লালমাথা কুচকুচি/ রক্তবীজ ডেস্ক

লালমাথা কুচকুচি/ রক্তবীজ ডেস্ক

লালমাথা কুচকুচি বা কুচকুচিয়া বা লাল ট্রোগন বা বাংলাদেশী ট্রোগন (Harpactes erythrocephalus) (ইংরেজি: Red-headed Trogon),  Trogonidae (ট্রোগনিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Harpactes (হার্পাক্টিস) গণের সুন্দর, আগুনরঙা এক পাখি  লালমাথা কুচকুচির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ রাঙামাথার ফলচোর (গ্রিক:harpactes = ফলচোরeruthro = লালkephalos = মাথা)  লালমাথা কুচকুচি বাংলাদেশের দুর্লভ স্থানীয় পাখি এদের দেশের সিলেট চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়   আই. ইউ. সি. এনএই প্রজাতিটিকে Least concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্তবলে ঘোষণা করেছে  বাংলাদেশে এই প্রজাতিটি Endangered বা বিপন্ন বলে বিবেচিত হয়েছে  বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে  প্রজাতিটি সংরক্ষিত

পাখিদের জগতে কেবল ছোট ছোট পাখিরাই রঙচঙে উজ্জ্বলতার দিক থেকে প্রথম তবে সেদিক থেকে লালমাথা কুচকুচি  ব্যতিক্রম এর আকার প্রায় পাতিকাকের সমান হলেও উজ্জ্বলতার দিক থেকে এটি অন্যসব রঙিন ছোট পাখিদেরও হার মানায় এদের দৈর্ঘ্য ৩৫ সেন্টিমিটার, ডানা ১৪. সেন্টিমিটার, ঠোঁট . সেন্টিমিটার, পা . সেন্টিমিটার, লেজ ১৯. সেন্টিমিটার এবং ওজন ৭৫ গ্রাম  পুরুষ কুচকুচির চেহারা স্ত্রী কুচকুচির থেকে কিছুটা আলাদা পুরুষ কুচকুচির মাথা, ঘাড়, গলা বুক সিঁদুরে লাল পেটের দিকের বাকি অংশ উজ্জ্বল গোলাপি বুকের লাল গোলাপির মাঝখানে একটি সাদা অর্ধবলয় থাকে লেজ ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া, অর্থাৎ থরে থরে সাজানো পিঠ থেকে লেজ হালকা দারুচিনি বা মরচেবাদামি রঙের ডানার ঢাকনিপালক খুবই মিহি সাদা ধূসর রেখা খচিত ডানা মূলত কালো এবং পালকের মাঝবরাবর কিছুটা অংশ সাদাটে লম্বা লেজের কিনারা কালো ডগা কালো বলয়যুক্ত কিন্তু বাইরের দিকের প্রতিটি পালকের ডগা সাদা যার ফলে লেজের কিনারা ঢেউখেলানো মনে হয় চোখের তারা সিঁদুরেলাল, এর চারপাশের চামড়া নীলাভবেগুনি চোখের গোলকের ত্বক বেগুনিনীল ঠোঁটের কোণা, পা পায়ের পাতা বেগুনি ঠোঁটের উপরের পাটি বেগুনিনীল নিচের পাটি কালো বর্ণের স্ত্রী কুচকুচির সারা শরীর দারুচিনি রঙের আর এমনিতে শরীরের অন্যান্য অংশের গঠন রঙ একরকম অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির বুক, বগল তলপেট পীতাভসাদা

লালমাথা কুচকুচি শান্ত লাজুক পাখি ঘন প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন মিশ্র বাঁশবনে বিচরণ করে মানুষের হাতে পরিবর্তিত হয়নি এমন পাহাড়ি বনভূমিতেই এরা বাস করে; তবে দুই হাজার মিটারের বেশি উঁচু পর্বতে থাকে না এরা খুব বেশি স্থানিক এবং একই এলাকায় বছরের পর বছর কাটিয়ে দেয় সাধারণত একা বা জোড়ায় থাকতে দেখা যায় বনের মিটার উঁচু আলোআঁধারি ভরা ডালে নীরবে অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকে বনের ঘন ছাউনির নিচে উড়ে উড়ে এরা উড়ন্ত প্রজাপতি মথ শিকার করে এবং শুঁয়োপোকা ধরার জন্য পাতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পোকামাকড়ের অভাব হলে মাটিতে নেমে বুনো রসালো ফল বাঁশের কচি পাতা খায় কারণেই এর দ্বিপদ নামফলচোর

এপ্রিল থেকে জুলাই এদের প্রজননকাল সময় ঘন বনে বৃক্ষের প্রাকৃতিক কোটরে কিংবা কাঠঠোকরার শূণ্য গর্তে বাসা করে বাসায় ৪টি ডিম পাড়ে ডিমগুলো পীতাভ এবং ডিমের মাপ . × . সেন্টিমিটার  কত দিনে ডিম ফোটে, কত দিনে ছানারা বাসা ছাড়ে, কী হারে ছানা মারা যায় ইত্যাদি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি উন্নয়নশীল ১০১২টি দেশের মধ্যেই পাখিটির বিস্তৃতি সীমিত বলে বিষয়ে গবেষণার কাজ এখনো পর্যাপ্ত নয়

( সংগৃহীত)

 

%d bloggers like this: