সময়ের কাহন-১০/ অনুপা দেওয়ানজী

সময়ের কাহন 10

সময়ের কাহন

সময়ের কাহন-১০/ অনুপা দেওয়ানজী

 

তোফাজ্জল সাহেবকে নিয়ে  আমরা যে তিনটি  বাঙালি পরিবার  ছিলাম সবাই এক পরিবারের মতোই ছিলাম। 

সারাক্ষণ আমাদের নিজেদের মধ্যে গল্প, গুজব, আড্ডা, খাওয়া- দাওয়া,হৈ চৈ লেগেই থাকতো ।

মজুমদার সাহেবের বাংলো আমাদের বাংলোর কাছেই ছিলো।

ওদের ছেলে দুটি আমাদের বাসায় প্রায়ই অংক বা বাংলা পড়া দেখিয়ে নেবার জন্যে আসতো। একজনের ডাক নাম ফুনু আরেকজনের ঝুনু।লেখাপড়া শেষ হলে ফুনু ঝুনুর সাথে মাঝে মাঝে গল্প করতে বসে যাই।গল্প করতে করতে একদিন ফুনুর মুখে শুনি ডেরাবুকটির নেতার ছেলে মঞ্জুর খান নাকি তার সাথেই পড়তো।মঞ্জুরের আব্বা সবসময় ডেরাতে থাকতেন না।মাঝে মাঝে আসতেন। এক রাতে ডেরাতে এসেছেন। রাতে তিনি খেতে বসেছেন ঠিক সেই সময়ে পাকিস্তান সরকারের লোক তাঁকে বন্দুকের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়ে গেলো।

মঞ্জুর তার পর থেকে আর স্কুলে আসে নি।

ফুনু আর ঝুনুকে স্কুলে গেলে পাঞ্জাবি ছেলেরা নাক চেপে ধরে নাকি বলতো,  তোমাদের গা থেকে মাছের গন্ধ করে।একদিন একজন তো পরীক্ষার দিন ফুনুর প্যাণ্টে ডিম ঢুকিয়ে সেটা থাপ্পড় দিয়ে ভেঙে দিয়েছিলো।ফুনু বললো, চিন্তা করেন তো আন্টি পুরো দিন ওই ভেজা ডিমের লালা লাগানো প্যান্ট নিয়ে আমাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে!

তবে কিছুদিন পরে আমাদের আড্ডায়  অদ্ভুত মানসিকতার এক বাঙালি ভদ্রলোককে পেয়েছিলাম যিনি বাঙালি হয়েও কিছুতেই নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিতে চাইতেন না।মাছ দেখলে নাক সিঁটকাতেন। 

অনেকেই বলতেন ভদ্রলোক নাকি  একটি পাঞ্জাবি মেয়ের সাথে প্রেম করছেন।

 মেয়েটির পরিবার এটা জানতে পেরে  বলেছে বাঙালি কোন ছেলের সাথে  তারা মেয়ের বিয়ে দেবেন না।

এটা শুনে ভদ্রলোক  তাঁর বাঙালি পরিচয় মুছে ফেলার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

 ভুলেও তিনি কখনো আমাদের সাথে বাংলা তো বলতেনই না।এমন কি মাছ দেখলেও নাক সিঁটকাতেন।

বাঙালি পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন যিনি তিনি আমাদের আড্ডায় যোগ দেবার জন্যে কেন যে  চলে আসতেন বুঝতাম না।

তার এই মানসিকতা নিয়ে বাঙালিরা তো বটেই অবাঙালিরাও হাসাহাসি করতেন। 

ভদ্রলোককে দেখলে আমার কেমন যেন বিবমিষার উদ্রেক হত। 

 

স্যুইতে যাওয়ার পরে প্রথম প্রথম শুধু বাঙালিদের সাথে মিশলেও ধীরে ধীরে অন্যান্য অবাঙালি অফিসারের স্ত্রীদের  সাথেও আমার আলাপ শুরু হোলো ।

আমার মেয়েও  প্রতিবেশী বাচ্চাদের সাথে রোজ বিকেলে খেলতে যায়,তারাও আমাদের লনে খেলতে আসে।

এভাবে অল্প কিছুদিনের ভেতরে সে আমার আগে উর্দু তো বটেই এমন কি  পাঞ্জাবি ভাষাও  শিখে ফেললো।

 

বাঙালিদের মধ্যে আমরা ছাড়াও ক্ল্যারিকেল লাইনে চট্টগ্রামের কাসেম আর চৌধুরী সাহেবও ছিলেন।

বিশাল স্যুই ফিল্ডে তাদের কোয়ার্টারে যেতে হলে গাড়ি ছাড়া যাওয়ার উপায় ছিলো না।

তারা দুজনও মাঝে মাঝে বেড়াতেন।কাসেম সাহেব নিঃসন্তান ছিলেন। চৌধুরী সাহেবের ফুটফুটে দুটি  মেয়ে আর একটি ছেলে।মেজো মেয়ে মমতা ছিলো আমার মেয়ে বিপাশার বয়সী । 

 

স্যুই ফিল্ডে অফিসারদের স্ত্রীদের হাতে ছিলো অঢেল সময়।সকালে স্বামীদের অফিসে আর বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে তারা   এক একদিন এক একজন ভাবির বাসায় আড্ডা দিতে বসতেন।

 রিনা ভাবি আর সোফিয়া ভাবি (মজুমদার সাহেবের স্ত্রী) তেমনই এক আড্ডাতে একদিন আমাকে নিয়ে গেলেন।

  উর্দু ভাষায় তখনও আমি তেমন সড়গড় হইনি। আড্ডায় গিয়ে চুপচাপ সবার কথা শোনা ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিলো না।

মনে আছে প্রথমদিন গিয়েই পাঞ্জাবি ভাবিদের মুখে স্কুলকে স-কুল উচ্চারণ করতে শুনে খুব মজা পেয়েছিলাম।

পরে দেখেছি  পাঞ্জাবিরা আসলে স্কুল শব্দটাই উচ্চারণ করতে পারে না।

 প্রথম প্রথম সেসব আড্ডা আমাকে কেন জানি  আকর্ষণ করতো না।আড্ডার নামে সেখানে তারা অবলীলায়  যেসব আদিরসাত্ম কথার  ফুলঝুরি ছিটাতেন সেসব অশ্লীল  কথা পূর্ব পাকিস্তানের গৃহিনীদের আড্ডায় আমি  কখনো শুনিনি।

 আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে অনেক সময় ওরা হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করতেন,”আপ হামলোগোকো বহুত বেশরম সমঝ রাহি হ্যায় না?কখনও আবার বলতেন, আজ কেয়া খায়া? যদি বলি মাছ তখন বলতেন তব তো হাসব্যান্ড কা সাথ বহত ঝগড়া হুয়ি। প্রথম দিন একথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলে রিনা ভাবি বললেন, ওদের ধারণা মাছ খুব গরম জিনিস। আমি তো শুনে অবাক।গরম যদি হয়েও থাকে ঝগড়া করতে যাবো কেন? কি অদ্ভুত ধারণা। 

তবে যখন তারা   এসব কথার সাথে সাথে   রান্না,সেলাই,উলবোনা এসব নিয়েও চর্চা করতেন  তখন আমার আকর্ষণ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। 

কোন বাড়িতে হয়তো আড্ডা  দিতে বসেছি।তিনি  সেদিন আমাদের জন্যে মাংসের কলিজা ভুনা করছেন তাদের গ্রামে যেভাবে কলিজা ভূনা করা হয় ঠিক সেভাবে অথবা কোন গৃহিণী মাংস রাঁধছেন আস্ত মশলার সাথে ডালবাটা মেশানো বড়ি দিয়ে। অন্য ভাবিরা তা শিখে নিচ্ছেন।কেউ হয়তো পাকোড়ার সাথে তার শাশুড়ির কাছে শেখা আচার দিলেন অন্যরা তা খেতে খেতে শিখে নিচ্ছে।আড্ডা তখন আর শুধুমাত্র কথার ফুলঝুরি থাকে না তাতে শেখারও  অনেক কিছু থাকে।

 

বেলুচিস্তানের ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আমার গলার নিচের সরু সরু ভাঁজগুলি তখন কেটে গিয়েছে।ডেজার্ট কুলারে থেকেও গরম কাকে বলে ভালোই অনুভব করছিলাম।

তবে দিনে প্রচণ্ড গরম হলেও রাতের বেলায় আবার ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করে।

অনেকেই তখন প্রাকৃতিক শীতল বাতাসের জন্যে কোর্টইয়ার্ডে খাটিয়া বা চারপাই পেতে ঘুমাত।

 

আড্ডা ছাড়াও গরমের সময়ে অনেক অফিসারের স্ত্রী ক্লাবের স্যুইমিং পুলে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকতেন।অনেকে আবার ট্রেইনির কাছে সাঁতারও শিখতেন। 

 

জাঁকজমক আর স্ট্যাটাসের দিক থেকে স্যুই ক্লাব ছিলো সেই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের তিন নম্বর ক্লাব।

অপূর্ব সুন্দর সেই ক্লাবে  প্রায়ই পার্টি লেগে থাকতো।সেসব পার্টিতে আমাদের যেতেই হত।

প্রচণ্ড গরম যখন শুরু হল তখন মজুমদার ভাবি আর রিনা ভাবি একদিন আমার বাসায় এসে বললেন,”ভাবি চলুন  স্যুইমিং পুলে গিয়ে  সাঁতার কেটে আসি।

 

মেয়েকে  রিঙে আটকে  পুলের জলে ছেড়ে দিয়ে আমি নিজেও সাঁতার দিতে নেমে  পড়লাম।

রিনা ভাবি  জলে নেমে প্রথম ধাপেই শুধু হাত পা ছুঁড়ছিলেন মজুমদার ভাবিও সাঁতার  খুব একটা পারতেন না।

পশ্চিম  পাকিস্তানি অফিসারদের স্ত্রীরা তো সাঁতার কিভাবে দেয় তাই জানতেন না।

 

সমুদ্র পাড়ের মেয়ে আমি। 

 ছোট্ট বেলা থেকে কলেজ কোয়ার্টারের বিশাল পুকুরে এপার ওপার দাপিয়ে বড় হয়েছি। স্যুই ক্লাবের স্যুইমিং পুল আমার কাছে খেলনা পুকুর ছাড়া আর কিছুই নয়। 

সঠিক ডাইভ হয়তো দিতে জানি না,কিন্তু কোমরে আঁচল গুঁজে ডাইভিং প্লেস থেকে যখন লাফিয়ে স্যুইমিং পুলের জলে পড়ে সাঁতার দিতে শুরু করলাম তখন অবাঙালি ভাবিরা একে অপরকে বলতে শুরু করলো দেখা! মছলি কি তরা ক্যায়সে ত্যরতি হ্যায়? ওভি শাড়ি পেহ্ ন কে?

 

আড্ডা আর ক্লাব ছাড়াও সবার বাড়িতেও পার্টি লেগে থাকতো।অনেক অফিসারের স্ত্রীরা আবার তাদের দেয়া পার্টিতে কস্ট্যুম কালার মেনশান করে দিতেন সে ছিলো আরেক বিলাসিতা। 

 

সবার বাড়ির পার্টিতে যাই। এবার আমাকেও তো তাদের খাওয়াতে হয়।

অথচ  এক একটা পার্টি মানে প্রায় একশজনের মতো রান্না।এত জনের রান্না আমি কখনও রাঁধিনি। সবাই বললো বাঙালি ডিস খাবে। মাথায় আমার বাজ পড়লো।কিভাবে যে এত জনের রান্না রাঁধবো বুঝতে পারছিলাম না।

পার্টি হলে ক্লাবের বাবুর্চিকে দিয়েই সবাই  রান্না করিয়ে নেয়।আমি ক্লাবের বাবুর্চিকে দিয়ে  রান্না করালে সে বাঙালি রান্নার বারোটা বাজবে অথচ কর্তার বন্ধুরা খেতে চাইছে বাঙালি রান্না। 

মজুমদার  ভাবি আর রিনা ভাবি আমাকে সাহস দিয়ে বললেন, ভাবি ভয় পাবেন না।আমরা তো আছি।

 

তাদের বাড়িতে পার্টি হলে আমি যেমন তাদের সাহায্য করতাম তারাও আমার বাড়িতে পার্টির কাজে সাহায্য  করতে এগিয়ে এলেন।

এভাবে  রাঁধতে গিয়ে এক সময়ে আশি, একশ জনের জন্যে রান্না করা  আমার জন্যে একরকম ডালভাত হয়ে গেলো। 

মজুমদার সাহেবরা ছাড়াও  শরীফ সাহেব নামে একজন পাঞ্জাবি ভদ্রলোক আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন। তার বড় মেয়ে মেহমুদা ছিলো আমার চেয়ে বছর দুয়েকের ছোটো।

  মেহমুদার সাথে ধীরে ধীরে আমার খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। পরিবারটি খুব পর্দানশীন ছিলো বটে তবে আমি পার্টিতে গেলে  আমার মেয়েকে তারা খুব আদর করে রাখতেন।

মেহমুদার মা ভালো কিছু রান্না করলেই আমাদের জন্যেও পাঠিয়ে দিতেন। আবার আমাকে ডেকেও নিতেন।

ঘরে কীভাবে তন্দুরি রুটি বানাতে হয়,সর্ষেপালক কীভাবে রাঁধতে হয়,পায়া স্যুপ বা নেহারি কীভাবে করতে হয় আমি তার কাছ থেকেই শিখেছি।

মেহমুদা খুব ভালো সেলাই জানতো।

শপিং সেন্টার থেকে কাপড় কিনে সে নিজের হাতে আমাকে সালোয়ার, কামিজ  সেলাই করে দিয়েছে, জর্জেট কাপড়কে দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে গরম জলে সেদ্ধ করে দোপাট্টায় কীভাবে কুঁচি করতে হয় তা শিখিয়েছে। দোসুতি কাপড় কিনে এনে তাতে ডিজাইন তুলে দিয়েছে।

আমি তাকে নানা রকম পিঠে, ছানা,ক্ষীরের সন্দেশ বানানো শিখিয়েছি । 

 

মনে পড়ে এক সকালে আমি  চাল বাছছিলাম। এমন সময়  মেহমুদা এসে  গল্প করতে করতে হঠাৎ আমি  ধান চিনি কিনা  জিজ্ঞেস করলে আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

মনে মনে ভাবছিলাম  পাঞ্জাবি ভাষায় ধানের হয়তো  কোনও মানে থাকতে পারে।কারণ কাকা মানে আমরা বাবার ভাই জানলেও পাঞ্জাবিরা ছোট বাচ্চাদের আদর করে কাকা বলে ডাকে।

আমাকে চুপ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে যখন  খুব উৎসাহ নিয়ে বোঝাতে  শুরু করলো ধান হচ্ছে ছিলকাওয়ালা চাউল।যে  চাউল আমি বাছছি তা  আদতে এরকম হয় না। এই চালের ওপরেই সোনালী রঙের একটা ছিলকা থাকে।মেশিন ছাড়া সেই ছিলকাকে ছাড়ানো যায় না।

 মনে মনে বললাম, বোঝ ঠ্যালা।

 আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। 

বললাম,  তোমার ওই ছিলকাওয়ালা চালকে আমরাও ধানই বলি।আমি সেই ধানের দেশেরই মানুষ। তোমরা যেমন দু বেলা রুটি খাও আমরা খাই দু বেলা চাউল।

 

৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সেই তীব্র গরমের মধ্যেই এক বিকেলে  আকাশ , পাতাল কাঁপিয়ে হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নেমে আসলো।আল্লারাখা ছিলো বাইরে।আমি দৌড়ে কোর্টইয়ার্ডে ছুমরির শুকাতে   দেয়া কাপড়গুলি তার থেকে তুলে আনতে গেলাম।

ছোট কাপড়গুলি কোনরকমে ক্লিপ থেকে খুলেই   আমার শাড়িটার ক্লিপ সবে খুলেছি। সাথে সাথে সেই প্রচন্ড  বাতাস  দস্যুর মতো ঝাপটা দিয়ে শাড়িটাকে  আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়েই  ঝরা পাতার মতো তাড়িয়ে কোন ঠিকানায়  যে উড়িয়ে নিয়ে  গেলো কে জানে?

আমি সেদিকে তাকাবো কি?ধুলায় চারিদিক তখন ছেয়ে গেছে আর ঠিক তখন  দিকবিদিক কাঁপিয়ে নেমে এলো বৃষ্টি।

 বৃষ্টি আসার সাথে সাথে বাতাসের বেগ কমে আসলো।

এই প্রথম বেলুচিস্তানের বুকে আমি বৃষ্টি নামতে দেখলাম।

কাপড়গুলি রেখে জানালা দিয়ে তাকিয়ে ভাবছিলাম কোথায় আমার দেশের সবুজ গাছের পাতায় পাতায় টুপুর টাপুর মনমোহিনী কবিতার মতো বৃষ্টি, টিনের চালে নুপুরের মতো রুমঝুম পায়ের শব্দ তুলে  মনমাতানো  বৃষ্টি? আর কোথায় পত্রপুষ্পবিহীন মরুর বুকে এলোমেলো ছন্দবিহীন সৃষ্টিছাড়া এক ঝোড়ো বৃষ্টি ? 

কবি কী আর সাধে লিখেছেন

 

“এসেছে বরষা চিরযৌবনা বরষা

শ্যামগম্ভীর সরসা।”

 

না, যতই বীরত্বের সাথে আসুক ওই ছন্দবিহীন বৃষ্টি আমাকে একটুও আকর্ষণ করতে পারলো না। 

হঠাৎ  দেখি হুড়মুড়িয়ে   আবাল বৃদ্ধ বনিতা  সবাই হৈ হৈ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করেছে।

 বাচ্চারা আনন্দে এদিকে ওদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে  দৌড়াদৌড়ি করছে। মেয়েরা আনন্দে ভিজছে,বয়স্করা আকাশের দিকে দুহাত তুলে চুপ করে দাঁড়িয়ে ভিজছে।কিছুক্ষণ পরে দেখি মেহমুদা আমার জানালার কাছে ভিজতে ভিজতে  এসে বললো,আপ আভি তক উঁহা খাড়ি কিঁউ আন্টি? ইতনা আচ্ছা বারিষ আয়া। জলদি বাহার আ যাইয়ে।

আমার চোখে তখন শ্যামল বাংলার বৃষ্টির রূপ ভাসছে।এই বৃষ্টির সাধ্য কি আমাকে ভেজাবার বা আমার মন ভোলাবার? 

পরদিন  কর্তার মুখে শুনি তার সাথে   পাইপলাইনের কাজ দেখতে গিয়ে নালার মতো বাড়ির ভিতরে যেসব অসহায় ও হতদরিদ্র  বুগতিদের দেখেছিলাম  প্রবল বৃষ্টির স্রোত  সেখানে  ঢুকে পড়েছিলো  অনেকেই তাই  সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বলে নালার জলে ডুবে  মারা গিয়েছে।

মরুর দেশের মানুষ। তারা  সাঁতারও জানে না। 

ঘটনাটা আমার মনে খুব দাগ কেটেছিলো।

 

মনে মনে ভাবছিলাম, এ কোন গুহাযুগে বাস করছে ওরা? সামান্য বৃষ্টির হাত থেকেও নিজেদের রক্ষা করার কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না?

আমার কর্তা বললো,  কি করে পারবে? গাছপালা নেই,আমাদের মতো বাঁশবন নেই, কাদামাটি নেই,জল নেই,পাকসরকারের দৃষ্টি নেই।খাবার জলটুকু পর্যন্ত নেই।

 নিজেদের রক্ষার জন্যে বাসস্থান তৈরি করবার মতো  কোন উপকরণই তো তাদের নেই। নালাতে না থেকে ওদের  উপায়ই বা কি?

 বৃষ্টির দেখা পায় না বলে বৃষ্টির জন্যে যেমন তাদের আকুলতা তেমনি সহসা এমন ঝটিকাবিক্ষুব্ধ বৃষ্টি এসে পড়লে  নিজেদের রক্ষা করার জন্যে তাই তাদের আগাম কোন সতর্কতাও নেই।

 বৃষ্টি  নেই বলেই বেলুচিস্তানের মাটি প্রসবিনী নয়।

 অধিবাসীরা তাই এখানে পশুপালন করেই  জীবন ধারণ করে। 

 পশুদের মধ্যে  দুম্বা,ভেড়া,ছাগল,গাধা,উট আর ঘোড়াই দেখেছি।ঘাস জন্মায় না বলে হয়তো  গরু চরতে দেখিনি। অথবা আমি সংরক্ষিত জায়গার বাইরে যাইনি বলে গরু চরতে দেখিনি।

দরিদ্র বেলুচবাসীদের বাহন প্রধানত উট আর গাধা। আমাদের বালুচ মালিও তার নিজের উটে চড়েই বাগানের মালপত্র  আনা নেয়া করতো।

মাঝে মাঝে সে আদর করে আমার মেয়েকেও উটের পিঠে বসিয়ে বাংলোর চারিদিকে ঘুরিয়ে আনতো।

মালিকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম সে কোথায় থাকে? তার বাড়ি কোনখানে?

মালি বললো তার বাড়ি নাকি ডেরাবুকটিতে। ফিল্ড থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে।

 

এক সকালে দেখি সে উটের বদলে  বিরাট  এক ছাগলসহ হাজির।সেই ছাগল দেখে  আমার চোখ কপালে উঠে যাবার জোগাড়।  দেখতে ঠিক আমাদের দেশের হৃষ্টপুষ্ট একটা বাছুরের সমান।  ছাগলটা দেখে মনে মনে ভাবছিলাম পাঞ্জাবের বালকাসারের ছাগল শুনেছি বিখ্যাত।এটা কি তবে পাঞ্জাবের ছাগল?

কিন্তু মালি হঠাৎ  উটের বদলে  ছাগল নিয়ে এলো কি জন্যে ?

আমার মেয়েকে সে আদর করে উটের পিঠে চড়ায় তাই বলে  ছাগলের পিঠেও  চড়াবে নাকি?

 

উটকে ওরা বলে উঁট, ঘোড়াকে ঘোঁড়া।ছাগলকে বকরি

ছাগলটা দেখে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,” আজ উঁট কাঁহা হ্যায় তুমহারা? বকরি কিঁউ লে আয়া?

প্রৌঢ় মালি একগাল হেসে উত্তর দিলো,” মেমসাব ইয়ে বকরি ম্যায় নে খোঁকি কি লিয়ে হামারা গাঁও ডেরাবুকটি সে লে আয়া।”

 

মালির কথা শুনে আমার তো ভিরমি খাবার দশা।

এই বিশাল বপুর  ছাগলটা নিয়ে আমার মেয়ে করবে কী? ছাগলছানা হলে না হয় বুঝতাম। 

আমার অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে মালি উত্তর দিলো,কিঁউ মেমসাব দুধ পিয়েগি।

 

মালির কথা শুনে আমি মনে মনে বললাম মেয়ে আমার  দুধই মুখে তুলতে চায় না তাতে আবার সে কিনা ছাগলের দুধ খাবে।

তাছাড়া বাচ্চাটাচ্চা নেই  ছাগলটা দুধই বা দেবে কি?

 চরবেই বা কোথায়? উল্টো  বাগানের লনে যত্নে বেড়ে ওঠা ঘাসগুলি সব মুড়িয়ে খেয়ে শেষ করে দেবে।

 

মালি আমার কথা শুনে বললো  ডরো মৎ মেমসাব।ঘরে শুকনো চানা রাখলেই হবে। ছাগলটা রোজ একসেরের মতো দুধ দেয়।  চড়াবার জন্যেও ভাববেন না। কোন একটা রাখালবালকের কাছে দিয়ে দিলেই হবে।

সে রোজ সকালে সবার বাড়ি  থেকে ছাগল নিয়ে দূরে চড়াতে যায় আর ঠিক সন্ধ্যের আগে আগে সেই ছাগল ফিরিয়ে দিয়ে যায়।

শুধু তাই নয় আরও জানলাম  ছাগলটাকে চরাতে নিয়ে যাবার জন্যে সে সাউ নামে একজন রাখালবালককে বলেও ফেলেছে।

মাসে তাকে দুটাকা করে দিলেই হবে।

 

আমার কোন কথাই বুড়ো মালিটা শুনতে রাজি নয়।

মনে মনে ভাবলাম দরিদ্র মালিটা রোজ দুপুরে আমাদের  এখানে খায় বলেই কি সে তার প্রতিদান দিতে চাইছে?

অশিক্ষিত, সরল, প্রৌঢ় এই বেলুচ মালিকে ফেরাতে আমার মন চাইলো না। 

আল্লারাখা ছাগলটাকে নিয়ে বাংলোর পেছনে বেঁধে রাখলো।

 

আল্লারাখা দুধ দুইতে জানে।পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ছাগলটাকে দুয়ে সে প্রায় একসেরের মতোই দুধ পেয়েছে।দুধটা সে জ্বাল দিয়ে রেখেছে। 

 

কিছুক্ষণের  মধ্যেই বারো কি তেরো বছরের   সাউ নামের ছেলেটা  একপাল ছাগলসহ এসে হাজির।গায়ের রঙ রোদে পোড়া তামার মতো হলেও সে যে টুকটুকে ফর্সা রঙ নিয়ে জন্মেছিলো তা বোঝা যায়।মালির মতোই তার পরণেও ঢিলেঢালা জোব্বা,মাথায় পাগড়ি আর হাতে  লম্বা একটা পাচনবাড়ি । এছাড়া  কাঁধে একটা ছড়ির মাথায় বাঁধা রয়েছে কাপড়ের একটা ছোট্ট পুঁটলি। পুঁটলিতে রয়েছে আটা।

বহুদূরে কোনও পাথুরে পাহাড়ের ঢালে ছাগলগুলিকে  চরতে দিয়ে  সে তার পুঁটলিটা  খুলে সেই আটা কোন একটা ছাগলের দুধ দুয়ে নিয়ে  মাখবে তারপর হাতেই তা থাবড়ে থাবড়ে বড় করে নিয়ে সূর্যের তাপে তেতে ওঠা কোন  পাথরের ওপরে রেখে  দেবে।সূর্যের তাপ আর পাথরের তাপে সেই রুটি আস্তে আস্তে সেঁকা হয়ে গেলে  ছাগলের দুধ দুয়ে নিয়ে সেই  রুটি দিয়ে সে খেয়ে নেবে।

একথা শুনে আমি ভাবলাম আহা যে বেলুচিস্তানের গ্যাস দিয়ে  স্যুই গ্যাস ফিল্ডেই এত চুলা জ্বলছে। যে গ্যাস ফিল্ড থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে  বেশি আয় সেই বেলুচিস্তানেরই এক কিশোরকে   কিনা সূর্যের তাপে পাথরের ওপরে রুটি সেঁকে খেতে হয়।

কে তার জবাব দেবে? 

 

সাউ চলে যাওয়ার পরে আল্লারাখা যখন ছাগলের দুধটা  টেবিলে এনে দিলো সে দুধের গন্ধে আমার মেয়ে তো কোন ছার আমিই মুখে দিয়ে মুখ বিকৃত করে ফেললাম।

মনে মনে ভাবলাম মহাত্মা গান্ধীজির কি করে এই দুধ খেতে ভালো লাগতো কে জানে?

আল্লারাখা তো আমার মুখ বিকৃতি দেখে হেসেই খুন।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,ইয়ে দুধ তুমে আচ্ছা লাগতা?

সে দেখি দিব্যি মাথা নাড়লো। তারপর শুনি বেলুচবাসীরা নাকি এই দুধ জ্বাল দেয় না। কাঁচাই খেয়ে নেয়।এতে নাকি তাদের খুব তাগদ বা শক্তি হয়।

 

আল্লারাখার কথায় আমি  আশ্বস্ত হয়ে ভাবলাম যাক বাবা বাঁচা গেলো। দুধ খাবার একজন লোক তো পাওয়া গেলো।

 

পরে দেখেছি এখানকার অধিবাসীদের খুব প্রিয় ছাগলের দুধ।তারা চায়ের সাথেও এই দুধ যেমন খায় তেমনি আবার দই বা ঘিও বানায়।আমি সেই দুধ,দই বা ঘি কখনোই মুখে তুলতে পারিনি।

 

দেখতে দেখতে গরম শেষ হয়ে পায়ে পায়ে শীত এসে পড়লো। বাংলোর নাতিদীর্ঘ কুল গাছটাতে ঝাঁপিয়ে কুলের ফুল ফুটেছে। কিছু গাছের নিচে ঝরছে আর কিছু গুটি বাঁধছে।আমরা যেমন কুলকে বরই বলি ওরা বলে বের। 

বুগতিরা গরমের সময়ে ভেড়া বা দুম্বার শরীর থেকে পশম কেটে কেটে জমিয়ে রাখে আর শীত এলেই সেই পশমকে হাতেই পাক দিয়ে মোটা মোটা উল বানিয়ে নিজেদের পরার জন্যে গরম পোশাক বুনে নেয়।

সে পোশাক তাদের তীব্র ঠান্ডার কবল থেকে রক্ষা করে।

 

শীত এলেই স্যুই ক্লাবে নববর্ষের সময়ে খুব জাঁকজমক অনুষ্ঠান হত। তাতে অফিসারদের জন্যে নানা আনন্দ অনুষ্ঠান, বাচ্চাদের জন্যে বিভিন্ন প্রতিযোগীতার আয়োজনও করা হত।

বড়দের মধ্যেই কেউ সান্তাক্লজ সেজে ছোটদের নানারকম উপহার দিতো।

এ ছাড়াও ফিল্ডে চাকুরিরত সবার আনন্দের জন্যে বিশাল মেলার আয়োজনও করা হত। 

 

এই মেলা চলত সাত দিন।ফিল্ডের লোকজনের জন্যে হলেও মেলাটি বেলুচিস্তানের অধিবাসীদের জন্যেও উন্মুক্ত ছিলো।

মেলায় পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী সব শিল্পসামগ্রী নিয়ে ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটতো।এ ছাড়াও ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাতে বিভিন্ন প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী নাচ,গানের আয়োজন থাকতো। 

মেলায় আসতো নানা রকম আচার,কাবাব,ফল, কাঁচের চুড়ি,মাটির জিনিস।

বিশেষ করে হায়দ্রাবাদী আচার, চুড়ি আর মুলতানের মাটির জিনিসের খুব চাহিদা।

এই মেলা চলত সাত দিন। মেলায় বেলুচবাসীদের বানানো ঐতিহ্যবাহী সাজ্জি কাবাবের খুব চাহিদা ছিলো।সেই কাবাব কেনার জন্যে লম্বা লাইন লাগতো।

সাজ্জি ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরণের কাবাব তৈরি হত

সাজ্জির জন্যে মাটি খুঁড়ে প্রথমেই গনগনে কয়লার আঁচ তোলা হত।

এরপর  বিশেষ মশলা মাখানো একটা আস্ত ছাগলের চার পা বেঁধে সেই উনুনের দুপাশে গাছের খুঁটি পুঁতে দুই খুঁটির মাঝবরাবর একটা গাছের ডালে  ছাগলটাকে ঝুলিয়ে কয়লার গনগনে  আঁচে ঝলসানো হত।কোন কোন ছাগলের পেটের ভেতরে  মুরগী আর মুরগীর ডিমও থাকতো।

সেই কাবাব ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পাল্লায় ওজন করে বিক্রি করা হত।

এছাড়াও মাটিতে গর্ত করে আগুন জ্বালিয়ে  মশলা মাখা দুম্বার পেটে চাল আর কিশমিশ ভরে সেই দুম্বা শিকে গেঁথে সেই উনুনে রেখে ঢাকা দিয়ে   মাটির প্রলেপ দেয়া হত।বন্ধ সেই আগুনে মাংস আর পোলাও মিলেমিশে মোলায়েম আর অপূর্ব এক স্বাদের সৃষ্টি করতো।বেলুচদের হাতের এই ঐতিহ্যবাহী খাবার যে একবার খেয়েছে তার পক্ষে ভোলা সম্ভব নয়।

 

সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতো এই মেলার জন্যে।

আমি স্যুইতে যাওয়ার পরের  বছরেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে বদলী হয়ে বেলায়েত সাহেবও স্যুইতে আবার পোষ্টিং পেয়েছেন।তাঁর ছেলে এখন হিসু এলে বলতে শিখেছে। তাই প্যান্টের সেই গোলাকার ছিদ্রটা আর নেই।

মিসেস বেলায়েত হরিপুরে থাকাকালীন সময়ে মাঝে মাঝে আমার জায়ের বাসায় আমাকে গান গাইতে দেখেছেন।তিনি এসেই চাউর করে দিলেন যে আমি গান জানি।তখন সবাই আমার কর্তাকে ধরে বসলো নববর্ষের অনুষ্ঠানে স্যুই ক্লাবে আমাকেও গান গাইতে হবে।

 

মেয়েদের আড্ডায় বসে আমি পাকিস্তানি মহিলাদের ঢোল বাজিয়ে গান গাইতে শুনলেও  নিজে কখনোই তাদের বলিনি যে আমি গান জানি।মিসেস বেলায়েত একথা বলার পরে  আর তা গোপন রইলো না।

 

আমার কর্তা যখন আমাকে বললো নববর্ষের অনুষ্ঠানে আমাকে গান গাইতে হবে সবাই খুব অনুরোধ করেছে। আমি রেগে গিয়ে বললাম, আমি গাই রবীঠাকুর বা নজরুলের গান । ওঁদের দুজনের একজন তো পশ্চিম পাকিস্তানের  মহাশত্রু। তাঁর গান তো পূর্ব পাকিস্তানে গাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে আর আরেকজনের লেখার ওপরে নিজেরাই কলম চালিয়ে কবির লেখাকেই পালটে দিচ্ছে। 

ওরা এসব গানের বোঝেটা কি?

তাছাড়া বাংলা গানই বা ওরা কি বুঝবে?

আমার কর্তা বললো, বেশ বাংলা গান না গেয়ে অন্য গানই গাও।

 অনেক ভেবে দুটি মীরার ভজন গাইলাম।

মনে আছে তার একটা “দরশ বিনা তরা সে সখি নৈ না,” অন্যটা” পিয়া অব ঘর আ যা মেরে”।

 

সেই অনুষ্ঠানে অনেকেই উর্দু শায়ের বললো,গজল গাইলো,সিনেমার গান, কৌতুক করলো,ম্যাজিক দেখালো।

অনুষ্ঠান শেষ হবার পরেই মেলা শুরু হল।।

বিশাল সেই মেলায় আমি যখন ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তখন সেখানকার  বিশিষ্ট এক সিন্ধি পরিবার আমার সিঁথিতে সিঁদুর দেখে খুব উৎসাহী হয়ে উঠলেন আমি কে? কোন অফিসারের স্ত্রী?

 স্যুই ফিল্ডে  আমাদের আগে সনাতন ধর্মের কাউকে তারা  দেখেন নি বলেই তাদের এই আগ্রহ। 

শুধু তাই নয়, এক সন্ধ্যায় সেই সিন্ধি ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে নিয়ে আমাদের বাসায় এসে হাজির হলেন।

বেলুচিস্তানে সেই প্রথম সনাতন ধর্মের কেউ তার স্ত্রীকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।

 যাঁর সিঁথিতেও ছিলো সিঁদুর। 

————

চলবে।

অনুপা দেওয়ানজী 
অনুপা দেওয়ানজী