খাবার দিতে পারলেই হয়। জীবনটা বড় বেশি অতিষ্ঠ হয়ে গেছে তাদের। 

তাদের দু’বোনের বুদ্ধি হওয়া অবধি আরও একটু খোলাসা করে বললে বলতে হয়, তাদের জন্মের পর থেকেই এই একই বিষয় তারা দেখে আসছে। এদের কি এতটুকু লজ্জা শরম বলে কিছু নেই। তাদের তো বোঝা উচিত, দুই দুটো সন্তান তাদের ঘরে আছে, তাদেরও প্রাইভেসি আছে। তাদের ও মান, সম্মান, ইজ্জত, লজ্জা, শরম কিছুটা হলেও আছে! তোমাদের না হয় নাই থাকলো, কিন্তু তারা? তারা তোমাদের কি দেখে কি শিখবে? নিজেদের পার্সোনালিটি গড়ে তুলবে? তারা তোমাদের কি দেখে তাদের নিজেদের জীবন সাজাবে?  শুধুই কি সেক্সুয়্যাল ভল্যুমে জীবনটা পরিপূর্ণ। সেখানে কি আর কোন ফাইল নেই, আর কোন লাইফ নেই? নতুন করে আর কি কোন ফাইল আপলোড করা যায় না সেখানে? 

মানুষের এক জীবনে কত কিছু থাকে! জীবন, দর্শন, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, পরিবার, রাষ্ট্র! এক জীবনে কতকিছু থাকে! আহা পরকীয়া! অ্যাডালট্রিই কি মানুষকে এতটা নীচে নামায়? অন্ধ করে দেয়? হা! ঘরের মধ্যে ঘুরে ফিরে, চলে বেড়ানো, আস্ত, জ্যান্ত সন্তানদেরকেও দেখা যায় না? মানুষ এতটা অন্ধ হয়ে যায়? না হলে কি করে বিবেকবান সুস্থ মানুষের পক্ষে এইগুলো সম্ভব? 

এতদিন যাওবা একটা সহনীয় পর্যায়ে ছিলো, মুখে মুখেই একজন আর একজনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে, প্রতিবাদ করেছে। প্রতিহত করেছে। তারা নিজেরাও বুঝতে পারতো না, কি করে একটা সভ্য সমাজে দু’জন সর্বোচ্চ শিক্ষিত মানুষ এহেন কুকাজ- কি করে করতে পারে? 

সর্বোচ্চ পর্যায়ে চাকুরি থেকে অবসর নেবার পরও এতটুকু সংশোধিত হতে পারলো না? এতটুকু সংশোধন করলো না নিজেকে! এক পা কবরে, আর একপা ঠিকই ডাঙায়, কিন্তু সুস্থও তো নয়? তাহলে? এত বাড়াবাড়ি কোথা থেকে আসে? মায়েরও তো বয়স কম হলো না। পঞ্চাশের কোঠা ছাড়িয়েছে কবেই!

ভাগ্যিস, দুবোন আজ বাসায় ছিলো। দুজনই বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গেছিলো বাবা মায়ের মাঝখানে। না হলে তো আজই বটির এক কোপে দুজনের একজন শেষ হয়ে যেতো। তখন? ছোট অবশ্য ৯৯৯ এ ফোন দিয়েই ফেলেছিলো। ভাগ্যিস, রাইসা সময় মতো ফোনটা ওর হাত থেকে নিয়ে নিতে পেরেছে। নইলে? 

ক্রমাগত ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। কিন্তু রাইসা যেন জেগে জেগে ঘুমিয়ে আছে। অথবা স্বপ্নের ঘোরে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা চোখের সামনে আবারও বারবার রিলে হতে দেখে। ওর ডান হাতেও একটু আঁচড় লেগেছে। মায়ের হাতের নখ সব সময়ই একটু বেশিই বড় রাখে। এটা ঠিকই মায়ের নখের আঁচড় হতে পারে। না কি বাবার? নাকি মায়ের হাতের আংটি? রাইসা মেলাতে পারে না। এরই মধ্যে ঘোর থেকে জেগে উঠতে বাধ্য করে বার বার বেজে যাওয়া রিংটোন। 

–হ্যালো, চাচী।

–হ্যা মা, কেমন আছো?

–আমাদের আর থাকা। আজও একই অবস্থা। এভাবে সুস্থভাবে বাঁচা যায় না চাচী।

–মানে?

–এই আর কি, প্রতিনিয়ত যা হয়, তাই। মা বাবা দুজনই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। কে কখন মার্ডার  

হয়ে যাবে তা তো বুঝতে পারছি না চাচী।

–হুম, তোমার বড় চাচা বললো তাই। মা শোনো এক কাজ করো, তুমি তো এখন একটু বড় হইছো। তাদের গার্ডিয়ান এখন তোমাকেই হতে হবে। 

–হ্যা চাচী, আমরা উকিল আঙ্কেলের সাথে ফোনে কথা বলেছি, কাল দেখা করবো দু’বোন। আঙ্কেলের পরামর্শ মতো তাদের দুজনকে ডিভোর্স পেপারস রেডি করে দেবো। তারা পরস্পর পরস্পরের  কাছ থেকে সেপারেট থাকুক। আমরা দু’বোন ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারবো। আমরা আমাদের জীবনকে ঠিক ঠিক গুছিয়ে নিতে পারবো। পারতে আমাদেরকে হবেই। 

— শোন, মা একটু শান্ত হও। এক কাজ করো। তোমরা দু‘বোন মিলে ওদের দুজনকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও।

–ডাক্তার কেন? কোন ডাক্তার?

–মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সামসুদ্দিন আহমেদ। স্কয়ারের পাশের বিল্ডিংয়ে বসেন।  তোমার আম্মুর ফোন দেখছি সুইচড অফ। আম্মু কই? আম্মুকে দাও।

–দিচ্ছি। 

–বুবু। বলো।

–কি হলো আজ আবার? একটু শান্ত হও তোমরা। 

–আমি তো শান্তই আছি। আমাকে তো বাঁচতে দিচ্ছে না বুবু। এত সন্দেহ, এত গালাগালি এত নীচতা, এত হীনতা, এত অত্যাচারে মানুষ বাঁচে কি করে? আমারও তো জীবন, আমিও তো মানুষ, না কি? একটা কুকুর বিড়ালের যে অধিকার আছে, যে স্বাধীনতা আছে,  আমার তাও নাই? আমি একটু একা হাঁটতে যেতে পারবো না, বাসা থেকে বের হতে পারবো না, ছাদে যেতে পারবো না। এটা কেমন জীবন? ছোট মেয়েটাকে নিয়ে বের হলেও দোষ। ওকে নিয়ে একটু কেনাকাটা করতে বের হইছিলাম, আর সে কিনা মেয়েকেও সন্দেহ করে? মেয়ে নাকি আমাকে নিয়ে তার সাথে চেকিং করাতে গেছে! ও মেয়েও নাকি ওর না! তুমি চিন্তা করতে পারো?

–তুমি শান্ত হও। আসলে ওর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। নইলে এইসব কেউ মুখে বলে?

— মাথা নষ্ট না ছাই। একদম ভন্ডামি । নিজের স্বার্থ ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। সে আমাকে প্রস্টিটিউট বলতেও ছাড়ে না। আমি নাকি বেশ্যারও অধিক। কোনকিছু বলতে তার মুখে আটকায় না, বলতেও ছাড়ে না। এখন আমার দায়িত্ব শেষ, তাই না? যখন সে চাকরিতে ছিল, তখন তার চাকরি বাঁচাতে, প্রমোশন করাতে, ট্রান্সফার ঠেকাতে আমার প্রয়োজন ছিল, তার বসদের খুশি করাতে আমাকে নিজে থেকেই তো তাদের দিকে এগিয়ে দিয়েছে। একবার নয়, বার বার, বহুবার। এক জায়গায় নয়, বিভিন্ন জেলায়, বিভিন্ন অফিসে। আর এখন? আমার কাজ শেষ। এখন আমি বেশ্যা? আল্লাহও সহ্য করবে না।

— ধৈর্য ধরো। তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো?  

— না বুবু, আমার আর ধৈর্য নেই, ধৈর্য্য ধরারও ধৈর্য নেই। মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা আছে। আমি  আগেও তোমাকে বলেছি, এসব কথা। এখনও বলছি, তাকে সাবধান করো। নইলে কিন্তু খুনোখুনি হয়ে যাবে। 

–ঠিক আছে,  তারপরও ধৈর্য ধরতে হবে। রাশেদও তো তোমার ভাইকে অনেক কিছু বলেছে। সে তার উর্ধতন কর্মকর্তা বন্ধুর সহযোগিতার তোমার ফোনের কল লিষ্ট তুলেছে। সে তার একান্ত বন্ধু। তোমার একাউন্টের ব্যাংক এস্টেটমেন্ট নিয়েছে। ব্যাংক ম্যানেজার তার স্কুল ফ্রেন্ড  । সেখানে একই নম্বরেই ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেছো। তোমার একাউন্টে প্রায়ই একটি একাউন্ট থেকে টাকা রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে, হচ্ছে। সেই বিশেষ একাউন্টটি  কার, সেই বিশেষ ফোন নম্বরটি কার, সবই কিন্তু সে জেনেছে। অতএব তুমিও সাবধান হও।

— কি বললে, সে কি করে এত নীচে নামতে পারে?  কি করে আমার ব্যক্তিগত তথ্য সে হাতিয়ে নিতে পারে? আমি বিশ্বাস করি না। কোনক্রমেই এটা সম্ভব নয়। একজনের ব্যক্তিগত তথ্য সে কিভাবে পেতে পারে? কিভাবে আমার ব্যক্তিগত তথ্য সে জব্দ করবে? দেশে কি কোনো আইন, কানুন, নিরাপত্তা নেই, না কি?

— এ দেশে সবই সম্ভব। প্রয়োজনে সবই সম্ভব। রাশেদ তো সেই সব রেকর্ড পত্রের স্ক্রিনসট তোমার ভাইকে পাঠিয়েছে। আমি তো অবাক! কি আশ্চর্য। তুমি তো আর চাকরি করো না, তাহলে  তোমার এত টাকার উৎস কোথায়? কোথা থেকে আসে, কে দেয়, কেন দেয়?  অতএব, তুমিও শান্ত হও। চুপ থাকো। নিজেদের জীবন তো বলতে গেলে শেষ। এক জীবনে কতোই বা সময় আমাদের? এবার তোমার মেয়েদের কথা চিন্তা করো। সন্তানদের দিকে তাকিয়ে সাবধান হও। তাদের জীবনটা তোমাদেরকেই গড়ে দিতে হবে। না কি? এটা তোমাদের দায়িত্ব। 

 –কিন্তু ও তো আমাকে খুব আজে বাজে কথা বলে। সন্দেহ করে। 

— শোনো, বাদ দাও। পাস্ট ইজ পাস্ট। ডাক্তারের কাছে যাও। দুজনেই। এটা একটা অসুখ। সন্দেহ বাতিক অসুখ। আমি সব বুঝেছি, সব জেনেছি। ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। মেয়েকেও সব বলেছি। ডাক্তারের সিরিয়াল দাও। ভালো থাকো।

এরপরও অনেকবার আমার সোহার সাথে ফোনে কথা হয়েছে। নানাভাবে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি।

এক পর্যায়ে না পেরে সরাসরি তাকে বলেই ফেললাম– 

–তুমি কি তোমার সেই বিশেষ লোকটাকে বিয়ে করতে চাও, সে কি তোমাকে বিয়ে করবে?

–নাহ। তার সাথে এখন আর আমার কোনো যোগাযোগ নেই।

–তাহলে?

— আমি এটা করতে চাই না, সেও চায় না।

–গুড। তাহলে নিজেকে শুধরে ফেলো। ভুল হতেই পারে। তুমিও তো মানুষ। যা করেছো, একদম ভুলে যাও। ওদিকে আর পা বাড়িও না। শান্ত হও। সংসারের কাছে নত হও।

আরও কয়েকদিন পর কথা প্রসঙ্গে সোহা হঠাৎই আমাকে বললো,

–বুবু, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি আর কখনো রাশেদের গায়ে হাত তুলবো না। 

–এইটা কি বলছো তুমি? আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কি হলো? তুমি নিজে নিজের কাছে ক্ষমা চাও। মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিজেকে শুধরে নাও।

— সে আমি বলেছি। সে আমি নিজেও নিজের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।

–ঠিক আছে, সেটাই বড় চাওয়া। ভালো থাকো।

ঠিক এক সপ্তাহ পর সোহার ফোন। 

–বুবু। আমি ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হলাম। ডাক্তার সব শুনে বলেছে, এটা একটা কঠিন অসুখ। ঠিক মতো ওষুধ না খেলে যখন তখন একটা মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তুমি তোমার রাশেদ ভাইকে বোঝাও। বড় ভাইকে বলতে বলো।  তোমরা বললে, তুমি বললে সে ঠিক শুনবে। সে ডাক্তারের কাছে যাবে।

–ডাক্তার তোমাকে কি বলেছেন? 

–ঔষধ দিয়েছে। একটা  ঔষধ। রাতে খেতে হবে।

–ঠিক আছে, আমি ওকে বলবো। তোমার ভাইকেও বলতে বলবো। তুমি ভালো থেকো। তোমরা ভালো থেকো।

তারপর রাশেদকেও ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়েছে, দুজন একসাথে গেছে ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ খেয়ে, নিয়ম মেনে তারা এখন ভালো আছে। 

এটাই শায়লার একান্ত ভালোলাগা। সে একবার ভেবেছিলো, সোহাকে তার এই লজ্জাজনক অধ্যায়ের সব কথা বলবে না। কিন্তু নিরুপায় হয়ে তাকে বলতেই হলো। নইলে ওকে কিছুতেই কন্ট্রোল করা যাচ্ছিলো না, বাগে আনা যাচ্ছিলো না। তারপরও ডাক্তারের কথা বলে বিষয়টিকে হালকা করার চেষ্টা করেছে শায়লা। ওরা যেন তাদের কাছে পরবর্তী জীবনে সহজভাবে মিশতে পারে, কোনো রকম লজ্জায় যেন আচ্ছন্ন না থাকে, তারই একটি প্রচেষ্টা, একটা কৌশল।

 সেদিনের পর থেকে অবস্থা কিছুটা পাল্টেছে বলে মনে হয়। কিছুটা শুধরে নেবার চেষ্টা করছে। এইটা ভেবে শায়লার নিজের কাছে একটু ভালো লাগা কাজ করে। একটি ভাঙা সংসার তো জোড়া দিতে চেষ্টা করলাম, পারলাম। এই প্রেসক্রিপশনটাই বা কম কি!

ড. শাহনাজ পারভীন

%d bloggers like this: