ধোঁকা/ ওয়াহিদ মোস্তফা 

ধোঁকা/ ওয়াহিদ মোস্তফা 

রহিমা গর্ভবতী গাভীটির দিকে চেয়ে আছে।গাভীটির মুখ জুড়ে শুধু মায়া। মনে হয় যেন ঈশ্বর নিজ হাতে মায়া লেপে দিয়েছেন ওর মুখে।গাভীটির মুখের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে তার নিজের পেটের সন্তানটির কথা মনে হচ্ছে।”মানুষ হয়ে জন্মানোটা আসলেই সৌভাগ্যের।এত দৈন্য সত্ত্বেও গর্ভাবস্থার কথা বিবেচনা করে কেউ এতটুকু কাজ করতে দেয় না। অথচ এই অবলা প্রাণিটির কত কষ্ট। ঠিকমত খেতে পর্যন্ত পারে না,”বলে আক্ষেপ করতে লাগল সে।

 

রহিমার ছেলে সন্তান হয়েছে।গাভীটিও একটা এঁড়ে বাছুর জন্ম দিয়েছে।রহিমার স্বামী আলাল প্রচন্ড খুশি।অভাবের সংসারে এমন খুশির ঘটনা তেমন দেখা যায় না।আলাল মনে মনে ঠিক করে রেখেছে গাভীর দুধ থেকে যা আয় হবে সবটুকু তার ছেলেটির জন্য খরচ করবে।একটা টাকাও এদিক সেদিক করবে না।

 

বাছুরটি বাঁচল না। দুধের অভাবই মূলত তার মৃত্যুর কারণ। আলাল নিজের সন্তানের কথা ভেবে সব দুধ নিঙড়ে বের করেছে। বাছুরটির জন্য এতটুকুও রাখে নি।বাছুরটির ছটফটানি, ক্রমাগত ডাক তাকে  সামান্যতম টলাতে পারেনি। তার দুধ চাই, বালতি ভর্তি দুধ। ফলাফ লাল রঙের তুলতুলে বাছুরটির মৃত্যু।

 

গাভীটি কয়েকদিন ধরে মনমরা। চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ে। কেউ কাছে যেতে পারে না। গেলেই লাথি মারে।যাওবা সকাল সন্ধ্যায় পা বেঁধে দুলাল দুধ দোহাতে চায়, দুধ হয় না।দুলাল চিন্তায় পড়ে যায়। তার আর্থিক সামর্থ্য তেমন নেই।ৎদুধ না পেলে তার আদরের সন্তানটিকে বাঁচানো বেশ কষ্টকর হয়ে পড়বে।দুলাল ভাবে, রাতে তার ঘুম হয়না, সন্তানটির দিকে তাকিয়ে ছটফট করে সারা রাত।

 

বৃদ্ধ করিম মিয়া আশার আলো হয়ে আসেন।গাভীটির দিকে তাকিয়ে বলেন,”এক কাজ কর তুই। বাছুরটা যে গাইরা থুইছিস ওইটা তোল,তুইল্যা ওটার চামড়া ছাড়ায়া ল। তারপর চামড়ার ভেতরে খড় ভইরা বাছুরের মত আকৃতি দে।ওইটা ঘরে রাইখ্যা দিবি যহন দুধ দুহাবি তখন গাভীর সামনে হাজির করবি।কাজ অইব।” দুলাল কথামত কাজ করে।

 

গাভী মানুষের ধোঁকা বোঝে না।ৎসে ভাবে, তার সন্তান জীবিত।য়তাই মৃত চামড়া চাটতে চাটতে সে দুধ দেয়। দুধে বালতি ভরে। আলালের সন্তান বেঁচে থাকে সেই দুধ খেয়ে।

ওয়াহিদ মোস্তফা 
ওয়াহিদ মোস্তফা
%d bloggers like this: