জীবন নামের সময় / তাজনাহার মিলি

জীবন নামের সময়

জীবন নামের সময়

জীবন নামের সময় / তাজনাহার মিলি

 

সময়। যখন ছুটে যায়। ঘটনাগুলো পরপর মনের পর্দায় ফুটে উঠে, তখন মনে  হয় যেন সিনেমা। এক দৃশ্য নয় তারপরও অবিশ্বাস্য। ধরা যাক আমি চকচকে দামি শপিংমলে, পকেটে মাত্র ৮০ টাকা। যা দিয়ে একটা স্যান্ডেউইচ বা স্পাচু কফিও কিনতে পারবো না। বা মিউজিক্যাল চেয়ারে বসে সামনে পাহাড়চূড়া সমান অট্টালিকা, প্রতিবিম্ব দেখছি। আমার ভাবনার ছোট্ট পুকুরে আমি নিয়ত সাঁতার কাটি।

সেদিন এক দম্পতির পারস্পরিক অভিযোগ শুনছিলাম। বউ বলছিলো স্বামীর অক্ষমতার কাহিনী। স্বামী ভদ্রলোক চুপচাপ মাটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন। স্ত্রীর কাছে যাওয়ার মত আসক্তি একদম অনুভব করেন না। এ ছিল আর দশটা পরিবারের মতই স্বাভাবিক ঘটনা। এ যেন জীবনে সব প্রেম -ভালবাসা, রাগ অনুরাগ, স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ এবং মূল্যবোধের মিলনহীন নিয়তি। তখন সংস্কার ও নিঃশব্দে ত্যাগ করে ঘুরে ফিরে পরিবর্তিত পরিবেশের কাছে এগিয়ে যাওয়া। ফলত: স্বামী অন্য নারীর……………….।

সময় মানুষকে ভাঙ্গে গড়ে। সময়ের চাপে সম্পর্কের সূতোগুলো ধীরে ধীরে ঢিলে হয়। বেঁচে থাকার জন্যই মানুষের নতুন সম্পর্কের প্রয়োজন হয়। অমোঘ নিয়তির মতোই তৈরি নুতন সম্পর্ক। অন্যের স্বপ্নের মধ্যে জড়িয়ে নিজের স্বপ্নগুলো বাঁচানো খুব সন্তর্পনে পথ চলার মতো।

বিয়ের প্রথম প্রথম একজন নারী পুরুষ দুটো আলাদা মানুষ। দেহ গঠন, জৈব প্রক্রিয়া, অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সম্পূর্ণ দুটো মানুষ। প্রথম দিকে একটা মেয়ে অপার রহস্যে ঘেরা থাকে। শরীর ছুঁয়ে দেখার তীব্র ইচ্ছে থাকে। শরীর পার হয়ে একটি মানুষ। দেহের ভিতর অথচ দেহের অতীত। দেহের সে দেয়াল পার করে দেখা পাওয়া যায় মনের, সোনার কোটায় রাখা তুলার শয্যায় থাকা মহার্ঘ্য বস্তুকে কি সহজে ছুঁয়ে কেউ জয় করতে পারে।

প্রথম দিকে স্বাভাবিক আকর্ষণে মিলিত হয় দম্পতি। আকণ্ঠ উপভোগ করে একে অপরকে। নুতন অভিজ্ঞতার পুলকে সময়টা কোথা দিয়ে যায় কারও খেয়াল থাকে না। অথচ ৯০ ভাগ মেয়েরা সেই প্রথম পাওয়া সম্পর্কের কথা স্মরণ করে স্বামীর কাছে মনে মনে আজীবন সে সোহাগ চায়। অথচ সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার দায় যে, শুধু স্বামীর একার নয়, একথা বেশির ভাগ মেয়েই ভুলে যায়।

উদ্যাম আসক্তি একসময় কমতে থাকে। কারণ মেয়েরা তখন বধু থেকে গৃহিণ হতে হাতে নখ দাঁত বের করে আধিপত্য বিস্তার করতে যেয়ে ঝগড়া চেঁচামেচির বিনিময়ে নিশ্ছিদ্র নিরংকুশ ক্ষমতা অর্জন করে স্বামী উদাসীনতার জামা পরে। তখন স্বামী একসময় অনুভব করে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তার পরিবার শুধু সন্তান /স্ত্রী এবং তার পরিবার। নিজ পরিবার এর জায়গা !!! পেছনে হাঁটার জায়গায় মিলাতে হয়। তখন থেকে মানসিক দুর্বলতা শুরু করে শারীরিক উপগমন ক্ষমতা দুর্বলতর হয়ে পড়তে থাকে। কিছু স্ত্রীর ভয়াল ব্যক্তিত্ব স্বামীকে সংকুচিত করার পথে এগিয়ে দেয়।

তার উপর স্ত্রী যদি শারীরিক তাড়না দেন, তখন  স্বামী একবার নিজের কাছে অক্ষম হলে ক্রমশ: দিন দিন লজ্জা ও ব্যর্থতার গ্লানিতে আরো দুর্বল হন। বির্পযস্ত করে দিতে থাকে। যৌনতা যতটা শারীরিক ততটাই মানসিক। বৈদ্যুতিক শর্ট খেয়ে যন্ত্রণায় ভোঁতা হওয়ার মতন।

কাউকে ভয় পেয়ে একটা অবশেসন বা অনুভুতির সৃষ্টি করে ক্রমে ক্রমে স্বামী আর স্ত্রীর প্রতি কামাসক্ত হতে পারে না। এটা শারীরিক অক্ষমতা নয়, পুরোপুরি মানসিক অক্ষমতা। বউকে তাই খেয়াল রাখতে হবে। স্বামী যেন তার ভয়ে  স্ত্রৈণ হয়ে নিজের বিচার বুদ্ধি না হারায়। আসলে ভালবাসায় পানি, বাতাস দিতে হয়।

আত্মবিশ্বাস দিতে হয়। সাহস দিতে হয়, সত্তাকে ভেঙ্গে দিলে অ্যাগ্রসিভনেসে বুদ্ধি গুলিয়ে যাওয়াতে ভেতরের রসকষ স্বপ্ন মরে যায়। বউ তখন ভীতিকর, পাশে বা কাছে থাকলে বুক ধড়ফড় করে। পালাতে ইচ্ছে করে দূরে দূরান্তে।

জীবনটা এগোয় সামনে, কিন্তু বুঝতে হয় পিছন ফিরে। বিষয় বৈচিত্র্য মানুষের মন তার জটিলতার কানাগলি। আবার সে মায়াময় বন্ধনের মনিময় রূপ টানে, মুগ্ধ করে।

ভালবাসার রঙে জীবনের জলছবি আকা খুউব ই কঠিন। ভালবাসার স্রোতস্বিনীর তীর ছুয়ে বসে থাকা কখনও ঢেউয়ের জোরালো দমকা ধাক্কায় বা মৃদু স্রোতের আশ্লেষে ছুয়ে যাওয়া তিরতির কেঁপে উঠার অনুভব। সে সময় বিনিসূতোর মালা ছিড়ে, অনাহুত কেউ ঢুকে যায় অনায়াসে। জীবনের গভীর সমবেদনার দরজা হৃদয়ের জটিলতা দূরত্ব দূর করে মায়াময় অনুভবে পৌঁছাতে ধৈর্য্য, সামর্থ্যহীন ভালবাসার নিবীড় নিবেদন একটা তরী বটে, পৌছে দেয় নিরাপদ অনুভবে।

দুই :  আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক দীর্ঘ বছর আগে ডির্ভোসী। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তীব্র বেদনা ও যন্ত্রণা দেখেছি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। দ্বগ্ধানো নেভানোর, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তীব্র যন্ত্রণা মানসিক কষ্টের কারণ তাদের মেয়েটি। সমাজ জানে দুজনের অথচ ভদ্রলোক মনে প্রাণে জানেন মেয়েটি তার নয়। এটি তার জন্য জীবন, মৃত বেঁচে থেকে মৃত্যুদন্ডের মতই। 

এক জোড়া দম্পতি আলাদা আলাদা দুখানা স্বতন্ত্র অস্তিত্বে মানুষ তারা কিসে চূড়ান্ত তৃপ্তি বা সুখী। পাহাড় সমান সন্তুষ্টি পাবে তা বলা অত্যন্ত কঠিন। প্রত্যেক মানুষের সমস্যা তার নিজস্ব, সমাধানের পথও নিজেকে খুঁজে নিতে হয়। বাইরে থেকে কেউ অবজেকটিভলি প্রবলেমটা অ্যানালাইসিস করতে পারে, প্রোব্যাবল সলিউশন সাজেক্ট করতে পারে। কিন্তু কোনটা সে মানুষের কাছে সব চেয়ে গ্রহণযোগ্য  অন্য কারো পক্ষেই তা  বোঝা সম্ভব নয়।

ভদ্রলোকের বাইরের আর ভেতরের ২২ বছরে টানাপোড়েন দেখে আমার বলতে ইচ্ছে করে, বর্তমানের সফল দম্পতিদের নিজেকে অন্য দশজনের সাথে মিলিয়ে দেখুন। ভিতরের চোখ দিয়ে নিরন্তর টিভির ছবির মত ঘটে যাওয়া দৃশ্যগুলো দেখছেন। পিছন ফিরে তাতে তো তীব্র যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত  হওয়া। তার চেয়ে অন্য ১০ জন নুতন মানুষের সাহচর্যে ভুলুন। সাহচর্য, ভিড় তাদের দু:খ গুলো দেখুন, মানুষ মানেই নির্ভরতা, কাধে কাঁধ নুতন চেতনা ভালবাসা।

ভাসমান মেঘের নক্শি একটা মেলে না অন্যের সাথে। আমার চেতনার সে গোটা নক্শা। প্রকৃতপক্ষে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক গড়ে উঠে আত্মার মাধ্যমে। সার্থকতা / ব্যর্থতা দুইবোন এক অসীম মহাশূন্যের ঠিকানায় চলে। তাই মানসিক ডাক্তারের সংস্পর্শ-সাহায্য ও এসময় একাকী যন্ত্রণার খাঁদের পারে উপত্যাকার সন্ধান দেবে।

%d bloggers like this: