অবাক ঘটনা/ মিথুন খান
সময়টা ৮২ সালের দিকে। যাচ্ছিলাম সিলেটে। আমি তখন ক্লাস ফাইভেপড়ি। মাসহ চার ভাইবোন আর একজন খালাত ভাই ট্রেনে করে সিলেট যাব। আব্বা আর আমার মেঝ ভাই চিটাগাং যাবে। ঠিক মনে নাই কেন এমন বেড়ানো হয়েছিল।। যাই হোক ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামড়া ছিল। খুব মজা করে যাচ্ছি । রাত হয়ে গেছে । হঠাৎ ট্রেন থেমে গেল। চারিদিকে ঘন অন্ধকার, সময়টাও শীতকাল। আম্মা ভয়ে অস্থির। আমার বড়বোন তখন ইনটারমিডিয়েটে পড়ে, দেখতে সুন্দরী। এমন জায়গায় ডাকাতি হলে কি অবস্থা হবে। তখনো পর্যন্ত জানি না কি হচ্ছে, কেন থেমে ট্রেন। বাইরে ভিতরে অন্ধকার। আম্মা আমার বোনকে ওড়না পেঁচিয়ে সবার পিছনে বসিয়ে রেখেছে। আমিসহ আমার দুইভাই ছোট ছিলাম। খালাত ভাই বড় ছিলেন। দরজা লক করা ছিল।
হঠাৎ করে আমাদের দরজা ধাক্কা দিতে শুরু করলো কে জানি। আমার ভাই বলল,
:এটা ফার্স্ট ক্লাস। খোলা যাবে না।
কিন্তু বাইরে থেকে ধাক্কা দিচ্ছেই। আমরা তো তখন কনফার্ম যে ডাকাতই এসেছে। কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছি । তখন বাইরে থেকে একজন ভদ্রলোকের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। উনি বললেন,
: সামনের ট্রেনে ডাকাতি হয়েছে, খুনও হয়েছে। পুলিশের সাথে গোলাগুলির কারণে ট্রেন চলছে না। কখন চলবে তাও জানা নেই। আমি আপনাদের। সাহায্য করতে এসেছি কিছু খাবার আর মোমবাতি নিয়ে। এগুলো রেখে দেন। দরজা খুলতে হবেনা একটু ফাঁকা করে নেন।
আমার ভাই তখন দরজা ফাঁকঁ করে সেগুলো নিল। কিন্তু অবাক কান্ড লোকটা দিয়েই চলে গেল কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে!
ভোরে যখন আমার ভাই ট্রেনের লোকদের জিজ্ঞেস করল, রাতে উনারা আমাদের খাবার, মোমবাতি দিয়েছেন কিনা তারা মানা করলো । জানালো ভোরে খবর পেয়েছে অন্য একটি ট্রেনে খুন ও ডাকাতি হয়েছে।
আমি আজও জানি না ওই লোকটা কে ছিল আর আমাদের কেন জানালো ট্রেন কেন থেমে গেছে! খাবারই বা কেন দিল! এটা আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটা অবাক করা ঘটনা।
Facebook Comments Sync