ব্যাংক লোন নিয়ে ভালবাসা দিবসের গান গাইলো মাখন​

ব্যাংক লোন নিয়ে ভালবাসা দিবসের গান গাইলো মাখন​পান্থ রহমান

ছেলেটাকে চিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল​য়ের ইন্টারভিউ থেকে। দুজনেই সাইন্সে প​ড়েছি, গুটিবাজি করে ঢাবি`র ঘ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে মার্কেটিং না পেয়ে একাউন্টিং নিয়ে মেজাজ খারাপ করে বসে আছি। তখনও বুঝিনি এই বোকাটাইপ ছেলেটা আমার এত ভাল বন্ধু হয়ে যাবে! 

 

পরিচ​য় বাড়তে বাড়তে জানতে পারলাম অনিত (তখনো মাখন নামকরণ হ​য়নি) ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে স্কলারশিপ পাওয়া, রাজশাহী বোর্ড থেকে এস​এসসি তে গোল্ডেন এ প্লাস (২০০৩ সালে এটা বিশাল ব্যপার​)। তারপর তার ঢাকায় অগমন ও নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়া। এসএসসি তে বেচারা কোনমতে ৪ বা ৪.২ এর মত পেয়েছে। ব্যাস… এ ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্ব হবে না তো কার সাথে হবে। 

 

এরপর অনিত ধীরে ধীরে হ​য়ে গেলো মাখন​, যদিও ওর আসল নাম শরিফুল (অনেক পরে জেনেছিলাম)। ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ার থেকেই মাখনের গান শুনতাম​। মাঝে মাঝে লেখাপড়ার মাঝেই গান শুরু করতো। বিবিএ এর শেষ দিকে কিনে ফেল্লো কিবোর্ড​, অনেক সফ্টওয়্যারের কাজ শিখলো। এগুলো অর্ধেক শিখেই শুরু হল গিটার​। বেশ কয়েকটা গান লিখলো, নিজে নিজে রেকর্ডও করলো। তারপর নিজের গলা শুনে হতাশ হযে গেলো।

 

ওর লিরিক যতটা ভালো ছিল ঠিক ততটাই খারাপ ছিল ওর গানের গলা। বিশ্বসেরা অলস আর মাত্রাতিরিক্ত পোংটামি, আর সবচেয়ে উল্লেখ্য হল কোন কাজ শেষ না করা। খেয়ে না খেয়ে ৪\৫ বার স্টুডিও ভাড়া করে গান রেকর্ড করলো, এবং হতাশায় ভুগতে থাকলো।

 

এভাবেই বেশ ক​য়েকটি বছর পার হয়ে গেলো। মাখন সিএ প​ড়তে শুরু করলো আর আমি চলে গেলাম হলিউডে। একদিন আমাদের কবি বন্ধু মুরাদ ফেসবুকে জানালো, `দোস্ত​, মাখনতো এবার গান বের করেই ফেলবে। আমাকে বলছিল একটা গান লিখে দিতে, আমি লিখে দিছি। ও দিনরাত প্রাকটিস করতেছে। আর মামা এবার তো গান বের করবে বলে ব্যাংক লোন নিয়ে ফেলছে।`

 

জানতে চাইলাম না গানের এলবামের জন্য লোন কিভাবে পেলো? আমাদের অনেক সহপাঠী ব্যাংকে আছে, নিশ্চয়ই ওদেরই কেউ ব্যবস্থা করেছে। 

 

যাইহোক আমার অদ্ভূত বন্ধু মাখন, আমি বললাম​, `লোন নিয়েছে ভাল কথা, টাকা কি কিছু অবশিষ্ট আছে অন্তত একটা গান বের করার জন্য​।`

মুরাদ​, `টাকা কি আর থাকে? তবে আশা করি একটা হলেও গান এবার বের হবে। মামা কিসু করো।`

 

আমি দেশে ফিরে আসতে আসতে অল্প কিছু টাকা র​য়ে গেছিলো। আর ছিল অনেক বছরের স্বপ্ন ও শ্রমের মিশ্রণ​। সেই সবকিছু মিলে মাখনের প্রথম গান  `মাতাল অনুভবে।`

 

নিশ্চয়ই এই গানের মাধ্যমে মাখন গ্রামি পুরস্কার পাবে না, তবে এটা ওকে আত্মবিশ্বাস দেবে কোনদিন আরো ব​ড় ব্যাংক লোন নিয়ে সম্পূর্ণ এলব্যাম বের করে ফেলার​। আমার বিশ্বাস মাখন যে লেভেলের ঘাড়ত্যাড়া ও এটা করেই ফেলবে।

পান্থ রহমান

%d bloggers like this: